শাসকের ঘরে আগুন!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দুইদিনের ত্রিপুরা সফর শেষ করে বৃহস্পতিবার বারবেলার আগেই আগরতলা ছাড়লেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আগরতলা থেকে বায়ুসেনার বিশেষ বিমানে গেলেন গুয়াহাটি। আগরতলা ছাড়ার আগে এদিন সকালে সূচি অনুযায়ী দু’টি যাত্রীট্রেনের সূচনা করেন। তারপর উদয়পুর মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে মায়ের দর্শন ও পুজো দিয়ে যান। এই সবই হয়েছে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ত্রিপুরা সফরকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকে একের পর এক যে ছবি এবং ঘটনা সামনে এসেছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে জোর গুঞ্জন ও জল্পনা শুরু হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রশাসন অর্থাৎ রাজ্য সরকার ও বিজেপি দলের মধ্যে, আরও স্পষ্ট করে বললে শাসক দলের অন্দরে অশান্তি যে চরম আকার ধারণ করেছে – তা রাষ্ট্রপতির সফরে আরও বড় করে প্রকট হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশই নেই। দলের অন্দরে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে, আচমকা ক্ষমতা হাতে পেয়ে অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে ডা. মানিক সাহা কাউকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি একনায়কতন্ত্রী মনোভাব নিয়ে চলছেন। শুধু তাই নয়, স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, তার সাথে দলের অন্যান্য নেতৃত্বের বড়সড় একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যা রাষ্ট্রপতির সফরকে কেন্দ্র করে আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে সাংসদদের ব্রাত্য রাখা নিয়ে দৈনিক সংবাদে রাষ্ট্রপতি আগরতলা পা রাখার আগেই ইঙ্গিত দিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সব কিছু কি ধামাচাপা দিয়ে আড়াল করা যায়? তথ্য প্রযুক্তির এই সময়ে মানুষ যেখানে অন্যের মনের খবর পড়ে নিতে পারে সেকেণ্ডে, সেখানে শাসকের এইসব মনোমালিন্য-বিরোধের ছবি চোখে পড়বে না? এমন ভাবলে মূর্খামি হবে।
রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর দ্রৌপদী মুর্মু প্রথম ত্রিপুরা সফরে আসছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হওয়ার পর তার উত্তর-পূর্বের রাজ্য সফরের সূচনা করেছেন ত্রিপুরা দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই এটা রাজ্য সরকারের জানার কথা।

সেই সুবাদে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর বিষয়টি আরও নান্দনিক ও কালারফুল হতে পারতো। বিমানবন্দরে একটি ছোটখাটো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যেত। যেখানে রাজ্যের পরম্পরাগত কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ঐতিহ্যকে কোলাজ আকারে তুলে ধরা যেত। তা তো হলোই না। উল্টো রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানো থেকে শুরু করে একের পর এক বিতর্ক দানা বেঁধেছে। প্রশ্ন উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী কি একাই সবকিছু করতে চেয়েছেন বা চাইছেন? তা না হলে এমনটা হবে কেন? বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর জন্য যাদের নাম রাখা হয়েছে, সেখানে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের লোক ছাড়া আর কারও নাম নেই। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক সেখানে হাজির ছিলেন।

এ নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ, সমালোচনা- পাল্টা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এক পক্ষের বক্তব্য, আমন্ত্রণ না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী প্রটোকল ভেঙে সেখানে হাজির হয়েছেন। অন্য পক্ষের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর অঙ্গুলি হেলনেই তাদের ব্রাত্য রাখা হয়েছিলো। তাই মুখের উপর জবাব দিতেই তিনি রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাতে হাজির হয়েছিলেন। শুধু এটাই নয়, নরসিংগড়ে ত্রিপুরা জুডিশিয়াল একাডেমির উদ্বোধন হবে। শিলান্যাস হবে জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই অনুষ্ঠানেও রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় খোদ আইন মন্ত্রীরই নাম নেই। অথচ আইন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় যার নাম সবার উপরে ছিলো (রাজ্যপাল) তিনি সেখানে অনুপস্থিত।

