শিল্পের গরু কোন গাছে

 শিল্পের গরু কোন গাছে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

গত চার সাড়ে চার বছরে শিল্পোন্নয়ন নিগম কোনও কাজ করিয়া দেখাইতে পারে নাই । বামেদের আমলে টিআইডিসি একটি লাভজনক হইয়া দাঁড়াইয়াছিল । প্রতি বছর এই আধা সরকারী সংস্থা সরকারের হাতে কম কিংবা বেশি একটি লভ্যাংশ তুলিয়া দিতে পারিত । সেই সময়েই আধা সরকারী সংস্থাগুলির ভবিষ্যৎ লইয়া প্রশ্ন আসিয়াছিল । অনেকগুলি সংস্থা অলাভজনক চিহ্নিত হইয়া যায় । এই রকম এক মন্দার সময়ে রাজ্যের দ্বিতীয় লাভজনক বেসরকারী সংস্থা হিসাবে টিএফডিপিসির পাশে আসিয়া স্থান লয় টিআইডিসি । টানা প্রায় দশ বৎসর ধরিয়া এই ধারা বজায় ছিল । মনোনীত হইয়া টিআইডিসির চেয়ারম্যান হিসাবে টিংকু রায় দায়িত্ব গ্রহণের পর ।

এই আমলে টিআইডিসি নতুন কোনও বিনিয়োগ ত্রিপুরায় টানিয়া আনিতে পারিয়াছে বলিয়া শোনা যায় না । বোধজং শিল্প নগরীও আর প্রচারে রইল না । একের পর এক ঝাঁপ বন্ধের পাশাপাশি রাজ্যে শিল্প আনয়নে কিংবা স্থানীয় লোকজনকে শিল্পে উদ্যোগী করিয়া তুলিতে টিআইডিসির কোনও ভূমিকা দেখা গেল না । সরকার বা শিল্প দপ্তরের পক্ষে বেকার উদ্যোগীদের সহায়তায় টিআইডিসি কোনও ভূমিকা লইতেছে বলিয়াও রাজ্যের কেহ জানেন না । বরং দেখা গেল শিল্প তালুকের বেশকিছু শিল্প সংস্থা নতুন শিল্প গড়িতে চাহিলে তাদের নিরুৎসাহিত করা হইল । এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রাণ সংস্থা প্রাণ – এর সঙ্গে টিআইডিসির রসিকতা আমরা সকলেই জানিতে পারি ।

কিন্তু এমন অজস্র ঘটনা গত সাড়ে চার বছরে ঘটিয়াছে যাহা লোকচক্ষুর অন্তরালেই রহিয়া গিয়াছে , রহিয়া যাইবে । রাজ্যের কোনও বেকার শিল্প গড়িতে টিআইডিসির সহায়তাপুষ্ট হইয়াছেন বা আগাইয়া যাইতে সহায়তা পাইয়াছে এমন ঘটনা হাতে গোনা । আবার যাহারা শিল্প তালুকে জমি লইয়া পুঁজিনিবেশের কথা ভাবিয়াছেন বা জমি লইয়া কাজ শুরু করিয়াছেন , তাহাদের প্রতিও সহায়তা , বদান্যতা দেখা যায় না । দেওয়ালে কান পাতিলে শোনা যায় টিআইডিসি যে উদ্দেশ্য লইয়া গঠন হইয়াছিল ১৯৭৪ সালে সেই উদ্দেশ্যের ধারেকাছেও নাই এই সংস্থা আজিকার দিনে । জন্মলগ্নে এই প্রতিষ্ঠানটি একটি লগ্নি সংস্থা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করিয়াছিল ।

