শুক্রবার দু’দিনের ভারত সফরে আসছেন হাসিনা, হবে ১৪ চুক্তি!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার বিকেলে দিল্লী যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা দিল্লী যাচ্ছেন।এক পক্ষকালের মধ্যে এটা শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ভারত সফর। এর আগে গত ৯ জুন নরেন্দ্র মোদি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে দিল্লী গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার এবারের দিল্লী সফরকালে ভারতের সঙ্গে ১৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে।এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলো।এরমধ্যে অন্তত চারটি চুক্তির মেয়াদ শেষে নবায়ন হওয়ার কথা।
এসব চুক্তি ও এমওইউ জ্বালানি, সংযুক্তি, অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কিত।ইতিমধ্যে এসব বিষয়ে দুই দেশের কর্মকর্তারা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।তবে দুই দেশের চলমান সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়া এবং সহযোগিতার নতুন মাত্রা যোগ করাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের দিল্লী সফর মূল লক্ষ্য বলে দুই দেশই মনে করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার এবারের দিল্লী সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে আন্তঃসীমান্ত সংযোগ উদ্যোগ, তিস্তা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ,মোংলা বন্দরের ব্যবস্থাপনা এবং বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়। এছাড়া তিস্তা নদীর জল চুক্তি ও একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও হাসিনা- মোদি শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।ভারত প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। কিছুদিন আগে ভারত- বাংলাদেশের তিস্তা নদী উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।ভারত থেকে বাংলাদেশ যে ঋণ সহায়তা পাচ্ছে তার বাস্তবায়ন আরও দ্রুত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে দুই দেশ।এসব বিষয়েও শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এবারের দিল্লী সফর একাধিক কারণে দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।প্রথমত; ভারতে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর শেখ হাসিনাই প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে ভারতে দ্বিপাক্ষিক সফরে যাচ্ছেন।দ্বিতীয়ত; গত জানুয়ারী মাসে নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার এটাই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফর।এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ পরিস্থিতিতে ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামাজিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তাও অনেক বেশি অনুভূত হচ্ছে।ভারত ও বাংলাদেশে গত কিছুদিনে নতুনভাবে সরকার গঠন করেছেন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা।তাদের মধ্যে ইতিবাচক বোঝাপড়া এ অঞ্চলের অনেক সমস্যার যথার্থ সমাধান খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকা থেকে বিশেষ বিমানে বিকাল ৪টায় দিল্লী পৌঁছবেন শেখ হাসিনা। দিল্লী পৌঁছেই কর্মসূচিতে ব্যস্ত সময় কাটাবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় তার আবাসস্থল দিল্লীর হোটেল তাজ প্যালেসে শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। শনিবার সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হবে।সেখান থেকে শেখ হাসিনা রাজঘাটে গিয়ে ভারতীয় জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানাবেন। রাজঘাট থেকে ফিরে হায়দ্রাবাদ হাউসে মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।এ সময় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে।বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষরের পর যৌথ বিবৃতি দেবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। দুপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন তারা।
শনিবার বিকেলে সচিবালয়ে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও সোজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।শেখ হাসিনা শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় নয়াদিল্লীর পালাম বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে রাত ৯টায় ঢাকায় ফিরবেন।