এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নির্বাচন সামনে এলেই রাজনৈতিক নেতাদের মুখ থেকে কুকথার স্রোত বইতে থাকে।এটা নতুন ঘটনা নয়। কালে কালে এটাই ঘটে আসছে।তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই প্রবণতা দিনের পর দিন বাড়ছে বই কমছে না। ভোট নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মুখনিঃসৃত এই শক্তিশেল বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে কত শত উপায় উদ্ভাবন হলেও কোন কিছুতেই কিছু কাজ হচ্ছে না। নির্বাচনি প্রচারে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ, নিম্নরুচির অঙ্গভঙ্গি,কিংবা ধর্ম ও জাতপাত টেনে এনে ভোট চাওয়ার ঘটনার প্রচুর নজির ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে এদেশে ঘটেছে।কিন্তু ব্যাধি কমার এতটুকুও নামগন্ধ নেই।বরং বেড়ে চলেছে অহরহ।নির্বাচন এলেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।একেবারে যাকে বলে ক্রনিক।ডাক্তার, বদ্যি, ওঝা- সবাইকে দেখালেও এই রোগ থেকে রাজনেতাদের নিস্তার নেই।সব আমলেই,সব রাজ্যেই রাজনৈতিক সব দলের নেতা-নেত্রীরাই বেশ পারদর্শিতার সঙ্গে এই কাজটি করে চলেছেন।তার মানে এই নয় যে,প্রতিটি রাজনৈতিক নেতাই এই কাজে দক্ষ।সবাই কখনোই সমান হতে পারেন না। কিন্তু অশালীনতার প্রশ্নে অল্প-বিস্তর প্রায় সব নেতাই কেউ খুব কম যান না।এ যেন কু- কথার নকআউট প্রতিযোগিতা।সব জমানাতেই সমানভাবেই এই উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে চলেছেন রাজনেতারা।ভোটের বাজারে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে রাজনীতি প্রাধান্য পাবে- এটাই সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাশিত বিষয়।কিন্তু বাস্তবে ভোট প্রচারে, নির্বাচনি বক্তব্যে তা আর এক সুরে থাকে না। বরং রাজনৈতিক বক্তব্য বেসুরো হয়ে ব্যক্তিগত কুৎসা, নিন্দাবাক্য, অপবাদ, তুই-তোকারিতে পর্যবসিত হয়।ন্যূনতম শালীনতা ও সৌজন্যের সীমা ছাড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অশালীন কথার ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে দেন।এই আকথা-কুকথা রুখতে নির্বাচন কমিশনের যতটা ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমিশন তেমনটা করে উঠে না। এক্ষেত্রে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় দেশজুড়ে ভোট প্রচারে নেতানেত্রীদের অশালীন বক্তব্য সীমা লঙ্ঘন করে যাওয়ায় বিরক্ত সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচন কমিশনকে বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছিল। প্রথমটায় কমিশন নিজের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য কমিশনের সীমিত ক্ষমতা এবং কমিশন কার্যত নখদন্তহীন- এটা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল সুপ্রিম কোর্টকে।কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত কঠোর মনোভাব নিতেই নির্বাচন কমিশন নড়েচড়ে বসে।এবার ২০২৪-এর লোকসভার ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই ফের একবার রাজনৈতিক কুকথা,অশালীনতা শুরু হয়ে গেছে।সমাজত্ব বিদরা মনে করেন,প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করার মতো যুক্তি যখন হারিয়ে যায়চতখনই নেমে আসে কুকথার বাণ। মতাদর্শের ফারাক বা রাজনৈতিক বিরোধ রাজনীতিতে থাকতেই পারে। কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণ,কুকথা কোনভাবেই কোন মঞ্চেই কাম্য নয়।হোক সেটা রাজনীতি কিংবা সমাজনীতি অথবা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। ব্যক্তি আক্রমণকে কোন মানুষই ভালো চোখে দেখেন না।সবাই মনে করেন, রাজনীতি থাকুক রাজনীতির জায়গায়।অথচ ভোটের মঞ্চে দাঁড়িয়ে একে অপরকে ‘জোকার’ যৌণকর্মী, দেহপসারিণী, সহ অগণিত শব্দবন্ধে যখন আক্রমণ শানানো হয় তখন তা রাজনীতির পরিসর ডিঙিয়ে গণতন্ত্রের মহিমাকে পর্যন্ত কালিমালিপ্ত করে।আসলে ইদানীং অনেকেই যে ভাষায় কথা বলছেন তার মধ্যে এক ধরনের অসংযম আছে। রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা যে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করছে তাদের সম্পর্কে খুব ভালো ছবি তৈরি হয় না। মনে রাখতে হবে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে যে মানুষদের বেছে নেওয়ার কথা ভোটাররা ভাবছেন,সেই মানুষদের এবং তাদের সতীর্থদের মুখ থেকে যখন নোংরা বাক্যবাণ ধেয়ে আসে, তখন ভোটারদের মনে প্রশ্ন জাগে, সংশয় তৈরি হয়-কাদের জন্য তারা ভোট দিতে এসেছেন!ঘৃণা এবং প্রতিঘৃণার ভাষা কখনোই ভালো বার্তা ও পরিণাম বয়ে আনে না।আঘাতের ভাষা আরও বেশি আঘাত ডেকে আনে।সাময়িকভাবে মনে হতে পারে, কাউকে নোংরা শব্দ ব্যবহার করে গালি দিয়ে আমি জিতে গেছি।কিন্তু এই বাগযুদ্ধে জয় মানুষের মনে তার সম্পর্কে যে ধারণা ও প্রতিচ্ছবির জন্ম দেয় সেটা কিন্তু মুছে ফেলা যায় না। ভুলে গেলে চলবে না যথার্থ রাজনৈতিক নেতার ত্যাগ, সংযম থাকতে হয়।থাকতে হয় শালীনতা সেটা না থাকলে কোন কিছুরই মূল্য থাকে না। হোক সেটা মনুষ্যত্ব বা গণতন্ত্র।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

13 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

13 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago