শূন্য কলস!!

 শূন্য কলস!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শূন্য কলসি বাজে বেশি,আশৈশব এই বাক্যটি পাঠ্যে পড়ে বেড়ে উঠেছি আমরা সকলে।এখন পাক ফৌজির হম্বি এবং তম্বির স্বরূপটি দেখলৈ শূন্য কলসের রূপকই ধরা পড়ে।এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে,এই মুহূর্তে ভারতের সঙ্গে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানের অস্ত্রাগারের যা রসদ, তা দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন ছিয়ানবুই ঘন্টার বেশিযুদ্ধ চালানো সম্ভব নয়। পাক গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে এম ১০৯ হাউইৎজার কামানে ব্যবহৃত ১৫৫ মিলিমিটার গোলা নেই। সমধিক সংকট রাশিয়ার তৈরি বিএম ২১ গ্রাড সিস্টেমের জন্য ১২২ মিলিমিটার রকেটের ভাঁড়ার।
পাকিস্তানও পরমাণবিক শক্তিধর দেশ। সামরিক শক্তির সামগ্রিক বিচারে ভারতের চেয়ে পাকিস্তান পিছিয়ে ঠিকই, তবে এই মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু হলে তাদের পক্ষে চার দিনের বেশি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তার প্রধান কারণ পাক ফৌজে গোলাবারুদের সংকট। এই সংকট সৃষ্টির কারণ দ্বিবিধ। প্রথমত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে বিপুল সংখ্যায় হাতিয়ার ও গোলাবারুদ সরবরাহ, দ্বিতীয়ত ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে অস্ত্রের জোগান দেওয়া। নিজেদের অস্ত্রাগারে তৈরির অস্ত্রের পাশাপাশি পাক ফৌজকে অস্ত্রের জোগান দেয় মূলত তুরস্ক আর চিন, কিয়দংশে আমেরিকা। ইতিমধ্যেই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধের প্রশ্নে ইসলামাবাদকে মিশ্র বার্তা দিয়েছে বেজিং ও ওয়াশিংটন, আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা নিরসনের পরামর্শ দিয়েছে।
পহেলগাঁওয়ে ইলামিক জঙ্গিদের কাপুরুষোচিত নাশকতার পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশে ‘অকল্পনীয় শাস্তি’র বার্তা দেন। এর পরেই ভারতীয় সেনা প্রত্যাঘাত করতে পারে ধরে নিয়ে বিবিধ কায়দা ও বাগধারায় নয়াদিল্লীর বিরুদ্ধে প্রতি-আক্রমণের হুংকার দিয়ে চলেছেন সেদেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান, এমনকি রেলমন্ত্রীও। যুযুধান প্রতিবেশী দেশটি থেকে রীতিমতো ভারতের নাম করে এই হুংকার বর্ষিত হয়ে চলেছে। সেখানে লক্ষণীয়ভাবে ভারতের তরফে এখনও সরাসরি পাকিস্তানের নাম করে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে পহেলগাঁও কাণ্ডের সন্ত্রাসবাদী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ মানে শুধু গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রক্তপাত নয়। বিনা রক্তে, বিনা অগ্নিসংযোগেও নানাবিধ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপে যেভাবে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়, সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতির পাশাপাশি পহেলগাঁও কাণ্ডের পর গত এক পক্ষকাল ধরে নয়াদিল্লী অনুরূপ পথেই এগিয়ে চলেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেওয়া হয়েছে। আকাশ এবং জলপথে সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ইইউ-এর দেওয়া বাণিজ্যে ‘বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের’ তালিকা থেকে পাকিস্তানকে সরানো, আফগানিস্তান থেকে মাদক আমদানি বন্ধ করিয়ে সেদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভাঙা, পাক মদতপ্রাপ্ত হক্কানিদের কাবুলে একঘরে করে ফেলা, হাজারা-আহমেদিয়ার মতো বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযোগ রেখে ইসলামাবাদকে দুর্বল করা সমেত উপর্যুপর পদক্ষেপ করেই চলেছে নয়াদিল্লী। আর এ সবই ভারত করছে হঠকারিতায় নয়, বরং ক্রমপর্যায়ে, সময় ও সুযোগ বুঝে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির সঙ্গে সংযোগ রেখে।
ভারত সরকারের আচরণে স্পষ্ট, সন্ত্রাসবাদ ধ্বংস করতে হলে মদতকারীদের অর্থনীতি গুঁড়িয়ে দেওয়াটাই অগ্রাধিকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রাভান্ডারের আগামী বৈঠকে পাকিস্তান যাতে নির্ধারিত অর্থসাহায্য না পায়, তার জন্য কথাবার্তা শুরু করেছে মোদি সরকার। এহ বাহ্য, পহেলগাঁও কাণ্ডকে তুলে ধরে সন্ত্রাসবাদীদের পুঁজি সরবরাহের উপর নজরদারি সংস্থা এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় ইসলামাবাদকে ফেরত পাঠানোর জন্য সক্রিয়তাও পুরোদস্তুর শুরু করেছে ভারত। আশার কথা, ২৬৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত পাক-আফগান সীমান্ত বা ডুরান্ড লাইনে তালিবানদের সঙ্গে অধুনা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত পাকিস্তান। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পহেলগাঁও কাণ্ডের পরেই তালিবানদের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে কাবুলের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির কাজ শুরু করেছে সাউথ ব্লক।
এতদসত্ত্বেও, মুখেন মারিতং পাকিস্তানের প্রথম সারির নেতারা নিজেদের অস্ত্র বহরের ছবি প্রকাশ করে ভারতকে ‘ভয়’ দেখানোর নিষ্ফল প্রয়াস জারি রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা আর্থিক দুরবস্থা। ইসলামাবাদের মাথায় ঝুলছে ৯,২৪২ কোটি ডলারের ঋণ, সেখানে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতের দেনার অঙ্ক ১.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা। ইসলামাবাদের বৈদেশিক মুদ্রাকোষও ক্রয়ক্ষীয়মাণ। পাক সরকারের কোষাগারে রয়েছে ১,৩৭৩ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রা। সেখানে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে থাকা বিদেশি মুদ্রার পরিমাণ প্রায় ৬৩ হাজার কোটি ডলার।বিদেশি মুদ্রার নিরিখে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে ভারত, আর পাকিস্তানের স্থান একাত্তর নম্বরে।সুতরাং, বাস্তবের এ-হেন রুক্ষ জমিতে দাঁড়িয়ে পাক ফৌজের মুখনিঃসৃত যুদ্ধ-হুংকার আদতে শূন্য কলসের উপমাটি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.