শোচনীয় ফলাফলেও সম্বিত নেই বোর্ড পরীক্ষায় ফের ইংরেজির প্রস্তুতি!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-সিবিএসই পরিচালিত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীতে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে শোচনীয় ফলাফল হলেও মতি ফিরল না, রাজ্য শিক্ষা দপ্তরের।উল্টো ২০২৬ সাল থেকে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের বোর্ড পরীক্ষা ইংরেজিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে সিলমোহর প্রদানে তোড়জোড় শুরু করে দিল সরকার। প্রায় দু’বছর আগেই ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষা দপ্তর। তবে ওই সময়ে দৈনিক সংবাদে খবর প্রকাশের জেরে পিছু হটে রাজ্য সরকার। তবে এখন আবার এক প্রকার চুপিসারে ২৬ সাল থেকে ইংরেজিতে বোর্ডের পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে রাজ্য। আর এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্যব্যাপী শিক্ষক শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর রাজ্যের প্রায় লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার পথে। এমনকী স্কুলপড়ুয়া লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর মাঝপথে পঠনপাঠন বন্ধের সম্ভাবনা প্রবল। রাজ্য সরকার প্রায় এক বছর আগে এক নির্দেশে বলেছে সিবিএসইর অনুমোদিত বাংলা স্কুলগুলিতে ২০২৬ থেকে ইংরেজি ভাষাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হবে।২০২৬ সাল থেকে বাংলা ছাত্রছাত্রীদের বোর্ডের পরীক্ষা ইংরেজিতে দিতে হবে। সারা দেশেই সিবিএসই পরিচালিত-অনুমোদিত স্কুলে নার্সারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পঠনপাঠন ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষাতে হয়। ফলে সিবিএসইর স্কুলে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি-হিন্দি ভাষাতে স্কুলে নিয়মিত পঠনপাঠন এবং দশম ও দ্বাদশের ফাইনাল পরীক্ষা ইংরেজি-হিন্দি ভাষাতে দিতে অসুবিধা হচ্ছে না। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ত্রিপুরা। যা ২০১৪ সালের ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছে। এখন যদি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে দশম ও দ্বাদশের পরীক্ষা পুরোপুরি ইংরেজি ভাষাতে দিতে হয়। তবে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের করুণ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
স্কুল শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ত্রিপুরা। রাজ্যে ন্যূনতম পঠনপাঠনের পরিকাঠামো না থাকলেও রাজ্যে প্রথম পর্যায়ে ১২৫ টি সরকারী স্কুলকে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে আনা হয়। এই ১২৫টি সরকারী স্কুলের মধ্যে ৮৮টি স্কুল জন্মলগ্ন থেকেই বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়। তবে অবাক করার বিষয় হলো রাজ্য সরকার ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলকে রাতারাতি আবার সিবিএসইর বোর্ডে পরিবর্তন করে নিল।
রাজ্যের ১২৫টি স্কুলের মধ্যে আবার ৮৮টি স্কুল বাংলা মাধ্যমের। ছাত্রছাত্রীর। সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ। তাই সহজেই অনুমেয় রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ৮৮-টি বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর কী করুণ দশা। সিবিএসই সূত্রে খবর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ম হলো সিবিএসই স্কুলে পঠনপাঠন এবং পরীক্ষা হিন্দি ইংরেজি ভাষাতে হবে। তবে রাজ্যে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে সিবিএসইতে পরিণত করা হলো। লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীকে বিপাকে ফেলে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেল রাজ্যে। অথচ রাতারাতি ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ থেকে বাংলা স্কুলগুলিকে সিবিএসই বোর্ডের অধীনে নেওয়ার পরিণতি দশম ও দ্বাদশের ফলাফালেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন আবার ২০২৬ সাল থেকে ইংরেজিতে পরীক্ষা গ্রহণের দৌড়ঝাঁপ ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
উল্লেখ্য একজন বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী প্রথম শ্রেণী থেকেই ইংরেজি ছাড়া সব বিষয় বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠন করছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের জন্য বাংলা মাধ্যমে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে হবে ইংরেজিতে। এটা কি সম্ভব? একজন বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী প্রথম থেকে নবম শ্রেণী এবং একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পঠনপাঠনের পর দশম ও দ্বাদশে হঠাৎ করে ইংরেজি অথবা হিন্দি ভাষাতে বোর্ডের পরীক্ষা দেবে এটাও কি বাস্তবে সম্ভব? একমাত্র হিন্দি সিনেমাতেই এটা সম্ভব হবে যা করতে চাইছে রাজ্য সরকার,শিক্ষা দপ্তর বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজ্য সরকার, শিক্ষা দপ্তরের এ বিষয়ে যুক্তি হলো ২০২৫ সালের মধ্যে নাকি সরকারী ৮৮টি বাংলা স্কুলকে ধাপে ধাপে ইংরেজিতে পরিবর্তন করা হবে। এই ৮৮টি সহ রাজ্যের হাজারো সরকারী বাংলা স্কুলে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পঠনপাঠন করছে। ফলে এই স্কুলগুলি ইংরেজিতে পরিবর্তন করার সাথে সাথে পঠনপাঠন বন্ধ। কারণ সিবিএসই স্কুলে পঠনপাঠনের খরচ বহন করার ক্ষমতা নেই বলে তারা বাংলা স্কুলে পড়াশোনা করছে। বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিকে ইংরেজিতে পরিবর্তন করার পর পঠনপাঠন করাবেন কে? কারণ যে সব শিক্ষক শিক্ষিকা এই স্কুলগুলিতে শিক্ষকতা করছেন তারাও তো বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী ছিলেন। আর টেট, এসটিজিটি, এসটিপিজিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকারাও অধিকাংশ বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রী। তবে কেন রাজ্য সরকারের এই হটকারী সিদ্ধান্ত? শিক্ষিকাদের ইংরেজি ভাষাতে পঠনপাঠনে প্রশিক্ষণ রাজ্যে আগামী দশ বছরেও শেষ হবে না। রাজ্যে কোনও পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে শুধুমাত্র ছেলেখেলা চলছে। ভাবনাচিন্তা এই রকম যে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। অথচ বাংলা মাধ্যমে স্কুল পঠনপাঠন করেই রাজ্যে, দেশ-বিদেশে ও রাজ্য প্রশাসন সহ সর্বক্ষেত্রে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীরা ত্রিপুরার নাম উজ্জ্বল করছেন। ২০২৬ থেকে বোর্ড পরীক্ষা ইংরেজিতে বিদ্যাজ্যোতি স্কুলের পড়ুয়াদের, ক্ষোভ। মাধ্যমিকে প্রায় চল্লিশ শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৩৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাস করতে পারলেন না। তবে এরপরও রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরের মতি ফিরল না।

Dainik Digital

Recent Posts

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

9 hours ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

9 hours ago

স্মার্টসিটি প্রকল্পের কাজে বন্ধ উড়াল সেতু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেররাজধানী শহর আগরতলার যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উড়াল সেতু। শহরের পশ্চিম…

9 hours ago

বার্ষিক পরীক্ষার সূচি নিয়ে শিক্ষা দপ্তরের রসিকতায় চরম ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যেরসরকারী স্কুলে পরীক্ষার সূচি প্রকাশ হতেই রাজ্যের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের উপর জুলুমের অভিযোগ উঠেছে…

9 hours ago

রাজ্যের প্রতীকে স্বীকৃতি কেন্দ্রের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট একটি প্রতীককে ত্রিপুরা সরকারের রাজ্য প্রতীক/লোগো হিসেবে ব্যবহারের…

9 hours ago

চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে ১০টি সাংগঠনিক জেলা সভাপতির নামে!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীকালই বিজেপির দশটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতিদের নামে চূড়ান্ত সীলমোহর পড়বে।…

9 hours ago