শান্তিচুক্তি করে মূল স্রোতে এনএলএফটি, এটিটিএফ!!

 শান্তিচুক্তি করে মূল স্রোতে এনএলএফটি, এটিটিএফ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মূল স্রোতে ফিরে এলে এনএলএফটি এবং এটিটিএফ।নয়াদিল্লীর নর্থ ব্লকে বুধবার ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার এবং ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা ও অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স-এর মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।এ দিন এনএলএফটি এবং এটিটিএফ-এর ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এনএলএফটি (বিএম) গ্রুপের প্রধান বিশ্বমোহন দেববর্মা এবং সংস্থার সহসভাপতি উপেন্দ্র রিয়াং চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন এবং এটিটিএফের থেকে আলিন্দ্র রিয়াং মূল স্বাক্ষরকারী ছিলেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের সাংসদ
বিপ্লব কুমার দেব,এমডিসি মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ,বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন, অতিরিক্ত সচিব পীযূষ গোয়েল,ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর যুগ্ম অধিকর্তা তপন ডেকা, উপদেষ্টা অক্ষয় মিশ্র, রাজ্যের মুখ্যসচিব জে কে সিন্‌হা সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এনএলএফটি ও এটিটিএফ এর মূল স্রোতে ফিরে আসার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আজকের শান্তি চুক্তির ফলে ত্রিপুরা শান্তি ও প্রগতির পথে একধাপ এগিয়ে গেলো। যখন থেকে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তখন থেকে শান্তির মাধ্যমে সক্ষম ও বিকশিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের স্বপ্নকে সবার সামনে তুলে ধরছেন।প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র রেল,বিমান,যোগাযোগের মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাথে দূরত্ব মেটাতে প্রয়াসী হননি। এই অঞ্চলের জনগণের সাথে হৃদয়ের দূরত্বও মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। অষ্টলক্ষ্মী ও পূর্বোদয় এই দুই ভাবনাকে একত্রিত করে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়ছে ভারত সরকারের সেই উদ্যোগে অনেকটা সাফল্য এসেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, এই শান্তি চুক্তি এই অঞ্চলের জন্য দ্বাদশ এবং ত্রিপুরার জন্য তৃতীয় শান্তি চুক্তি।এই শান্তি চুক্তিগুলির মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার উগ্রবাদী অস্ত্র ত্যাগ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে।এ দিনের এই শান্তি চুক্তির মাধ্যমেও ৩২৮ জনের বেশি এনএলএফটি এটিটিএফ-এর সদস্য ও সহযোগীরা মূল স্রোতে ফিরে আসবেন।এখন থেকে তারা বিকশিত ত্রিপুরা গঠনের প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভারত সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনজাতি গোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানেও এই অঞ্চলের উন্নয়নে ২৫০ কোটি টাকার সংস্থান রেখেছে।তিনি আশা প্রকাশ করেন এই উদ্যোগের ফলে জনজাতি গোষ্ঠীগুলির অভাব,অভিযোগ দূর করা যাবে।তিনি বলেন, বোরোল্যাণ্ড সমস্যা হোক আর ব্রু শরণার্থী সমস্যাই হোক সমস্ত সমস্যাগুলিকেই ভারত সরকার আঞ্চলিক পর্যায়ে সমাধানের চেষ্টা করছে।ব্রু শরণার্থীদর জন্য যেমন সমস্ত সরকারী প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তেমনি এনএলএফটি ও এটিটিএফ-এর সদস্যদের আশা আকাঙক্ষা পূরণে সরকার সচেষ্ট থাকবে। ত্রিপুরার জনজাতিদের মধ্যে যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ পুঞ্জিভূত ছিল তা দূরীকরণে মহারাজা প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণেরও তিনি প্রশংসা করেন।এখন সবাই মিলে সশক্ত ত্রিপুরা গঠনে উদ্যোগী হওয়া যাবে।২০১৯ সালে এই সরকার ত্রিপুরায় শান্তি চুক্তির মাধ্যমেই শুরু করেছিল উত্তর পূর্বাঞ্চলের একাধিক শান্তি চুক্তির যাত্রা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার শান্তিপূর্ণ পন্থায় উন্নয়নের মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সকল অংশের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ। এনএলএফটি ও এটিটিএফ-কে অস্ত্র ত্যাগ করে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অভিনন্দন জানান এবং চুক্তির সমস্ত ধারা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা বলেন, সমগ্র উত্তর পূর্ব ভারতে শান্তির পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন।এজন্য মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।সমাজে মূল স্রোতে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য এনএলএফটি এবং এটিটিএফ-এর সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সক্রিয় উদ্যোগে গত দশ বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বারোটির মতো শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বিভিন্ন জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য।এরমধ্যে ত্রিপুরায় তিনটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
শান্তি চুক্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের এমন বহু প্রকল্প যেগুলির মাধ্যমে জনজাতি সম্প্রদায়ের জীবনে প্রগতিমূলত পরিবর্তন এসেছে।প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও কল্যাণমূলক পথ প্রদর্শনে সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর জন্য এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করেছে।এ দিনের শান্তি চুক্তিকে ঐতিহাসিক মাইল ফলক বলে অবহিত করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এনএলএফটি এবং এটিটিএফ-এর সমস্ত সদস্যদের স্বাগত জানান এবং সবকা সাথ সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস নীতিতে ভরসা করে তাদের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।এ দিন এনএলএফটি-এর পক্ষে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন বিশ্বমোহন দেববর্মা, উপেন্দ্র রিয়াং, পরিমল দেববর্মা, প্রসেনজিৎ দেববর্মা এবং এটিটিএফ-এর পক্ষে শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন আলেন্দ্র দেববর্মা।শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের সময় এই দুই সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সোনাধন দেববর্মা, বিক্রম বাহাদুর জমাতিয়া, বিদ্যাধর ত্রিপুরা, কান্তি মারাক (এনএলএফটি) এবং রাকেশ দেববর্মা (এটিটিএফ)।এ দিনের শান্তি চুক্তি নিয়ে তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ বলেন,এ চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় জনজাতিদের সাড়ে তিন দশকের সমস্যা দূর হয়েছে। রাজ্যের ভূমিপুত্ররা অনেকদিন ধরে ভুগছিলেন। ঐতিহাসিক এই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় এবার তারা মূল স্রোতে ফিরতে পারবেন। সবাই মিলে এবার রাজ্য এবং দেশের জন্য কাজ করা যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.