এমনকী রবীন্দ্র ভবনের অনুষ্ঠানেও রাজ্যপাল আসেননি। প্রশ্ন উঠেছে, নরসিংগড়ের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানানোর তালিকায় আইন মন্ত্রীর নাম থাকবে না কেন? জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা বার কাউন্সিল, হাইকোর্ট বার, ত্রিপুরা বার অ্যাসোসিয়েশনের কাউকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয়নি। দেখা গেল না রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকেও। বিতর্কের শেষ এখানেই নয়, রবীন্দ্র ভবনের অনুষ্ঠানের সরকারী তরফে আমন্ত্রণপত্র এবং বিজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী ছাড়া আর কারও নাম নেই। অথচ মঞ্চে দেখা গেল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, এমনকী পর্যটন মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়কেও। প্রশ্ন উঠেছে, তারা যদি মঞ্চে থাকবেনই, তাহলে আমন্ত্রণপত্রে বিজ্ঞাপনে নাম ছাপতে আপত্তি কোথায় ছিলো? তাহলে কি চাপে পড়ে শেষে তাদের মঞ্চে বসাতে হয়েছে?

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বৃহস্পতিবার আগরতলা থেকে রাষ্ট্রপতির হাত ধরে যাত্রী ট্রেনের সূচনা উপলক্ষে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল থেকে যে বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে, সেই বিজ্ঞাপনে নিয়মমতো যাদের নাম থাকার কথা তাদের প্রত্যেকের নামই আছে। এমনকী স্থানীয় বিধায়কের নাম পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যে কাজ খুব সুন্দরভাবে রেল কর্তৃপক্ষ করতে পারলো, সেটা রাজ্য সরকার করতে পারলো না কেন? এই কেন’র উত্তর খুঁজতেই এখন আরও বেশি করে জলঘোলা হতে শুরু করেছে। আগামী বিধানসভা নির্বাচন দুয়ারে কড়া নাড়ছে। এর মধ্যে শাসকের ঘরে যে অশান্তি মতবিরোধ শুরু হয়েছে তাতে অশনি সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির সফর সেই অশান্তি ও বিরোধকে জনসমক্ষে এনে দিয়েছে।

Dainik Digital

Recent Posts

এ কে-৪৭ ও প্রচুর কার্তুজ সহ ৬ বৈরী ধৃত মিজোরামে, চাঞ্চল্য!!

অনলাইন প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার ভারত- বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মিজোরামে যাওয়ার পথে মামিত জেলার…

4 hours ago

ফাইফরমাশ খাটছেন টিএসআর জওয়ানরা !!

অনলাইন প্রতিনিধি :- নিরাপত্তার কাজে নয়, টিএসআর জওয়ানদের খাটানো হচ্ছে আর্দালি হিসাবে। পুলিশ আধিকারিকদের ও…

4 hours ago

ইন্ডিগো আরও একটি দিল্লীর বিমান চালু করছে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :- ইন্ডিগো আগরতলা- দিল্লী রুটের উভয় দিকে যাতায়াতে আরও একটি বিমান চালু করছে।…

4 hours ago

ইন্দ্রপ্রস্থে ভোট!!

দিল্লীর বিধানসভা ভোট নিয়ে সরগরম দিল্লী। দিল্লীতে এবার এক আঙ্গিকে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। গত পরিস্থিতির…

5 hours ago

বহিঃরাজ্যে গেল “ধানি লঙ্কা”ওরফে ধান্না মরিচ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরায় উৎপাদিত" অর্গানিক বার্ড আই চিলি " স্হানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ধানি…

1 day ago

কুম্ভ ইকনমি

২২জানুয়ারী,২০২৪।এক বছরের ব্যবুধানে ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি।গত বছরের মেগা ইভেন্টের আসর বসেছিল অযোধ্যায়। এবার মেগা…

1 day ago