শিল্পোন্নয়নের ফসিল

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজধানী শহর আগরতলার তিন – চার কিলোমিটার দক্ষিণে এক সময়ে এ রাজ্যের মাঝারি শিল্পের একমাত্র গর্ব হাপানিয়ার চটকল সময়ের বিবর্তনে আজ শিল্পের ফসিলে পরিণত হয়েছে । যদিও বহু সাধের এই চটকল জন্মলগ্ন থেকেই নানা বাধা বিপত্তি , সঙ্কট – সাফল্য , উত্থান – পতনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এতকাল টিমটিম করে তার সলতে জ্বালিয়ে রেখেছিলেন । কিন্তু শিবরাত্রির সলতে একমাত্র মাঝারি শিল্প হাপানিয়া চটকল আজ শুধুই একটা অতীতের চিহ্নস্বরূপ , যা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয় । এমনিতেই এই রাজ্যের সূচনাকাল থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে শিল্পের বন্ধ্যাত্ব লেগেই ছিল । যদিও শিল্পের এই দুরবস্থার জন্য এ রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতাকে দায়ী করা হয় । বলা হতো এ রাজ্যের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড দুর্বল হওয়ার মূল কারণ প্রান্তিক এই রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা । অর্থনীতির দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকার কারণগুলোর মধ্যে এখানকার অসমতল ভূমি , অনুন্নত কৃষি ব্যবস্থা এগুলোকেও কম বেশি দায়ী করা হয় । এটা ঘটনা , শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া কোন রাজ্যের দারিদ্র মোচন সম্ভব নয় । কিন্তু সময়ের হাত ধরে এই রাজ্যে বিগত ১৫ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছে । অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার লক্ষ্যে রাজ্যের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ বেড়েছে । একসময় বিশেষ ক্যাটাগরির রাজ্য হিসাবে ত্রিপুরা বিভিন্ন আর্থিক অনুদান ও বিশেষ সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছে । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো শিল্পের চেহারা এই রাজ্যের মানুষ দেখতে পায়নি । এক সময় অবিভক্ত উত্তর জেলায় একটি চিনিকল ছিল । সেটিও পারিপার্শ্বিক নানা কারণে জন মলগ্নেই বন্ধ হয়ে যায় । কুমারঘাটে প্রায় পাঁচ দশক আগে একটি কাগজ কল স্থাপনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর বসানো হয়েছিল । কিন্তু তারপর আগাছা আর জঙ্গলে সেই ভিত্তিপ্রস্তরটিও ঢাকা পড়ে যায় । বিভিন্ন সময়ে এ রাজ্যের নির্বাচনের প্রাক্কালে ডান – বাম নির্বিশেষে সবগুলো রাজনৈতিক দলই এ রাজ্যে ভারী কিংবা মাঝারি বিভিন্ন শিল্প কারখানা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল । কিন্তু রাসায়নিক সার কারখানা থেকে শুরু করে মিথানল এবং বিভিন্ন গ্যাসভিত্তিক শিল্প গড়ার স্বপ্ন প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থাকলো । বাস্তবে তা কোনদিন প্রতিফলিত হল না । কুটির ও বয়ন শিল্প হিসাবে তাঁত এবং বাঁশজাত শিল্পের মাধ্যম এ রাজ্যে সুতাকে কেন্দ্র করে টেক্সটাইল বা বস্ত্রশিল্প সম্ভাবনা থাকলেও কাজে সেটাও বাস্তবায়িত হল না। বরং খাদি ও গ্রামোদ্যোগ শিল্পের সাহায্য সহযোগিতা সত্ত্বেও কুটির শিল্প ও তাঁত শিল্পও এখন দুঃসময়ের প্রহর গুনছে । শিল্পে এই অহল্যা ভূমিতে এই যখন পরিস্থিতি , তখন রাজ্যের একমাত্র চটকলটি বর্তমানে কোমাচ্ছন্ন দশায় চলে গেছে । 1978 সালে মুখ্যমন্ত্রী সুখময় সেনগুপ্তের সময়ে স্থাপিত এই চটকল , সময়ে সময়ে বহু প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলেও বিগত ৫ বছরে একমাত্র এই মাঝারি শিল্পটিকে রক্ষার কোন চেষ্টা সরকার বা প্রশাসনের তরফে হয়নি । যদিও গোটা দেশেই চটকল গুলোর অবস্থা তেমন সুবিধার নয় । পশ্চিমবঙ্গ সহ অনেক রাজ্যেই বেশকিছু চটকলের ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে । কিন্তু সরকার শ্রমিক কর্মচারীদের কথা মাথায় রেখে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে । বিস্ময়কর হলো , গত ১ বছর ধরে রাজ্যে চটকলের উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ । বর্তমানে ১৩৫ জনের মতো শ্রমিক কর্মচারী বন্ধ কারখানার হাজিরা খাতায় সই করেই মাস শেষে বেতন গুনছেন । কিন্তু প্রশাসনের কোনও ভূমিকা নেই । এই রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর রয়েছে । রয়েছে শিল্পোন্নয়ন নিগম । কিন্তু মাথাভারী ,প্রশাসনের সময় হয়ে ওঠেনি গত সাড়ে চার বছরে এই চটকলটির পরিচালনগত ব্যবস্থা নিয়ে খোঁজ খবর করার । রাজ্যের এই চটকলটি কখনই লাভের মুখ না দেখলেও সরকারী সাহায্য সহযোগিতা ও অনুদানের উপর ভর করে শ্রমিক – কর্মচারীদের দুবেলা অন্ন সংস্থানের প্রশ্নে কারখানাটি চালু রাখা হয়েছিল । হয়তো আশির দশকের পর থেকে বামেদের অতি – রাজনীতির কারণে জৌলুস হারানো চটকলটি কোন ভাবে কঙ্কালসার দেহ নিয়ে উৎপাদন চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল । কিন্তু বর্তমানের শিল্পোন্নয়ন নিগম আর শিল্প দপ্তরের অবহেলায় সম্পূর্ণরূপে উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়া চটকলের কারখানাটিতে আজ যখন বটগাছের ঝুরি নিয়ে আর আগাছার জঙ্গলে পুরো অঞ্চলটি গ্রাস করেছে তখন বুঝতে বাকি থাকে না সরকারের তথাকথিত ‘ সব কা সাথ সবকা বিকাশ ’ এই উন্নয়নের দৌড়ের আসল চিত্রটা কোথায় ।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

