শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আজকের দিনে সকল বললে ভুল হবে না, জন্ম থেকে ৪-৫ বছর বয়স অবধি শিশুদের একটি সমস্যা হল কোষ্ঠকাঠিন্য। সপ্তাহে দু-একদিন তাদের পায়খানা হয়, আর যখন হয় পুরো বাড়িতে তার কান্নার শব্দ বাজতে থাকে। বাড়ির বাকি সদস্যরা কষ্ট অনুভব করেও শিশুটির কষ্ট লাঘব করতে নিরুপায় হয়। আর যদি অনেক কান্নাকাটি করে মলত্যাগ করেও থাকে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অতীব দুর্গন্ধযুক্ত হয়। সব কিছু ভাল দামি খাবার খাওয়ানো সত্ত্বেও কেন শিশুরা মলত্যাগের সমস্যায় ভোগে এই প্রশ্ন নিয়ে অভিভাবকেরা হতাশায় ভুগতে শুরু করে। তাই সব কিছু গোড়া থেকে জানলে মনে হয়, শিশুদের সমস্যা অনেকটাই লাঘব করতে পারবেন অভিভাবকরা কোষ্ঠকাঠিন্য কী ?
মাঝে মাঝে মলত্যাগ বা মল কী নির্গত হওয়া যা কয়েক সপ্তাহ তার বেশি সময় ধরে চলতে থাকে।সাধারণত সপ্তাহে তিন দিনের কম মলত্যাগ করলে তাকে সেই কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। হজমের ই চূড়ান্ত পর্যায়ে মলাশয় বা কোলনে অপাচ্য খাদ্য থেকে জল ধীরে তি ধীরে পুনরায় শোষিত হয় যতটুকু শরী গ্রহণযোগ্য জল থাকে। তাতে অপাচ্য খাদ্যগুলি মলের আকার নিয়ে থাকে। পরিপাক তন্ত্রের ছোট ছোট কর পেশির সংকোচনের মাধ্যমে মলকে কো ধাক্কা দিয়ে সামনে নিয়ে যাবার পদ্ধতিকে মেডিক্যাল ভাষায় বলা হয় যখন পেরিস্টলসিস। এখন একই প্রাকৃতিক দুধ উপায়ের মধ্যে যদি পরিপাক তন্ত্রে কো থাকা অপাচ্য খাদ্য থেকে অতিরিক্ত কার পরিমাণে জল শোষিত হয়, অপাচ্য সেই টি খাদ্যগুলি আরও শক্ত হয়ে যায় এবং পেশি সংকোচনেও সেই রকম ল সামনে এগোতে পারে না ফলে পেরিস্টলসিস ধীর গতিতে হয়, কিংবা আঁশযুক্ত খাবার কম গ্রহণ করার তাে ফলে খাদ্য থেকে একটু জল কো ই শোষিত হলেই পেট শক্ত হয়ে যায়। যার ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য। শিশুদের স্বাভাবিক মলত্যাগের পরিমাণ কতটুকু হওয়া দরকার ? তা নির্ভর করছে শিশুটি কী ধরনের খাদ্যগ্রহণ করছে তার ওপর। যেমন শিশু যদি শুধুমাত্র মাতৃ দুগ্ধ পান করে তাহলে ৫ থেকে ১২ বার। পরে যখন একটু বড় হবে যখন মাতৃ দুগ্ধের সঙ্গে অন্য খাবার গ্রহণ করা শুরু করবে তখন ১ থেকে ৫ বার। ৬ থেকে ১২ মাসের শিশু সাধারণত ১ থেকে ৩ বার মলত্যাগ করে। ১ বছরের উপরের শিশুরা যারা বড়দের মতো খাবার গ্রহণ শুরু করেছে তারা বড়দের মতো সাধারণত দিনে ১-২ বার কিংবা দুদিনে একবার মলত্যাগ করে থাকে। ছোট শিশুদের ডায়পারে দুর্গন্ধ যুক্ত বলের আকৃতির মতো মল যদি অনেকদিন ধরে হতে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রথম ইঙ্গিত। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ কী কী হতে পারে ? ৬ মাসের পর্যন্ত শিশু যারা শুধুমাত্র মায়ের দুধের ওপর নির্ভর করে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের পেছনে সেই দুধের গুণগত মান অনেক অংশে দায়ী। যা নির্ভর করে মায়ের শরীর এবং খাদ্যাভ্যাসের ওপর কারণ দুধের গুণগত মানের ওপর শিশুর শরীরের বিকাশ নির্ভর করে সবথেকে বেশি।
তাই মায়ের খাদ্যাভ্যাসের সামান্য পরিবর্তন দুধকে প্রভাবিত করতে পারে, ফলস্বরূপ শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য। আরেকটি কারণ হচ্ছে, শিশু যখন মায়ের দুধ থেকে প্যাকেটজাত দুধ খেতে শুরু করে, তখনও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। কারণ প্রথম প্রথম মায়ের দুধ থেকে সেই সব দুধ হজম করতে সময় লাগে, কারণ তাদের শরীরে প্রথমবার অন্যরকম খাবার হজম করছে যা মায়ের দুধের থেকে আলাদা। শিশুর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাবারে ফাইবারের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণের জন্য তরল খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ হোক বা শিশু। তাই শিশুরা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল বা তরলজাতীয় খাবার না খায়, তাহলে সে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। শিশুদের মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস না হলে শিশু তার ডায়পারেই মলত্যাগ করতে থাকে যাকে বলা হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষাই এনকোপ্রেসিস। কারণ তখন তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে মল আটকে রাখার চেষ্টা করে নিজেদের অজান্তেই। ফলস্বরূপ বেদনাদায়ক মলত্যাগ সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য। শিশুরা অতিরিক্ত ইমোশনাল হয়ে থাকে, সামান্য কিছুতেই ওরা অভিমান করে ফেলে। দিনের পর দিন এই অভিমান জমতে থাকার ফলে হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। যা বিপাক তন্ত্রের পেশির সংকোচন স্বাভাবিক থেকে কমে যায়। ফল স্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য। আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে শিশুরা মোবাইল, ও টিভিতে এতটাই বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে যে তা নিয়ে সারা রাত কাটিয়ে দিতে পারে না ঘুমিয়ে, আর ঘুম না হলেও মলত্যাগের সমস্যা তো হয়।শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের কী কী লক্ষণ হতে পারে ?সবার যে সব লক্ষণ এক হবে তার কোনও কথা নেই। মোটামুটি যেমন লক্ষণ সাধারণত দেখা যায় তা হল —(১) শিশুর পেট ফুলে যায়। ঘন ঘন বায়ু নিঃসরণ করে, সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়। তবু মলত্যাগ হয় না। আর যদিও অনেক কষ্টে বের হয় তা অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত হয়।(২) মল শক্ত, কালো বা কাদার মতো ছোট ছোট বলের মতো হলে মলদ্বার জ্বালা এবং চুলকাতে থাকে। কারণ শিশুরা ঠিক মতো তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না। আর অভিভাবকেরা অনেকেই তাতে কৃমি ভেবে নেয়।(৩) মলদ্বারে কালশিটে স্ফীত হয়ে জ্বালা পোড়া, শুষ্ক হয়ে যায়, মলত্যাগের সময় কাঁচা রক্ত বের হয়। অনেক সময় মলগুলি মলদ্বারে আটকে থাকে। তখন আলাদা শক্তি কাজে লাগিয়ে বের করতে হয়। (৪) সাদা সাদা শ্লেষ্মাযুক্ত, ছোট মার্বেলগুলির মতো তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা। যেসব শিশুরা কথা বলা শিখতে পারেনি, তারা কাঁদতে কাঁদতে তলপেটে হাত বোলাতে থাকে। (৫) অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়ার সঙ্গে পরিবর্তন করে, মাটির রঙের মতো শক্ত মলত্যাগ করে।শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যে ঘরোয়া উপায়ে কী কী করণীয়? প্রথম থেকে শিশুর খাদ্যাভাগের
ওপর নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাজারের দামি খাবার মানেই যে শিশু পুষ্টি পাবে তা একদম ঠিক নয়। শিশু যাতে সঠিক পরিমাণে ফাইবার জাতীয় খাবার সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল জাতীয় খাবার খেতে পারে সে বিষয়ে নজর দিতে হবে।ছোট শিশু কথা বলে অনুভূতি প্রকাশ ঠিক মতো করতে পারে না বলে, তাদের জিহ্বার স্বাদ বোধ নেই এটা ভেবে যদি বিনা স্বাদের যা খুশি খাবার দিলে শিশু খাবেই না। শিশুর স্বাদের রুচি বোধ মাথায় রেখে মাঝে মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনা দরকার। যাতে শিশুর একঘেয়েমি না লাগে।শিশু ১-১.৫ বছর হলেই তাদের জোর করেই একটি নির্দিষ্ট সময়ে মল, মূত্র ত্যাগের পদ্ধতি অভ্যাস করানো দরকার, ডায়পারের ওপর নির্ভর না করে।শিশুরা যাতে বাইরে ছোটাছুটি করতে পারে সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। কারণ তাতে তাদের বিপাক তন্ত্রে নড়াচড়া হবে। ছোটাছুটির ফলে খাবার হজম হয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রবণতা কমিয়ে দেয়।শিশু যদি শুধুমাত্র মায়ের দুধে আশ্রিত থাকে, তাহলে মাকে স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে। এমন কিছু খাবার গ্রহণ করতে পারবে না যাতে দুধের গুণগত মান কমে যায়।শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে হোমিওপ্যাথি :ওষুধ যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। শিশুদের ক্ষেত্রে তো আরও বেশি প্রযোজ্য। যতটা কম ওষুধে রোগ নিরাময় করা যায় সেটাই চেষ্টা। হোমিওপ্যাথি শিশুর মলের প্যাথোলজির ওপর ভিত্তি করে লক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচন করে ডাক্তারেরা। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যে যে সব সময় চিকিৎসা হবে এমন কথা নেই। ক্ষেত্ৰ বিশেষে যেমন শিশুরা জন্ম থেকে মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে দুধ পেতে পারে। বাস্তবে অনেক পিতা ও মাতাকে তাদের শিশুর যত্নের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যাদের পরিবারে লোক সংখ্যা কম তাদের এই সমস্যা কতটা একমাত্র তারাই অনুভব করতে পারে। তবুও যতটুকু সময় পাওয়া যায় ততটুকু শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো দরকার। তাতে শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সাহায্য করবে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

19 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago