শিশুর রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া!!

 শিশুর রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-শিশু যদি অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে বা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয় বা পড়া করলেও তা ঠিক মতো মনে রাখতে না পারলে উপসর্গগুলো অ্যানিমিয়ার লক্ষণ হতে পারে। ভারতে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া একটি জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা।ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২০১৫-২০১৬’ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভারতে ১৫টি রাজ্যের মধ্যে ১০টি রাজ্যের ৫০ শতাংশ শিশু রক্তাল্পতার শিকার।
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা কী?
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা বলতে বোঝায়,রক্তে লোহিত কণিকার মধ্যে থাকা হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা কমে যাওয়াকে।এই লোহিত কণিকার প্রধান কাজ হল ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে দেহের প্রতিটি কোষে তা সরবরাহ করা।লোহিত কণিকার মধ্যে থাকা হিমোগ্লোবিন সেই কাজটি করে থাকে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় বলতে গেলে অ্যানিমিয়া হল, অন্যান্য অনেক রোগের পূর্বলক্ষণ।রক্তাল্পতার শিকার হলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যেমন কমে,তেমনই লোহিত কণিকা আয়তনে অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়।
কারণ:- প্রতিদিন খাবারে যদি যথেষ্ট পরিমাণে আয়রন অর্থাৎ লৌহ না থাকে, তার থেকেও বাচ্চার দেহে রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি ও প্রোটিন রোজকার খাবারে না থাকে তার থেকেও অ্যানিমিয়া হতে পারে।গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে আয়রনের অভাব থাকলে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর দেহে আয়রনের ঘাটতি হতে পারে ফলে শিশুর অ্যানিমিয়ার আকাঙ্ক্ষা খানিকটা বেড়ে যায়।
কোনও দুর্ঘটনার কারণে যদি শিশুর প্রচুর রক্তপাত হয় তা হলেও রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে।শিশু যদি ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয় কিংবা কৃমি থাকে তা হলে আয়রনযুক্ত খাবার খেলেও তা দেহে শোষিত হয় না।ফলে অ্যানিমিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি-১২ এর মাত্রা কম থাকলেও শিশু অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ভারতবর্ষে প্রধানত শিশুদের মধ্যে যে ধরনের অ্যানিমিয়া দেখা যায় তাকে বলা হয় আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া বা আইডিএ।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা:-WHO-এর মতে, ৫ মাস থেকে ৫ বছরের শিশুর দেহে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা হওয়া উচিত ১১ গ্রাম/ডেসিলিটার।যা ৭-এর নিচে হলে অ্যানিমিয়া বলে ধরা হবে।৫ থেকে ১১ বছর বয়সের শিশুর স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের হওয়া উচিত ১১.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার। তা যদি ৮-এর নিচে হয় তা হলে বাচ্চা রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে শরীরে ১২ গ্রাম/ডেসিলিটার হিমোগ্লোবিন থাকা দরকার। যদি তা ৮-এর নিচে হয় তাহলে বাচ্চা অ্যানিমিক বলে ধরা হয়।
উপসর্গ:-শিশু রক্তাল্পতার শিকার কিনা তা বোঝার কয়েকটি লক্ষণ হল- শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।পড়াশোনায় মনোসংযোগ কমে যাওয়া। প্রায়ই সর্দি-কাশি জ্বরে ভোগা।এনার্জির অভাব।
ভুলে যাওয়ার প্রবণতা।কাজকর্মে উৎসাহ না থাকা। এর সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব, ঠোঁট, জিভ, চোখের ভিতর ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া অ্যানিমিয়ার লক্ষণ।
খাওয়া-দাওয়া:-৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য কোনও খাবার দেওয়া যাবে না।৬ মাসের পর শিশুকে আয়রন সমৃদ্ধ পরিপূরক আহার (যেমন- ছাতু, রাগি, জোয়ার, শাকপাতা এবং ৮-৯ মাস বয়স থেকে অল্প করে এবং ১ বছরের পর থেকে শিশুকে মাছ, মাংস, মেটে) খাওয়াতে হবে,যাতে শরীরে আয়রনের অভাব না হয়। ছোলা-মুগ, বাদাম, খেজুর, কিশমিশ, চিঁড়ে, গুড় প্রভৃতি আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
চিকিৎসা:-হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা।লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.