শর্মিষ্ঠায় অস্বস্তি কংগ্রেসে!!

 শর্মিষ্ঠায় অস্বস্তি কংগ্রেসে!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-এবার প্রণবকন্যার বই নিয়ে রাজনীতি বেশ সরগরম।প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।এর আগে তিনি দীর্ঘদিন কংগ্রেস রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষনেতা ইন্দিরা, রাজীব গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, পিভি নরসিমা রাও, মনমোহন সিং প্রত্যেকের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। কংগ্রেস রাজনীতির তাকে চাণক্য বলা হতো।ছিলেন ক্রাইসিস ম্যানেজার, অর্থাৎ দিল্লীতে কংগ্রেস নেতৃত্ব কোনও রকম বিপদে পড়লে পরিত্রাতা ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।২০০৪ সালে যখন কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে হারিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় এসেছিলো সেসময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সামনে প্রধানমন্ত্রী হবার বড় সুযোগ এসেছিল। কংগ্রেস সহ ইউপিএ শরিক দলের নেতৃত্ব চেয়েছিলো সেই সময়কার ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হোন। কিন্তু সোনিয়া গান্ধী সেসময় অন্তরাত্মার আওয়াজ শুনেছিলেন।এবং আগ বাড়িয়ে দেন ৯১ সালে নরসিমা রাও সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বিশ্বব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা ড. মনমোহন সিংকে।ড.মনমোহন সিং হন দেশের প্রধানমন্ত্রী।প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সামনে সুযোগ আসা সত্ত্বেও সোনিয়া গান্ধী তাকে মনোনীত করেননি ওই পদের জন্য।কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায় তার পছন্দ অপছন্দের কথা অদ্যাবধি বলেননি কাউকে।সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জীবনের নানা – অজানা,জানা অধ্যায় নিয়ে বই লিখেছেন তার কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়।প্রণব মুখোপাধ্যায় ইউপিএ জমানায়ই রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।প্রধানমন্ত্রী না হলেও দেশের সাংবিধানিক প্রধান তথা রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বলা হতো লিভিং এনসাইক্লোপিডিয়া।তিনি নিজেই ছিলেন একটা বইয়ের ভাণ্ডার। বই পড়তে ভালোবাসতেন। ভারতের রাজনীতিকে প্রায় গিলে ফেলেছিলেন।যদিও গোটা জীবনই রাজ্যসভা থেকে জয়ী হতেন।সেরকম জননেতা বলে যাদের বলা হতো সেরকম তিনি ছিলেন না।পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভা প্রতিনিধি হিসাবে তিনি জয়ী হতেন এবং তাও বামফ্রন্টের ভোটে।ফলে তাকে বামঘনিষ্ঠ বলা হতো। কিন্তু দিল্লীর রাজনীতিতে তার কদর ছিল বলে কংগ্রেসের সে সময় বামফ্রন্টের দরকার পড়ত,এমনকী বামফ্রন্টেরও কংগ্রেসের দরকার হতো।ফলে প্রণব মুখার্জিকে সবারই প্রয়োজন পড়ত দিল্লীর দরবারে। এ হেন প্রণব মুখার্জি নিজের জীবদ্দশাতেই তার আত্মজীবনী লিখে গেছেন।তার জীবনের উত্থান,পতন নানা ঘাত-প্রতিঘাত, ক্ষমতা এমনকী তার রাষ্ট্রপতি হবার স্বর্ণালী সময়ের কথাও তিনি তার বইতে উল্লেখ করেছেন।এবার তার কন্যা শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় তার প্রয়াত পিতাকে নিয়ে বই লিখেছেন। বইটি এখনও প্রকাশ হয়নি।তবে বইটি প্রকাশ না হলেও বইটির টুকরো টুকরো অংশ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের বিভিন্ন বয়ান প্রকাশিত হয়েছে।তাতে কংগ্রেস সোনিয়া গান্ধী,রাহুল গান্ধীকে নিয়ে বিরূপ কিছু মন্তব্য রয়েছে যা রীতিমতো অস্বস্তির কারণ হতে পারে কংগ্রেসের পক্ষে। ইতোমধ্যেই কংগ্রেসের তরফে অধীর চৌধুরী এ নিয়ে তার প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছেন।শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ও কংগ্রেসের বিভিন্ন পদে ছিলেন।তার প্রণব
মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা বিজেপি শিবিরকে উৎসাহিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের একাংশ মনে করছেন, যে সময়টা তিনি বই প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছেন তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বেশ ব্যাকফুটে।এর উপর আগামী বছরের গোড়াতেই লোকসভা নির্বাচন।তাহলে কি শর্মিষ্ঠা বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন!কংগ্রেসের একাংশ তাই মনে করছেন।প্রণব মুখোপাধ্যায় জীবিত থাকতেই নিজের আত্মজীবনী লিখে গেছেন।কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন,রাহুল গান্ধী সম্পর্কে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন তাও প্রণব
মুখোপাধ্যায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে- তা এখন কেন করছেন।প্রণব মুখোপাধ্যায় জীবিত থাকতে তো কোনওদিন একথা বলেননি। এমনকী সোনিয়া সম্পর্কেও প্রণব মুখোপাধ্যায় যে উদ্ধৃতি দিয়েছেন- শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় তার বইতে এমনটাই লিখেছেন তা প্রণব মুখোপাধ্যায় জীবদ্দশায় এমনটা কোনওদিন জানাননি- এমন বক্তব্য অধীর চৌধুরীর। আর শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের এই বই নিয়ে এখন রাজনীতি সরগরম।কংগ্রেস মনে করছে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় এখন কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত নন।তিনি কি তাহলে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছেন!কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে যে সময়টায় শর্মিষ্ঠা তার বই প্রকাশিত করতে যাচ্ছেন তা বিজেপিকে উৎসাহিত করবে।সে কারণেই শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে কংগ্রেস শিবির।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.