শাসকের ঘরে আগুন!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)
FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp

দুইদিনের ত্রিপুরা সফর শেষ করে বৃহস্পতিবার বারবেলার আগেই আগরতলা ছাড়লেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আগরতলা থেকে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে গেলেন গুয়াহাটি। আগরতলা ছাড়ার আগে এদিন সকালে সূচি অনুযায়ী দু’টি যাত্রীট্রেনের সূচনা করেন। তারপর উদয়পুর মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে মায়ের দর্শন ও পুজো দিয়ে যান। এই সবই হয়েছে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ত্রিপুরা সফরকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকে একের পর এক যে ছবি এবং ঘটনা সামনে এসেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে জোর গুঞ্জন ও জল্পনা শুরু হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রশাসন অর্থাৎ রাজ্য সরকার ও বিজেপি দলের মধ্যে, আরও স্পষ্ট করে বললে শাসক দলের অন্দরে অশান্তি যে চরম আকার ধারণ করেছে – তা রাষ্ট্রপতির সফরে আরও বড় করে প্রকট হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। দলের অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে, আচমকা ক্ষমতা হাতে পেয়ে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে ডা. মানিক সাহা কাউকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি একনায়কতন্ত্রী মনোভাব নিয়ে চলছেন। শুধু তাই নয়, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, তার সাথে দলের অন্যান্য নেতৃত্বের বড়সড় একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যা রাষ্ট্রপতির সফরকে কেন্দ্র করে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে সাংসদদের ব্রাত্য রাখা নিয়ে দৈনিক সংবাদে রাষ্ট্রপতি আগরতলা পা রাখার আগেই ইঙ্গিত দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সব কিছু কি ধামাচাপা দিয়ে আড়াল করা যায়? তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে মানুষ যেখানে অন্যের মনের খবর পড়ে নিতে পারে সেকেণ্ডে, সেখানে শাসকের এইসব মনোমালিন্য-বিরোধের ছবি চোখে পড়বে না? এমন ভাবলে মূর্খামি হবে।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্রৌপদী মুর্মু প্রথম ত্রিপুরা সফরে আসছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর তার উত্তর-পূর্বের রাজ্য সফরের সূচনা করেছেন ত্রিপুরা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই এটা রাজ্য সরকারের জানার কথা।

সেই সুবাদে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি আরও নান্দনিক ও কালারফুল হতে পারতো। বিমানবন্দরে একটি ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেত। যেখানে রাজ্যের পরম্পরাগত কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে কোলাজ আকারে তুলে ধরা যেত। তা তো হলোই না। উল্টো রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে একের পর এক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী কি একাই সবকিছু করতে চেয়েছেন বা চাইছেন? তা না হলে এমনটা হবে কেন? বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর জন্য যাদের নাম রাখা হয়েছে, সেখানে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের লোক ছাড়া আর কারও নাম নেই। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক সেখানে হাজির ছিলেন।

এ নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, সমালোচনা- পাল্টা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক পক্ষের বক্তব্য, আমন্ত্রণ না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রটোকল ভেঙে সেখানে হাজির হয়েছেন। অন্য পক্ষের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনেই তাদের ব্রাত্য রাখা হয়েছিলো। তাই মুখের উপর জবাব দিতেই তিনি রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে হাজির হয়েছিলেন। শুধু এটাই নয়, নরসিংগড়ে ত্রিপুরা জুডিশিয়াল একাডেমির উদ্বোধন হবে। শিলান্যাস হবে জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় খোদ আইন মন্ত্রীরই নাম নেই। অথচ আইন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় যার নাম সবার উপরে ছিলো (রাজ্যপাল) তিনি সেখানে অনুপস্থিত।

এমনকী রবীন্দ্র ভবনের অনুষ্ঠানেও রাজ্যপাল আসেননি। প্রশ্ন উঠেছে, নরসিংগড়ের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় আইন মন্ত্রীর নাম থাকবে না কেন? জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা বার কাউন্সিল, হাইকোর্ট বার, ত্রিপুরা বার অ্যাসোসিয়েশনের কাউকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি। দেখা গেল না রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকেও। বিতর্কের শেষ এখানেই নয়, রবীন্দ্র ভবনের অনুষ্ঠানের সরকারী তরফে আমন্ত্রণপত্র এবং বিজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কারও নাম নেই। অথচ মঞ্চে দেখা গেল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, এমনকী পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়কেও। প্রশ্ন উঠেছে, তারা যদি মঞ্চে থাকবেনই, তাহলে আমন্ত্রণপত্রে বিজ্ঞাপনে নাম ছাপতে আপত্তি কোথায় ছিলো? তাহলে কি চাপে পড়ে শেষে তাদের মঞ্চে বসাতে হয়েছে?

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বৃহস্পতিবার আগরতলা থেকে রাষ্ট্রপতির হাত ধরে যাত্রী ট্রেনের সূচনা উপলক্ষে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল থেকে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, সেই বিজ্ঞাপনে নিয়মমতো যাদের নাম থাকার কথা তাদের প্রত্যেকের নামই আছে। এমনকী স্থানীয় বিধায়কের নাম পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যে কাজ খুব সুন্দরভাবে রেল কর্তৃপক্ষ করতে পারলো, সেটা রাজ্য সরকার করতে পারলো না কেন? এই কেন’র উত্তর খুঁজতেই এখন আরও বেশি করে জলঘোলা হতে শুরু করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এর মধ্যে শাসকের ঘরে যে অশান্তি মতবিরোধ শুরু হয়েছে তাতে অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির সফর সেই অশান্তি ও বিরোধকে জনসমক্ষে এনে দিয়েছে।

FacebookFacebookTwitterTwitterRedditRedditLinkedinLinkedinPinterestPinterestMeWeMeWeMixMixWhatsappWhatsapp
Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

9 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

10 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

10 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

10 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

10 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

1 day ago