শুরু হলো পর্ষদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এপ্রিল মাসের শেষে…

10 hours ago

টিএমসি কাণ্ড, ঋণ নিয়েছিলেন অধ্যাপিকা!তদন্ত চলছে, কাউকে ছাড়া হবে না বিধানসভায় কড়া বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাস করিয়ে দেবার নাম করে ডা. সোমা চৌধুরী নামে…

11 hours ago

নিজেদের অধিকার রক্ষায় বৈঠকে যাচ্ছে টিএফএর আজীবন সদস্যরা।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা টিএফএর সংবিধান সংশোধন করার নামে নিজেদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার…

12 hours ago

এডিসির ৩০২ স্কুলে ১ জন করে শিক্ষক, ছাত্র সমস্যা নিরসনে সরকার আন্তরিক, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-এডিসির ৩০২ টি স্কুলে শিক্ষক ১ রয়েছে।জাতীয় স্তরে প্রাথমিক স্কুলে ছাত্র- শিক্ষকের অনুপাত…

12 hours ago

কাজ করেনি,ফেরত গেছে ২২.৯১ কোটি টাকা,বাম আমলে অন্ধকারে ডুবে ছিল রাজ্যের পর্যটন: সুশান্ত।।

অনলাইন প্রতিনিধি :-বামফ্রন্টের টানা ২৫ বছরে রাজ্যের পর্যটন শিল্পের কোনও উন্নয়নই হয়নি। সম্পূর্ণ অন্ধকারে ডুবে…

12 hours ago

জাল ওষুধের রমরমা।

একা রামে রক্ষা নেই, সুগ্রীব দোসর। কথাটা বোধহয় এক্ষেত্রে একেবারে যথার্থভাবে ধ্বনিত হয়।গত কয়দিন ধরেই…

13 hours ago