শ্রেষ্ঠত্বের দাবি!!

 শ্রেষ্ঠত্বের দাবি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুক ঠুকে দাবি করেছেন, আগামী পাঁচ বছরের আগেই ভারত বিশ্বের চতুর্থ অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হয়ে উঠবে।দাবিটি আদৌ অমূলক নয়। ভারতের গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট তথা জিডিপি অর্থাৎ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন এখন বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ, বিশ্ব তালিকায় পঞ্চম স্থানে। ভারতের আগে আছে শুধু আমেরিকা, চিন, জাপান ও জার্মানি।গত এক বছরে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ, জি ২০ ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তখন সামনে শুধু মাত্র সৌদি আরব। ২০২১ সালেও ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল জি ২০ দেশগুলির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, তখন সামনে ছিল শুধু তুরস্ক। মোদ্দা বিষয়, খাতায় কলমের হিসাবে ভারতের অর্থনীতির হাল বেশ মজবুত এবং গতির চিহ্ন প্রশ্নাতীত। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতেও ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির রেকর্ড একদম প্রথম সারিতে। তবে কাগজের হিসাব আর বাস্তবের পরিস্থিতি এক বস্তু নয়। কেবলমাত্র মোট জাতীয় আয়ের গতিবিধ থেকে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থার পরিমাপ করা সহজ নয়।কারণ যে দেশে আর্থিক বৈষম্য বিপুল,সেখানে বেশিরভাগ মানুষের আয় বিন্দুমাত্র না বেড়ে শুধুমাত্র অতিধনীদের আয় বিপুল পরিমাণ বাড়লেও সার্বিক বৃদ্ধির হারকে ঈর্ষণীয় দেখায়।

আবার পক্ষান্তরে, মাথাপিছু আয়ের প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বিশ্ব তালিকায় ১৫০এর কাছাকাছি।ভারতের অর্থনীতি কি সত্যিই বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতহারে বর্ধনশীল দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্যভাণ্ডারে যে দুশোর বেশি দেশের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, তাদের পাশে ভারতকে রাখলে দেখা যাবে, ২০২২ সালে জাতীয় আয়ের বৃদ্ধির হারে ভারতের অবস্থান ছিল ৩৩তম। ২০২১ ভারতের ডিজিপি বৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ থাকলেও বিশ্ব তালিকায় আমাদের অবস্থান ছিল ৩০তম।২০২০ সালের অতিমারির কারণে সব দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা লেগেছিল।সে বছর বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জিডিপি বৃদ্ধির বদলে কমেছিল। সেখানে ভারতের বৃদ্ধির হার ছিল উল্লেখনীয়।তার পরেও সেই বছরে বিশ্ব তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল ১৩১ তম।ঘটনা হল, একটি দেশ যত সম্পন্ন হবে, তার বৃদ্ধির তুলনায় শ্লথ হতে প্রাধ্য।অর্থনীতির ভাষায় একে বলে ‘বেস এফেক্ট’।যে পড়ুয়া পরীক্ষার একশোয় নব্বই পেয়েছে তার পক্ষে দশ শতাংশ নম্বর বাড়ানো, আর যে ল্লিশ পেয়েছে তার পক্ষে দশ শতাংশ নম্বর বাড়ানো এক কথা নয় । জি-২০ এর দেশগুলির মধ্যে ভারতের মাথাপিছু আয় সবচেয়ে কম, তাই বিশ্বের প্রথম কুড়িটি অর্থনৈতিক ভাবে মজবুত দেশের মধ্যে তুলনা রলে আমাদের দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার একেবারে উপরের দিকে থাকাই স্বাভাবিক। যে দেশের জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত এক শতাংশ (ভারতের প্রায় ১৮ শতাংশ), শুধুমাত্র তাদের মধ্যে তুলনা টানলে দেখা যাবে, প্রথম কুড়িটি দেশের মধ্যে জাতীয় আয় বৃদ্ধির হারের নিরিখে ভারতের স্থান পাঁচ নম্বরে।আমাদের আগে বাংলাদেশ, কঙ্গো, ফিলিপিন্স এবং ভিয়েতনাম।এমতাবস্থায়, সম্প্রতি সামনে এসেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান।এই তথ্য আসার পরেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চেপে ধরেছে প্রধান বিরোধী দল। কংগ্রেস।

আরবিআইয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ভারতের সঞ্চয়ের বৃদ্ধির হার প্রায় অর্ধ শতকের মধ্যে সবনিম্ন স্তরে নেমেছে। অথচ অন্যদিকে, ব্যাঙ্কে পার্সোনাল লোন বা ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণ ঢের ঢের বাড়ছে। চুম্বকে ধরলে বিষয়টি হল, ভারতের মুষ্টিমেয় অতিধনী শ্রেণীভুক্ত মানুষের বিপুল আর্থিক বৃদ্ধি ঘটছে। পাল্লা দিয়ে তাদের খরচের পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষ ভালো নেই। তাদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করা ক্রমে কঠিনতর হয়েছে উঠেছে। সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ কমছে। প্রকৃত আয় টাকার অঙ্কে চাক্ষুষে যদিওবা বাড়ছে, তা গলাধঃকরণ করে নিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। নিত্য প্রয়োজন মেটাতেই আয়ের টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই, ভারতের বর্তমান বৃদ্ধির হারের রেকর্ড ভাল হলেও, সময়ের গতির ছন্দে ভারত আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম আর্থিক শক্তি হয়ে উঠলেও তা জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের দাবি কি না, ভেবে দেখা দরকার। শরীরের সব রক্ত মুখে সঞ্চারিত হলে তা যেমন সুস্বাস্থ্যের পরিচয় নয়, তেমনই শুধু অতিধনী মানুষের আয় বাড়লে তা অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিরও পরিচায়ক নয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.