সংকট সময়!!

 সংকট সময়!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

পশ্চিম এশিয়া তথা মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে এখন যুদ্ধের কালো মেঘ এই কথা বলার মতো অবস্থা এই মুহূর্তে আর নেই।বরং বলা যায় পশ্চিম এশিয়ায় এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তা গোটা বিশ্বের সামনে বারুদের স্তূপ ছাড়া আর কিছু নেই।গত মাসাধিকাল ধরে এই অঞ্চলে যে ঘটনাপ্রবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে তা গোটা বিশ্বের জন্য শিউরে ওঠার মতো।একথা এখন নির্দ্ধিধায় বলা যায়, পরিস্থিতি এখন যেদিকে মোড় নিচ্ছে তাতে আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে যদি পৃথিবী এগোয়, তবে পশ্চিম এশিয়া হবে এই যুদ্ধের ট্রিগার পয়েন্ট।
মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েল-প্যালেস্টাইন বিরোধ নতুন ঘটনা নয়।প্রায় ৭০ বছর ধরে এই সংঘাত সময়ে সময়ে তীব্র হয়েছে। ফলে এই অঞ্চল বারবার বারুদের স্তূপের উপর বসে থাকলেও এর ব্যাপ্তি ও বিভীষিকা এবারের এত ভয়ংকর আকার নেয় নি। মূলত প্রায় ১বছর আগে একটি ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। গত বছর ৭ অক্টোবর জঙ্গি সংগঠন হামাস হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েলের উপর।এই হামলায় ১২০০ ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়।প্রায় ১ বছর বাদে এবার ইজরায়েল গাজাতে হামলা চালিয়ে কার্যত: হামাসের গোটা সংগঠনকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।এতে মৃত্যু হয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজারের কাছাকাছি।কিন্তু তাতেও থামেনি ইজরায়েল।গাজার পর লেবাননে হিজবুল্লা জঙ্গিদের উপরও শুরু হয়েছে আক্রমণ।হিজবুল্লাহ প্রধান সহ প্রায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন।ঘরছাড়া ১২ লক্ষাধিক মানুষ।গত জুলাই মাস থেকে থেকে এই সংঘাত শুরু হলেও এর তীব্রতা ও ব্যাপ্তি এখন অন্যমাত্রায়।কারণ যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল গাজায় তা এখন লেবানন হয়ে ইরান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন হিজবুল্লাহর উপর ইজরায়েলি হানার পাল্টা
প্রতিশোধ হিসাবে তেল আভিভে ইরানের আক্রমণ গোটা পরিস্থিতিকে অগ্নিতে ঘৃতাহুতির মতোই কাজ করেছে।তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল,প্রায় ৫বছর বাদে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খোমেইনি শুক্রবার জুম্মা নামাজে প্রকাশ্যে অংশ নিয়েছেন এবং সেখানে হুঙ্কার দিয়েছেন ইজরায়েলের অস্তিত্ব আর থাকবে না। হিজবুল্লাহর প্রধান নাসারাল্লার মৃত্যুর পর নিরাপত্তার কারণে খোমেইনিকে নিরাপদ আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর খোমেইনি এই আত্মপ্রকাশ ও
হুমকি যে যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।একটা কথা এই প্রসঙ্গে বলা যায়, পশ্চিম এশিয়ায় বর্তমানে যা চলছে,আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং পশ্চিমী দুনিয়ার ভূমিকা এই ক্ষেত্রে প্রশ্নচিহ্নের মুখে।কারণ আমেরিকা এবং ইউরোপের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই বেইরুটে ইজরায়েল যে হামলা চালাচ্ছে এবং এর পরিণতি হিসাবে ইরান তেলআভিভে যে পাল্টা মিসাইল আক্রমণে নেমেছে,সম্ভবত এরপর যুদ্ধের ছায়াকে আর রোখা যাবে না।গাজায় এক বছর ধরে ইজরায়েল ধারাবাহিক হামলা চালানো সত্ত্বেও পশ্চিমী বিশ্ব যেমন ইজরায়েলকে রুখতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি গতকাল খোমেইনির প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ এবং প্যালেস্টাইন-ইরান-লেবানন-মিশর-ইরাক-সিরিয়া এবং ইয়েমেনের একমাত্র শত্রু হিসাবে ইজরায়েলকে দাগিয়ে দেওয়ার ঘোষণা কার্যত বিশ্বকে বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ায় অবশ্যম্ভাবী পরিণামের দিকেই অনুপ্রাণিত করার প্রয়াস বলে মনে করছে তথ্যভিজ্ঞ মহল। মাত্র দিন তিনেক আগেই ইজরায়েল খোমেনেইকে হত্যা করতে চায় এমন কথা জানিয়েছিল তেল আভিভ। এবার প্রকাশ্য এসে খোমেইনির এই পাল্টা হুঁশিয়ারি যে পরিস্থিতির মাত্রাকে আরও জটিল করে তুলল তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।পশ্চিম এশিয়ার চলতি সংকট নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে উদ্বেগের।এই মুহূর্তে লেবাননে ৩ হাজার, ইরানে ১০হাজার এবং ইজরায়েলে ৩০ হাজার ভারতীয় আছেন।এই সংঘাত বৃহত্তর মাত্রা পেলে পরিস্থিতি যথেষ্ট সংকটজনক হয়ে উঠবে।আরেকটা বিষয় হলো, পশ্চিম এশিয়ার সংকটে ভারতে অশোধিত তেলের আমদানিও প্রভাবিত হতে পারে।আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি পেতে পারে তেলের দাম।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমস্ত পণ্য সামগ্রীর দামের উপর এর প্রভাব ফেলবে। ইতিমধ্যেই যে চিরাচরিত জলপথ দিয়ে ভারত আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত তাতে গত আগষ্টের পর থেকেই ভারতের রপ্তানিতে ৯ শতাংশ ঘাটতি নেমে এসেছে।সংকটের কারণে পণ্য পরিবহণ খরচ বেড়েছে।কমেছে লাভ।সব মিলিয়ে ইজরায়েল-ইরান সংঘাত যে পর্যায়ে মোড় নিচ্ছে তা শুধু যুদ্ধের শঙ্কায় নয়, আর্থিক ভিতর্কেও টলিয়ে দিতে পারে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.