শিশুর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি কেন হয়? কী করণীয়?

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শিশুদের প্রায়ই জ্বর হয়ে থাকে। শৈশবে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় যেকোনও রোগে শিশুরা সহজেই কাবু হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় শিশুর বেশি জ্বর হলে খিঁচুনি দেখা দেয়। সাধারণত ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সের শিশুদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। প্রচণ্ড জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনির সমস্যা হলে বেশিরভাগ অভিভাবকই ভয় পেয়ে যান। তবে অনেকেরই জানা নেই এই খিঁচুনি কয়েক মিনিটের মধ্যে এমনিতেই থেমে যায়। আর তেমন কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা হয় না। শিশুদের জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার নানা কারণ আছে। কিছু শিশুর ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা বাড়লে খিঁচুনি শুরু হয়। জেনে নেওয়া যাক; জ্বরে খিঁচুনি কেন হয়, হলে কী করবেন। সাধারণত ৩ মাস থেকে ৬ বছর বয়সি শিশুদের জ্বরের প্রথম দিন এই খিঁচুনি হতে পারে। টিকা দেওয়ার পর জ্বর হলেও এই খিঁচুনির সম্ভাবনা আছে। পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন অথবা নিকটাত্মীয় কারও জ্বরজনিত খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। শিশুর প্রথমবার জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে, পরে প্রতিবার জ্বর এলে খিঁচুনির ঝুঁকি থাকে।খিঁচুনি কেন হয়:-পরিবারে এ রকম ইতিহাস থাকলে, গর্ভকালীন জটিলতা, জন্মের সময় অতিমাত্রায় ওজনের স্বল্পতা, জন্মের পরই শিশুর শ্বাস নিতে দেরি হওয়া, কান্না করতে দেরি হলে, গর্ভকালীন সময়ে মাথার আঘাতজনিত কারণে, জন্মের পরই জন্ডিসের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার জন্যও এ রোগ হয়ে থাকে। আবার ছোটবেলায় কোনও কারণে মস্তিষ্কে ইনফেকশনের কারণে পরে খিঁচুনি হতে পারে। অনেক অজানা কারণেও খিঁচুনি হতে পারে।লক্ষণ কী:-হঠাৎ করে শিশুর হাত-পা বাঁকা হয়ে যেতে পারে, শিশু চোখ উল্টে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারে, দাঁতে দাঁত লেগে যেতে পারে, মুখ থেকে ফেনা আসতে পারে। সাধারণত জ্বর খিঁচুনিতে একবারই খিঁচুনি হয়।এই খিঁচুনি কয়েক মিনিট স্থায়ী হতে পারে। খিঁচুনির পর শিশু আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় অথবা ঘুমিয়ে যেতে পারে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ এতে ব্যাহত হয় না। করণীয় কী:-স্বাভাবিকভাবেই এ অবস্থায় ভীত-শঙ্কিত মা-বাবা ডাক্তারের জন্য ছোটাছুটি করেন। আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। ডাক্তার রোগীকে দেখার আগে পর্যন্ত মা-বাবার করণীয় হচ্ছে শিশুর জ্বর কমিয়ে আনা। জ্বর কমানোর জন্য গামছা বা তোয়ালে জলে ভিজিয়ে পুরো শরীর আলতো করে মুছে দিতে হবে।অনেকে এ সময় শিশুকে লেপ, কাঁথা দিয়ে চেপে ধরেন এবং ঘরের দরজা- জানলা বন্ধ করে দেন, যা অনুচিত। বরং ঘরের জানলা খুলে উন্মুক্ত বাতাস ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে হবে। খিঁচুনি অবস্থায় লেপ বা গরম কাপড় দিয়ে চেপে ধরলে শরীরের তাপ আরও বেড়ে যায় এবং তা থেকে খিঁচুনি আরও বেড়ে যেতে পারে। জ্বর কমানোর জন্য ঘরে ফ্যান থাকলে তা চালিয়ে দিতে হবে।
শিশুর গায়ে আঁটসাঁট পোশাক থাকলে তা খুলে দিতে হবে। এ সময় শিশুকে কাত করে শুইয়ে দিন, যেন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না খিঁচুনি বন্ধ হচ্ছে ততক্ষণ একইভাবে কাত করে শুইয়ে রাখুন। এই ক্ষেত্রে অনেকেই ভয় পেয়ে শিশু মাথায় জল ঢেলে দেয়। ভাবে তাতেই খিঁচুনি ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এই ধারণা একদমই ভুল। এই কাজটি ভুলেও কোরবেন না।এই অবস্থায় শিশুর মুখে খাবার, জল বা ওষুধ দেওয়া যাবে না। শিশুর দুই দাঁতের পাটির মাঝখানে আঙুল, চামচ বা অন্য কোনও বস্তু দেবেন না। খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী থাকে, সেটা লক্ষ্য করুন। সম্ভব হলে খিঁচুনির ভিডিও করে রাখুন, যা পরে শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে।কখন হাসপাতালে ভর্তি করবেন :-খিঁচুনি বেশিক্ষণ স্থায়ী হলে অথবা একই দিনে বারবার হলে অথবা শিশুর প্রথম জ্বরজনিত খিঁচুনি হলে অতিদ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। খিঁচুনি ১০ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে, শিশু নীল হয়ে গেলে, খিঁচুনির সঙ্গে বমি হতে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে, ছয় বছর বয়সের পরও খিঁচুনি না কমলে এবং খিঁচুনির পর শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্ষেত্রবিশেষে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে পিঠ থেকে রস (সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড) নিয়ে পরীক্ষা করতে হতে পারে।প্রতিকার কী:-যেসব শিশুর জ্বরজনিত খিঁচুনির ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে জ্বর হলেই দ্রুত তাপমাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। শরীর স্পঞ্জ করার পাশাপাশি প্যারাসিটামল সিরাপ বয়স এবং ওজন অনুযায়ী দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়াতে হবে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, এতে জ্বরজনিত খিঁচুনির প্রভাব ৮০ শতাংশ কমে আসে। মনে রাখবেন, শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে জ্বরজনিত খিঁচুনি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শিশুর কোনও স্বাস্থ্য সমস্যাও হয় না। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বাচ্চার অসুস্থতার কারণ নির্দিষ্ট করা না গেলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার পরামর্শ দেয় চিকিৎসক। কোনও সংক্রমণ খুঁজে পাওয়া গেলে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে। বাচ্চার বয়স যদি ১২ মাসের কম হয় সেই ক্ষেত্রে হাসপাতালে রেখে
সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এই রোগে আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে প্যারাসিটামল সিরাপ এবং খিঁচুনি বন্ধের জন্য চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র রাখতে হবে।
ভবিষ্যতে মৃগীরোগ হওয়ার ঝুঁকি:- ফেব্রাইল কনভালশন থেকে মস্তিষ্কের সাধারণত ক্ষতি হয় না। পরবর্তী সময়ে এপিলেপসি বা মৃগীরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একদমই কম।তবে কিছু বিষয় খেয়াল করতে হবে অভিভাবকদের।সেই বিষয়গুলি হল— শিশুর যদি স্নায়ুর বিকাশজনিত সমস্যা থাকে, পরিবারে কারও মৃগী রোগ থাকে, জ্বরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিকবার অথবা একবারে ১৫ মিনিটের বেশি খিঁচুনি হয়, হাত-পায়ের বদলে যেকোনও এক পাশে খিঁচুনি হতে থাকে, তাহলে এই শিশুরা পরবর্তী সময়ে এপিলেপসিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুর জ্বর কমিয়ে ফেব্রাইল কনভালশন নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই সম্ভব। তবে ৬ বছরের বেশি বয়সিদের জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে অবশ্যই শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। সবার শেষে একটাই কথা মনে রাখতে হবে, এই ভীত-শঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক ব্যবস্থা নেবেন।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্রমোদীর অফিসে রাহুল গান্ধি, সঙ্গে মজুত ছিলেন দেশের প্রধান বিচারপতিও!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-নতুন সিবিআই কর্তা নিয়োগ করতে হবে আর সেই উদ্দ্যেশ্যেই লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল…

4 hours ago

ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী পবনদীপ,অবস্থা আশঙ্কাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে ইন্ডিয়ান আইডল জয়ী সিজন ১২ এর পবনদীপ রাজন ৷ উত্তর…

10 hours ago

শবরীমালা মন্দির পরিদর্শনে দ্রৌপদী মুর্মু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আগামী ১৮ মে দু'দিনের জন্য কেরল সফরে যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ৷ সেই…

12 hours ago

মহাকালেশ্বর মন্দিরে বীভৎস আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-উজ্জ্বয়ন মহাকালেশ্বর মন্দিরে বিভীষিকাময় আগুন। মন্দিরের উপর থেকে গলগল করে নির্গত হচ্ছে কালো…

13 hours ago

হত্যা মামলায় ‘গ্রেপ্তার’ বাংলাদেশে জেলবন্দি চিন্ময় প্রভু!

অনলাইন প্রতিনিধি :-জেলবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ওরফে চিন্ময় প্রভুকে নতুন করে আবার হত্যা…

13 hours ago

নিখোঁজ হয়ে ছিলেন কুড়ি বছরে বাড়ি ফিরে এলেন ৬৩ বছর পর!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্য থেকে প্রায় ৬৩ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন অড্রে ব্যাকেবার্গ নামে…

13 hours ago