শৃঙ্গারের জন্য বন্ধ রইল পুরীর মন্দিরের দরজা

 শৃঙ্গারের জন্য বন্ধ রইল পুরীর মন্দিরের দরজা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চার ঘণ্টার জন্য বন্ধ রইল পুরীর জগন্নাথ মন্দির । একটি বিশেষ প্রথার জন্য বুধবার এই মন্দির বন্ধ রাখা হল বলে জানিয়েছে শ্রী জগন্নাথ মন্দির কমিটি । ফলে বুধবার বিকেল ৪ টে থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত মন্দিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল । মন্দির সূত্রে জানা গিয়েছে, ওডিশার এই গিয়েছে , ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দিরে বুধবার গোটা দিন ধরে চলেছে ‘ বানাকা লাগি ‘ আচার অনুষ্ঠান । এই আচার অনিযায়ী , নয়া অবয়বে ফুটে উঠবে জগন্নাথ মন্দির । মূলত রথযাত্রার আগে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয় মন্দির । এই সাজানোর কাজ করেন উচ্চবর্ণের সেবায়েতরা । তাদের বলা হয় ‘ দত্ত মহাপাত্র ‘ । দত্ত মহাপাত্র বর্ণের সেবায়েতরা জগন্নাথ – বলরাম – সুভদ্রার মূর্তিতে শৃঙ্গারের কাজ করেন । দ্বাদশ শতাব্দীর মূর্তিগুলিতে এই শৃঙ্গার অর্থাৎ সাজিয়ে তোলার কাজ চলে চার ঘণ্টা ধরে । ‘ বানাকা লাগি আচারটি তৈরি হয়েছে ‘ বানা ‘ শব্দটির থেকে । ‘ বানা ‘ শব্দটির অর্থ জঙ্গল এবং ‘ লাগি ‘ শব্দটির অর্থ আবেদন জানানো।

ভগবানের মূর্তিসজ্জার জন্য জঙ্গলের চাররকম উপাদান ব্যবহার করা হয় । তার মধ্যে রয়েছে লাল রঙের হরিলতা , হলুদ রঙের হেঙ্গুলা , সাদা রঙের শঙ্খ । এছাড়াও জগন্নাথ দেবের জন্য ব্যবহার করা হয় কালো রং । হাতে ধরে ধরে যত্ন সহকারে এই রং করেন সেবায়েতরা । ফলে এই সময়টার জন্য মূলত বন্ধ থাকবে দর্শন । জগন্নাথ মন্দিরের অন্দরে ভোগ মণ্ডপে জগমোহনের গুরুদা পিলারের কাছে এই শৃঙ্গারের কাজ চলে । তবে এই শৃঙ্গারের কাজ কেবলমাত্র রথযাত্রার আগেই নয় , গোটা বছর জুড়ে সাত থেকে আটবার করা হয় । রথযাত্রার আগে আরও একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয় , নাম ‘ নীলাদ্রি বিজে ‘ উল্টোরথে মূল মন্দিরে জগন্নাথ বলভদ্র ও সুভদ্রার প্রত্যাবর্তন বা নীলাদ্রি বিজের অনুষ্ঠান হবে ঌ জুলাই । এই উৎসবের শুরু বিকেল ৪ টেয় এবং শেষ রাত ১০ টায় । সে দিন অবশ্য সমগ্র অনুষ্ঠানটিই হবে মন্দিরের বাইরে । এদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও অক্ষয় তৃতীয়ার দিন শুরু হয়েছে চন্দনযাত্রা উৎসবের । এদিন জগন্নাথদেবের জন্য রথনির্মাণের কাজ শুরু করা হয় । আর রথ তৈরির কাজ শেষ হয় আষঢ়ের শুক্লা দ্বিতীয় ঠিক আগে । অক্ষয় তৃতীয়ার শুভ দিনটিকেই এই রথ নির্মাণের কাজ শুরুর জন্য বেছে নেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ ।

এদিন থেকেই জগন্নাথ , বলরাম এবং সুভদ্রার জন্য তিনটি বড় মালা বয়ে আনেন , তিনজন সেবায়েত । সব মিলিয়ে কার্যত উৎসবের মেজাজ ধরা পড়ে এদিন জগন্নাথদেবের মন্দিরে । আগামী জুলাই মাসেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রা উৎসব । রথের পবিত্র দড়ি একবার স্পর্শ করার জন্য দুর – দুরান্ত থেকে জগন্নাথ ভক্তরা ভিড় জমান পুরীতে । চন্দনযাত্রা উৎসব শেষে এই রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয় । এই সময়টা অত্যন্ত ব্যস্ততার সঙ্গেই কাটে , মন্দিরের সেবায়েতদের । গত দুবছর করোনার কারণে জগন্নাথদেবের রথযাত্রায় সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল । ওড়িশা রাজ্য প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে পরপর দু’বছর রথযাত্রার অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করেছিল । আদালতের নির্দেশর পাশাপাশি ওড়িশা রাজ্য প্রশাসন কঠোরভাবে আমজনতার প্রবেশ পুরীতে রথের সময় নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল । এবছর করোনা বিধি উঠে যাওয়ায় পুরীতে রথের সময়তে ব্যাপক জন সমাগমের আশা করছে মন্দির কমিটি । গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মন্দির খোলা হলেও রবিবার বন্ধ রাখা হয়েছিল । এবছর মার্চ মাস থেকে যাবতীয় বিধি উঠে যেতেই পুরীতে প্রভু জগন্নাথদেবের ভক্তদের ঢল নামতে শুরু হয়েছে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.