রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!
শিক্ষক সংকটে জেরবার কলেজগুলি,রাজ্যে বেহাল দশা উচ্চশিক্ষার।
অনলাইন প্রতিনিধি || এ বছরও রাজ্য সরকারের সাধারণ ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপক-অধ্যাপিকা নিয়োগ হলো না। যদিও বর্তমান শিক্ষাবর্ষে রাজ্য সরকারের ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ২৬ জুলাই থেকে পঠনপাঠন শুরু হচ্ছে। তবে কোনও এক অদৃশ্য কারণে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী অনুপাতে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ অধরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নীতিমালা অনুযায়ী রাজ্য সরকারের ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ৩০ জন ছাত্র-ছাত্রীর জন্য একজন অধ্যাপক/অধ্যাপিকা থাকবে। তবে অবাক করার বিষয় হলো রাজ্যে সরকারের দৌলতে ১৭৫ জন পড়ুয়ার জন্য একজন শিক্ষক শিক্ষিকাও নেই। ফলে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের উচ্চশিক্ষার কী করুণ দশা।এর খেসারত প্রদান করছে রাজ্যের হাজারো ছাত্র-ছাত্রী। রাজ্য সরকারের এই দায়সারা মনোভাবের জন্য এই প্রথম স্নাতকস্তরের পরীক্ষায় প্রায় ৬০ শতাংশ পড়ুয়া অনুত্তীর্ণ হলো। কিন্তু এরপরও সরকারের কোনও হেলদোল নেই। ফলে নানা প্রশ্ন উঠছে।উচ্চশিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর, বর্তমান শিক্ষাবর্ষে রাজ্য সরকারের ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে প্রায় ২৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে প্রথমবর্ষে ভর্তি করা হবে। ফলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থবর্ষ মিলিয়ে ২৫টি কলেজে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ হতে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য ইউজিসি স্বীকৃত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা মাত্র ৩১৭ জন রয়েছে। ফলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীর পঠনপাঠন জেরক্স নির্ভর এ বছরও রাজ্যে চলবে। কারণ এই শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যে আবার ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়া সাধারণ ডিগ্রি কলেজে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০ কার্যকর হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি মোতাবেক কলেজে পঠনপাঠন চলবে এবং এতে ডিগ্রি কোর্স হবে চার বছরের জন্য।নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রত্যেক ছাত্র- ছাত্রীকে একটি বিষয় ‘মেজর’ প্রদান করা হবে।কিন্তু ‘মেজর’ বিষয়টিতে পড়ুয়াদের টানা তিন বছর ৭৫ শতাংশ নম্বর কীভাবে জুটবে।কেননা কলেজগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকার যে বড়ই অভাব।এ প্রশ্নের উত্তর নেই। কারণ তৃতীয়বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় যদি কোনও পড়ুয়া প্রথম ও দ্বিতীয়বর্ষ মিলিয়ে ৭৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট ছাত্র- ছাত্রী চতুর্থবর্ষে ভর্তির সুযোগ নেই। ফলে তাদের মেজর’ অনার্স ডিগ্রির সুযোগ বন্ধ। অভিযোগ রাজ্য সরকারের ২৫টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে বর্তমানে ৩০ জন বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া একসাথে প্র্যাকটিকেল ক্লাস করতে পারছে না। এই হাল হলো রাজধানীর এমবিবি, উইমেন্স, রামঠাকুর ও বিবিএম কলেজের। রাজ্যের অন্যান্য জেলা ও মহকুমার কলেজগুলির আরও শোচনীয় অবস্থা। উল্টো বহু কলেজে ইতিমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ বন্ধের পথে। কারণ একজনও বিজ্ঞান শিক্ষক/শিক্ষিকা নেই। যদিও বর্তমান শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষানীতির অনুকরণে রাজ্যেও বিজ্ঞান বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নম্বরের ভিত্তিতে একটি ‘মেজর’ বিষয় প্রদান করা হবে। তাই প্রত্যেক কলেজে বিজ্ঞান বিষয়ে ন্যূনতম তিনশ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা কোথায় প্র্যাকটিকেল ক্লাস করবে? এ বিষয়ে নীরব সরকার ও তার দপ্তর। একই হাল কলা ও বাণিজ্য বিভাগের। কারণ এই দুটি বিভাগেও ছাত্র-ছাত্রীদের একটি বিষয়ে ‘মেজর’ প্রদান করা হবে। কিন্তু কলেজগুলিতে ক্লাস রুম নেই। চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী অনুপাতে নেই। বৈদ্যুতিক পাখা, লাইট পর্যন্ত অচল। অধিকাংশ কলেজে এক বেঞ্চে বসেই দুজন ছাত্র-ছাত্রী ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বিপাকে পড়বে ছাত্র-ছাত্রীরা। পরিকাঠামো উন্নয়ন না হলেও ভর্তি বাবদ ছাত্র- ছাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা আয় করে নিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ এখন পর্যন্ত অতিথি শিক্ষক-শিক্ষিকা পর্যন্ত নিয়োগ করেনি সরকার। উল্টো ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে ১৯৫ জন অধ্যাপক- অধ্যাপিকা পদে নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছিল সরকার। অন্যদিকে রাজ্যে নেট, স্লেট, পিএইচডি উত্তীর্ণ হাজারো যুবক-যুবতী রাজপথে। এদের অনেকে আবার বয়সোত্তীর্ণ বেকারেও পরিণত হয়েছে। ফলে প্রায় প্রত্যেকদিনই ছাত্র-ছাত্রীর বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজ্য।