শুল্কযুদ্ধের গতিপথ!!

 শুল্কযুদ্ধের গতিপথ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দরকষাকষির টেবিলে শুল্ক আরোপ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।কারণ এর সঠিক মাত্রায় ব্যবহারে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে যেমন বাড়তি সুবিধা আদায় করা যায়,তেমনি কূটনৈতিক নীতিমালা বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার হিসাবেও পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে কাজে লাগানো যায়।আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী জানুয়ারীতে দেশের ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেওয়ার পর প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকরি করতে চলেছেন তা হল মেক্সিকো,কানাডা ও চিন থেকে আমদানি হয়ে আসা পণ্যের উপর বড় মাত্রায় শুল্ক আরোপের ঘোষণা। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণা তথা বাণিজ্যকৌশল মূলত কোন্ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোচ্ছে সেটাই এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
মাত্র দুদিন আগেই ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছিলেন,আগামী ২০ জানুয়ারী ক্ষমতা গ্রহণ করেই মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি হয়ে আসা সমস্ত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ হারে তিনি শুল্ক আরোপ করবেন এবং চিনের পণ্যের উপর বর্তমানে যে হারে শুল্ক চালু রয়েছে, তার উপর অতিরিক্ত আরও ১০ শতাংশ হারে বাড়তি শুল্ক যোগ করবেন।তিনি অবশ্য বলেছেন,অবৈধ অভিবাসন এবং মাদকের অবাধ চোরাকারবার ঠেকাতেই তিনি এই উদ্যোগ নিচ্ছেন।ট্রাম্পের এই চিরাচরিত কৌশলকে অবশ্য কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ‘আগে হুমকি পরে আলোচনা’ এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখার চেষ্টা করছেন।কেননা, ডোনাল্ড ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি পদে তার প্রথম মেয়াদের কার্যকালের সময়েও চিন, কানাডা এবং মেক্সিকো সহ ইউরোপের দেশগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসী বাণিজ্যকৌশল অবলম্বন করেছিলেন।সেই সময় অবশ্য এই শুল্ক আরোপের পেছনে কারণ হিসাবে ট্রাম্প এই দেশগুলোর তরফে অন্যায্য বাণিজ্য প্রক্রিয়া, মেধাসত্ত্ব চুরি এবং দুই দেশের মধ্যেকার বিশাল বাণিজ্য ঘাটতিকে দায়ী করেছিলেন। যদিও সেই সময়ে ট্রাম্পের পাল্টা হিসাবে এই দেশগুলিও মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিল।প্রশ্ন হচ্ছে,এই ধরনের শুল্ক আরোপের কৌশলের ফলে তা বিশ্ব অর্থনীতির উপর কতটা প্রভাব ফেলবে কিংবা বিশ্ব রাজনীতির উপর কতটাইবা আগ্রাসী পরিস্থিতি তৈরি হবে- সেটাই এই মুহূর্তের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়। ট্রাম্পের এই ঘোষণা যদিও ভারতের জন্য স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে।কারণ এই তালিকায় একদিকে যেমন ভারতের নামোল্লেখ নেই, পাশাপাশি চিন এবং কানাডার মতো ভারতের বৈরীসুলভ দেশগুলি ট্রাম্পের হুমকির মুখে পড়েছে।যদিও ট্রাম্পের এই বাণিজ্যহুমকির জবাবে চিন বলেছে,এই বাণিজ্য যুদ্ধে কারোরই লাভ হবে না।শুধু তাই নয়,মার্কিন দেশের চিনা দূতাবাস থেকে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়েছে যে, দুই দেশের এই বাণিজ্যযুদ্ধে কারও জয়ও আসবে না।অন্যদিকে এই হুমকির পর সুর নরম করতে দেখা গেছে মেক্সিকোকে। কানাডা অবশ্য এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেনি।তবে একটি কথা এখানে বলে রাখা প্রাসঙ্গিক যে, মার্কিন দেশে সদ্য অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রচারণায় যে বিষয়টি উপর বারবার জোর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তা হল, বিশ্ব রাজনীতিতে আমেরিকার অগ্রগমন ও প্রাধান্যই হবে শেষ কথা।স্বাভাবিক কারণেই হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের প্রত্যাবর্তনের পর পরই বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে এই বড়সড় ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চলেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।অর্থাৎ বৈশ্বিক কৌশলগত এবং ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কে নতুন সমীকরণের দরজা ট্রাম্প খুলে দিতে চলেছেন- তার এই ঘোষণার পরই সেটা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে।ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির কারণে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের তিক্ততা যে বাড়বে এবং সেই জটিলতা বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তাল করে তুলতে পারে সেটার আভাসই কার্যত ট্রাম্পের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হতে চলেছে।বরাবরই ট্রাম্পকে তার নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান, জাতীয়তাবাদী নীতি এবং একগুঁয়েমি কাজকর্মের জন্য চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। সেই দিক থেকে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট ভাউসে প্রবেশ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও। গুরুত্বপূর্ণ একটা মোড়ের সূচনা করতে চলেছে লা যায়। তাই তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি পদক্ষেপ তাঁর নেতৃত্বের তিপথের দিকে গোটা বিশ্ব এখন গভীর বিশ্লেষণী নজর নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাই ট্রাম্পের এই শুল্কযুদ্ধ আগামীদিনে বিশ্বে স্থিতিশীলতা আনবে, নাকি নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দেবে- সেটা য়তো আগামী দিন বলবে। কিন্তু নতুন অধ্যায়ের দিকে যে গোটা ত্রিশ্ব এগিয়ে চলেছে তার ইঙ্গিত কিন্তু মিলতে শুরু করেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.