শিশুরা বায়ুদূষণের শিকার।
দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের শহরাঞ্চলেও বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, গর্ভবতী মায়ের ফুসফুস ভরা দূষিত বায়ু রক্ত বাহিত হয়ে পৌঁছচ্ছে ভ্রুণে, আক্রান্ত হচ্ছে সদ্য গড়তে থাকা ফুসফুস। জানালেন উডল্যান্ডস সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের পালমোনলজিস্ট ডাঃ অরুপ হালদার।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের শহরাঞ্চলেও বায়ু দূষণ উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ছে। এর ফলে বাড়ছে হাঁপানি, সিওপিডি বা ব্রঙ্কাইটিসের মতো ফুসফুসের অসুখ। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ, জীবনের দুই মেরুর মানুষরা। শিশুরা ফুসফুসের অসুখ ছাড়াও ভাইরাল ইনফেকশান ও অ্যালার্জির শিকার হয়ে ওঠে। অন্যদিকে বৃদ্ধ বয়সে লাংস দিজিজ ছাড়াও বাড়ে ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগ। আবার জন্মের সময় মানব শিশুর ফুসফুসের গঠন সম্পূর্ণ হইয় না, বহু বছর ধরে চলতেই থাকে। কিন্তু দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে এসে এই বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় বাড়তেই থাকে। বর্তমানে ফুসফুসের ক্যানসার বেড়ে যাওয়ার এটি অন্যতম কারন।
ভারতবর্ষ এখন ফুসফুসের অসুখেরও রাজধানী হয়ে উঠেছে। সিওপিডিতে বিশ্বে আমাদের দেশের স্থান এখন প্রথম স্থানে আর এ অসুখে মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয়। আবার হাঁপানি বা অ্যাজমাতে আমরা দ্বিতীয় স্থানে কিন্তু আমাদের দেশেই এই অসুখে প্রতি বছর সবথেকে মানুষ মারা যান। আর সংখ্যাগুলি প্রত্যেক বছর বেড়েই চলেছে। ডাঃ হালদার জানালেন, এর অন্যতম প্রধান কারন বায়ুদূষণ।
দূষিত বাতাসের করাল গ্রাস থেকে বাঁচে না অনাগত সন্তানও। পৃথিবীর আলোতে এসে প্রথম শ্বাস নেওয়ার বহু আগে থেকেই সে এই দূষণে আক্রান্ত হয়। দূষিত বাতাস বহন করে ultrafine particular matter ও PM2.5 ধরনের ক্ষুদ্রতম কণা, যেগুলি হবু মায়ের নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে রক্তের ‘নদী নালা’ বেয়ে পৌঁছে যায় ভ্রুণের অন্দরে। পরিবর্তন করে বংশগত বৈশিষ্ট্যকে। রোপিত হয় ভবিষ্যতের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও বিভিন্ন মেটাবোলিক ডিসর্ডারের বীজ। আবার ফুসফুসের সঠিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার পরবর্তীকালে দেখা দিতে পারে হাঁপানি বা সিওপিডির মতো ফুসফুসের অসুখও। এইভাবেই লেখা হয়ে যায় এক অনাগত জাতকের রোগ ভাগ্য।
প্রিম্যাচিওর বার্থ বা সময়ের আগেই শিশুর জন্ম ও লো বার্থ ওয়েট বা জন্মের সময় অত্যন্ত অল্প ওজন সারা দুনিয়া জুড়েই চিকিৎসকদের কাছে এক বিরাট সমস্যা । এই দুই ক্ষেত্রেই শিশুদেরবিভিন্ন রোগভোগ ও মৃত্যুহার খুব বেশি হয় । ২০২০ সালের স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে , বায়ু দূষণ এই দুই সমস্যার অন্যতম কারণ । মুশকিল হল , বাতাস থেকে কাউকে দূরে রাখা যায় না , সুরক্ষিত রাখা যায় না হবু মাকেও । তাই দরকার দূষণ কমাতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক স্তরে সামগ্রিক পরিকল্পনা সচেতনতা প্রয়োজন ব্যক্তিগত স্তরেও । শীতকালে বাতাস ভারী হয়ে যাওয়ায় সকালে ও সন্ধ্যায় দূষণ বাড়ে । তাই এই সময়ে মর্নিং ওয়াক নৈব নৈব চ । শীতে হাঁটার সব থেকে ভাল সময় হল সকাল দশটা থেকে তিনটে । এই সময় সূর্যের আলো থেকে শরীরে ভিটামিন ডি সব থেকে বেশি তৈরি হয় । আবার সকালে স্কুল থাকে বলে ছোটদের বেরতেই হয় । এইসব ছোটরা অজান্তেই দূষণের শিকার হয়ে যায় । তাই শীতকালে শুধু ডে স্কুল হলেই ভাল । তাছাড়া ছোট থেকে বড় সকলকেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে । শুধু করোনা নয় , দূষণ রোধেও মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি।