শীতের পরিপূর্ণ রূপচর্চা

 শীতের পরিপূর্ণ রূপচর্চা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শীতকালে ত্বক একটু অদ্ভুত আচরণ করে, ত্বকে মিশ্র একটা ভাব দেখা দিতে পারে। মুখের টি-জোন অর্থাৎ নাক-কপালের অংশ ছাড়া বাকি জায়গা শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। তাই ত্বকের ধরন বুঝে নিতে হবে বাড়তি যত্ন। যদি ত্বকে মিশ্র ভাব দেখা দেয় তবে সাধারণত যে ফেসওয়াশ গরমকালে ব্যবহার করেছেন সেটাই রাখুন। তবে তা শুধু টি-জোনটুকুর জন্যই। বাকি শুষ্ক জায়গায় সাধারণ ফেসওয়াশ বা ফোমিং ক্লিনজার দিয়ে ধোবেন।

একটু বেশি শুষ্কতা দেখা দিলে ক্রিম ক্লিনজার, ক্লিনজিং মিল্ক অথবা গ্লিসারিন বার
ব্যবহার করুন। প্রতিদিন বাইরে বের হওয়ার আগে ক্লিনজিং ওয়াইপস বা ওয়েট টিস্যু সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনে দরকার মতো মুখ মুছে নেবেন। এ সময় ত্বক অনেকাংশেই উজ্জ্বলতা
হারিয়ে ফেলে। প্রতিদিন মাইল্ড স্ক্রাব ব্যবহার করতে ভুলবেন না। তৈলাক্ত ত্বকে জেল বা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ত্বকের
প্রয়োজনীয়তা বুঝে নিতে হবে। শুষ্ক ত্বকের ক্ষেত্রে ভারী ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া রোদ থাকে, এ কারণে সানস্ক্রিন লোশন অবশ্যই ব্যবহার করতে ভুলবেন না।

কমপক্ষে ৫০প্লাস এসপিএফ আছে এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। ৩/৪ ঘণ্টা পরপর মুখ মুছে নিয়ে নতুন করে লাগাতে হবে। কারণ, সানস্ক্রিন ৩/৪ ঘণ্টার বেশি ত্বকে কাজ করে না। যদি মেকআপ করেন তবে অবশ্যই তা ভালভাবে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না। মেকআপ তুলতে বেবি অয়েল বা মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করুন এবং শেষে হালকা গরম জলে ও ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভাল কোনও নাইট ক্রিম অথবা এর বদলে আমন্ড অয়েল লাগাতে পারেন। আমন্ড অয়েল ত্বক ময়েশ্চারাইজ যেমন করবে সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো, বয়সের ভাঁজ কমানো, ব্রণ অথবা দাগ দূর করতেও সাহায্য করবে।

কলা পেস্ট করে লাগালে শুষ্ক ত্বকে প্রাণবন্ত ভাব ফিরে আসবে। মধুও শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব উপকারী। টমেটোর রসের সঙ্গে একটু মধু পেস্ট করে নিন। অনেক ভাল ফল পাবেন।
তৈলাক্ত ত্বকে শশার রস দারুণ কাজ করবে। শশার রসের সঙ্গে মুলতানি মাটি ও চন্দনের
গুঁড়ো মিশিয়ে লাগান। এতে যেমন তেলতেলে ভাব কমবে সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতাও ফিরে আসবে। পেঁপে পেস্ট করে ১০-১৫ মিনিটের জন্য মুখে দিয়ে রাখুন। ত্বকের পোড়া ভাব দূর করবে। গাজর পেস্ট করে ১০ মিনিটের জন্য লাগালে উপকার পাবেন। চন্দন পেস্ট করে লাগান। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ধুয়ে
নিন। সাধারণ থেকে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দুধের ক্রিম অথবা দই-এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপের জল মেশান।

মুখ হালকা গরম দিয়ে ধুয়ে মাস্কটি লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন, হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাবেন। কলা পেস্ট করে মধু মিশিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। পরে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নারকেল তেল কিন্তু ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফেরাতে চমৎকার কাজ দেয়। মুখে নারকেল তেল লাগান। সুতির রুমাল হালকা গরম জলে ভিজিয়ে ভাল মতো নিংড়ে নিন। মুখের ওপর দিয়ে রাখুন কিছুক্ষণের জন্য। মুখটা মুছে নিয়ে গোলাপ জল লাগিয়ে নিন। ডিমের ফেস প্যাক আমরা কম বেশি সকলেই জানি। ত্বক ফর্সা করতে ডিমের কোনও বিকল্প নেই। একটি বাটিতে ডিম নিয়ে সেটিকে ফাটিয়ে ভালভাবে কুসুম আর সাদা অংশ মিশিয়ে নিন।

এরপরে সেই মিশ্রণটি ভালভাবে মুখে লাগিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে মুখ ভালভাবে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের যত্নে গোলাপ জল দারুণ কাজ করে। গোলাপ জল আমাদের ত্বক পরিষ্কার করে। গোলাপের পাঁপড়ি জলে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিয়ে পরের দিন সকালে সেই জল গোলাপ জল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে
রেডিমেট গোলাপ জল পাওয়া যায়। গাজরের খোসা ছাড়িয়ে নিন। তারপর বেটে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে কোথাও বলিরেখা বা সূক্ষ্ম রেখা থাকলে তার ওপরে লাগান। বলিভাব দূর করে ত্বকে তারুণ্য ফেরাতে কাজে দেবে।

এটি ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে। করলা কাটার পর ছোট টুকরা বা বোঁটার নিচের অংশ ফেলে না দিয়ে রেখে দিন। খোসায় থাকা রসটুকু মুখে মাখতে পারেন। মুখের কালো ছোপ ছোপ দাগ ও ব্রণের দাগ দূর হবে। যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা মুখে আলুর খোসা ঘষুণ। ব্রণ কমে যাবে। আলুর খোসায় থাকা ভিটামিন ‘সি’ খুব তাড়াতাড়ি ব্রণ শুকিয়ে দেয়। এছাড়া মুখের বিভিন্ন দাগ দূর করতে আলুর খোসা বেটে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। উপকার পাবেন। শীতকালে ত্বককে ময়শ্চারাইজড রাখা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় থাকে।

নারকেল তেল, ক্যাস্টর তেল, অলিভ তেল, দইয়ের ঘোল ও শশা প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করলে সুফল মেলে। সাধারণত শীতকালে আমরা প্রত্যেকেই কম পরিমাণে জল পান করি। শরীরে জলের ঘাটতির কারণেও ত্বক শুকনো ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। লক্ষ্য রাখবেন, শীতে যাতে
শরীরে যথেষ্ট জলের অভাব না হয়। জলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য অল্প গরম জল পান অভ্যাস করলে সুফল পাবেন। শীতকালে গরম জলে স্নান করলে ভীষণ স্বস্তি লাগে। তবে মুখের ত্বকে হালকা গরম জল ব্যবহার করবেন। বেশি গরম জল মুখের ত্বকের ক্ষতি করে। একই ভাবে স্নানের সময়ও বেশি গরম জল একদম ব্যবহার করবেন না।

প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ময়শ্চরাইজার দিয়ে মুখের ত্বক মালিশ করতে ভুলবেন না। এর ফলে ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হবে। মুখের ত্বকের যত্ন নিলেও অনেকে হাতের যত্নের কথা ভুলে যায়। কিন্তু শীতকালে মুখের পাশাপাশি হাতের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাই এসময় নিয়মিত হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন। বিশেষ করে কাপড় ধোয়ার পর, বডি লোশন বা ময়েশ্চারজার ব্যবহার করবেন অথবা থালা বাসন ধোয়ার পর অব্যশই হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন।

হাতের পাশাপাশি পায়েরও যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। শীতকালে পায়ে মোজা পরে থাকতে হয়। আগে পা ভাল করে পরিষ্কার করে পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন দিয়ে পায়ের তালু ম্যাসাজ করুন।
সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করতে পারেন। পা ফাটা রোধে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।এক্ষেত্রে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। পা ফাটার সমস্যা থাকলে সেটা
অনেকটাই কমে যাবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.