শিল্প গড়ার নামে সিকারিয়ার আরেক ঘোটালা!

 শিল্প গড়ার নামে সিকারিয়ার আরেক ঘোটালা!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে শিল্প উন্নয়ন ও শিল্প স্থাপনের নামে দুর্নীতির শিকর কতটা গভীরে তা রাজ্যবাসীর হয়তো জানা নেই। ডান-বাম-রাম সব আমলেই দুর্নীতির ছবিটা প্রায় এক। বিগত বাম আমলে রাজ্যে শিল্প উন্নয়নের নামে সিকারিয়া মেগা ফুড পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি দশ নম্বরী সংস্থাকে এখানে ডেকে খানকে আনা হয়েছে। অভিযোগ এমনটাই। কেননা, বিভিন্ন মহলে কান পাতলেই ওই সংস্থাটি সম্পর্কে এমন সব অভিযোগ শোনা যায়, তাতে দশ নম্বরী করে বললেও কম বলা হবে। অভিযোগ, তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী তপন চক্রবর্তীর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল ওই সিকারিয়া । এখন সম্পর্কটা কেমন আছে তা অবশ্য জানা যায়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্প রূপায়ণের নামে কীভাবে অর্থ লুট করা করে যোগী যায় তা সিকারিয়ার কাছ থেকে শিখতে হবে। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের নাম ব্যবহার করে ত্রিপুরা রাজ্যেও শুধু লুঠ চালানো হয়েছে। রাজ্যের উন্নয়ন এবং রাজ্যবাসীর বিশ্বাসের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। বড় করে গেট বানিয়ে,সাইনবোর্ড লাগিয়ে তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের নাম ও “রাষ্ট্রীয় প্রতীক ‘অশোকস্তম্ভ’ ব্যবহার করা করে জনগণকে ঠকানো হয়েছে। এসবই হচ্ছে লোক দেখানো। আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। খবর নিয়ে জানা গেছে, শুধু খয়েরপুর তুলাকোণায় ত্রিপুরা মেগা ফুড পার্কই নয়, আরও নানাভাবে দুর্নীতি সংগঠিত করা হয়েছে।রাজ্যবাসীর সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এমন আরও কিছু তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। যেমন, তুলাকোণায় মেগা ফুড পার্কে বিভিন্ন করা হয় ফুড প্রসেসিং ইউনিটে (দশ বছরে একটিও গড়ে ওঠেনি) রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে উৎপাদিত ফল, সবজি সরবরাহ চালু রাখার জন্য পাঁচটি জায়গায় মিনি কোল্ড স্টোর করা হয়েছিলো, যার পোশাকি নাম প্রাইমারি প্রসেসিং সেন্টার। ওই পাঁচটি জায়গা হলো ধর্মনগর, সিধাই, মনুবাজার, সোনামুড়া এবং জোলাইবাড়ি। স্থানীয় জমির মালিক থেকে জমি লিজ নিয়ে সিকারিয়া গ্রুপ এই পাঁচটি মিনি কোল্ড স্টোর নির্মাণ করে। এগুলিও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের অধীন। প্রতিটি কোল্ড স্টোরেজের প্রজেক্ট কস্ট হচ্ছে ৯০ লক্ষ টাকা। এগুলি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য হলো, স্থানীয় এলাকার চাষিরা যাতে তাদের উৎপাদিত ফল এবং সবজি ওই কোল্ড স্টোরগুলিতে মজুত করতে পারেন। সেখান থেকে ফল ও সবজি তুলাকোণা ফুড প্রসেসিং ইউনিটে সরবরাহ হবে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই কোল্ড স্টোরগুলি ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু বিস্ময়ের ঘটনা হলো, আজ পর্যন্ত একটি কোল্ড স্টোরই কোনও কাজে আসেনি খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদতে এগুলি কোল্ড স্টোরেজই নয়। কোল্ড স্টোরেজের শুধু খাঁচাটাই নির্মাণ করা হয়েছে। ভিতরে এসসি থেকে শুরু করে অন্যান্য যাবতীয় পরিকাঠামো কিছুই গড়ে তোলা হয়নি । উদ্বোধনের পর আজ পর্যন্ত একটি গুদামও খোলেনি। এখানেই শেষ নয়, লিজ নেওয়ার সময় জমির মালিকদের প্রথম কিছু টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনও খোঁজ নেই। গত চার বছরে জমির মালিকরা লিজ রেন্টের কোনও অর্থই পাননি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, যে ঠিকাদাররা এগুলি নির্মাণ করেছেন তারাও কোনও বিল পাননি বলে অভিযোগ। রাজ্য শিল্প দপ্তর এবং ত্রিপুরা শিল্প নিগমের বেশ কয়েকজন সৎ আধিকারিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আসলে প্রকল্পের অর্থ লুঠ করার জন্যই লোক দেখানো অর্ধনির্মিত নামে কোল্ড স্টোরগুলি উদ্বোধন করা হয়েছে। এই হচ্ছে রাজ্যে তথাকথিত শিল্প উন্নয়নের নমুনা। আর সিকারিয়ার মতো সংস্থার সীমাহীন দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য সব আমলেই কিছু কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা, আধিকারিক, নেতা, মন্ত্রী থাকে। একদিকে দুর্নীতি চলতে থাকে, অপরদিকে ওইসব দুর্নীতিবাজদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়তে থাকে। এরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়। রাজ্যের উন্নয়ন, রাজ্যবাসীর উন্নয়ন হোক বা না হোক, ওইসব দুর্নীতিবাজদের উন্নতি ঠিকই হচ্ছে। তুলাকোণার ত্রিপুরা মেগা ফুড পার্ক এমনই এক দুর্নীতির সাক্ষী হয়ে থাকবে বলে রাজ্যবাসীর অভিমত। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো, সব জেনেও সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.