পরে এসআইডিসি হয় ক্রমান্বয়ে টিআইডিসি নাম লইয়া যে কাজটি করিতে শুরু করিল তাহা হইল বেকার উদ্যোগী যুবকদের শিল্প গঠনে সহায়তা প্রদান । ঋণ প্রদানের পাশাপাশি তাহারা পরিকাঠামো গঠনের কাজে হাত দেয় । মূলত তদারক সংস্থা হিসাবে তাহারা কমিশন পাইত নিজেদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় । নির্মাণকাজ করিত পূর্ত দপ্তর , হাউজিং বোর্ডের মতন নির্মাণসংস্থা ।
কিন্তু নিজেদের বাঁচাইবার জন্য টিআইডিসি একসময় সিদ্ধান্ত লইল শুধু তদারকি দিয়া সংস্থা চলিবে না , আয় বাড়াইতে হইলে নিজেদের নির্মাণ উইং খুলিতে হইবে । ২০০৯-১০ সালে নিজেরা নির্মাণ উইং খুলিয়া সাফল্য পায় এবং প্রতিবছর শতেক যুবক যুবতীকে ঋণ দিয়াও নিজেদের লাভজনক প্রতিপন্ন করিয়া লইয়াছিল । তাহার কিছু প্রমাণও রাখিয়া গিয়াছে এই সংস্থা ।

হাপানিয়ায় যে মেলা প্রাঙ্গণ তাহা দেশের মূল ভূখণ্ডেও খুব কম রহিয়াছে । বোধজং নগরে শিল্প তালুক তাদের হাতেই গড়া । দেখা গেল এই সংস্থার এই সকল সাফল্য আজ ইতিহাস হইয়া গিয়াছে এই আমলে । বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর মাস আষ্টেক ঋণ প্রদান ছিল । এরপর আচমকা ,সরকারী কোনও সিদ্ধান্ত ছাড়াই ঋণ প্রদান বন্ধ করিয়া দেয় এই সংস্থা। তাহাদের কাজ একটাই, তাহা হইল ঠিকাদারি ।কেবল রোজগারই দেখিতেছে টিআইডিসি , সামাজিক দায় যেন তাহাদের নাই ।
দেওয়ালের ওই পাশের ফিসফিস গুঞ্জন , বেকারদের ঋণ দিলে বেকার সমস্যা কমিবে হয়ত ৷ কিন্তু টাকা বা উপরি টাকা আসিবে না । তাই ঠিকাদারিই চলিতেছে । এই সংস্থাটিকে এতটাই বানিয়া বানাইয়া দেওয়া হইয়াছে যে পুরানো অভিজ্ঞতা অস্বীকার করিয়া টিআইডিসির বাহিরের লোক আনিয়া ওএসডি করা হইয়াছে এবং ডিডিও – র দায়িত্ব দেওয়া হইয়াছে । প্রসঙ্গত , ১৯৯৩-৯৪ সালে সিপিএমের আমলে একবার বাহিরের লোক আনিয়া ডিডিও বানাইয়া দেওয়া হইলে এই সংস্থার সমূহ ক্ষতি হয় । সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাইয়া টিআইডিসির আধিকারিকেরা চিঠি লিখিয়া উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করিয়াছিল , বাহিরের লোকের হাতে ওএসডির দায়িত্ব দেওয়া হইলে সংগঠনের সমূহ বিপদ ঘনাইতে পারে । আধিকারিকদের সেই চিঠির আমল দেওয়া হয় নাই । বাহিরের আধিকারিককে ওএসডি বানাইয়া যেমতে ডিডিওর দায়িত্ব দেওয়া হইল তাহাতে অর্থমোক্ষণ ছাড়া আর কিছু হইলো কি ? পূর্বে এই সংস্থা যে সকল বিল সন্দেহজনক হওয়ার কারণে লাল ফিতার গিঁটে আটকাইয়া দিয়াছিল , এই ডিডিওর আমলে সেই সকল বিল পাস হইয়া যায় । আর্থিক লেনদেন ছাড়া রাজ্যে শিল্প , শিল্পোদ্যোগী তৈরিতে এই সংগঠনের বিতৃষ্ণা এই রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনাকেও গাছে চড়াইয়াছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.