সংঘের সক্রিয়তা!!

 সংঘের সক্রিয়তা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মোদি জমানায় একপ্রকার কালঘুমে চলে যাওয়া রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) কি তাহলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে? লোকসভার ফল ঘোষণায় বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হাতছাড়া হবার পর থেকে সংঘের সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাহলে কি বুলা যায় বিজেপি একটু দুর্বল হতেই সংঘ ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।একসময় বিজেপির মূল চালিকাশক্তি ছিল সংঘ।সংঘই বিজেপিতে প্রভাব খাটাতো।কে মন্ত্রী হবেন না হবেন,পদে কে বসবেন। সংগঠনের কে কোথায় বসবেন তার সবটাই নিয়মিত হতো আরএসএস থেকে। অটলবিহারী বাজপেয়ী, আদবানি জমানা থেকে মোদির প্রথম ইনিংসে আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ দেখা গেছে।কিন্তু মোদি ২ জমানা থেকেই মোদি সরকারের উপর আরএসএসের নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোপুরি উঠেই যায়। মোদি হয়ে ওঠে একমেবদ্বিতীয়ম।মোদির প্রবল আগ্রাসী মেজাজের কাছে সংঘ ক্রমশই তাদের রাশ হারিয়ে ফেলতে থাকে। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় রাশ পুরোটাই নিজের উপর নিয়ে নেন কি দল, কি সংগঠন, কি মন্ত্রিসভা, কি প্রশাসন-সবটাই মোদি নির্ভর।অর্থাৎ মোদিময় সবকিছু।আর এসএস সেখানে তুচ্ছ হয়ে যায়। এমনকী এবারের নির্বাচন চলাকালীন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা তো বলেই ফেলেন যে,আরএসএসের এখন আর আমাদের প্রয়োজন নেই।বিজেপি যখন ছোট ছিল,দুর্বল ছিল তখন আরএসএসের সাহায্য সহায়তা আমাদের দরকার হতো।কিন্তু এখন বিজেপি আত্মনির্ভর হয়ে গেছে। সুতরাং আরএসএসের এখন আর দরকার নেই।ভোট চলাকালীন আরএসএস সম্পর্কে বিজেপির এই মূল্যায়নের পর সেসময় অবশ্য আরএসএসের কোন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। আরএসএস হয়তো অপেক্ষা করছিল, আগে দেখা যাক ভোটের ফল কী হয়, পরে না হয় বিজেপিকে দেখে নেওয়া যাবে।এবার ভোটের ফল ঘোষণার পর বিজেপির এবারের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে বেড়াচ্ছেন আরএসএস নেতারা।শুরুটা করেছিলেন অবশ্যই সরসংঘ চালক মোহন ভাগবত নিজেই।নাম না করে মোদির ‘অহংকার’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। প্রশ্ন তোলেন ভোটে তার প্রচারের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মণিপুর নিয়েও।শুধু তাই নয়,এরপর ভাগবতের পাশাপাশি আরএসএসের একের পর এক নেতা বিজেপিকে নিশানা করেছেন। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রে খারাপ ফলের জন্য সরাসরি মোদি-শাহকেই প্রকারান্তরে কাঠগড়ায় তুলছেন আর এসএসের কতিপয় নেতা।
আর এসএসের মুখপাত্র অবজারভারও এ নিয়ে নিবন্ধ ছাপা হচ্ছে।শোনা যাচ্ছে এবার বিজেপি সভাপতি পদেও আরএসএস নাক গলাতে শুরু করেছে।খুব শীঘ্রই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সাথে বৈঠক করবেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।প্রশ্ন হল আরএসএস হঠাৎ এত সক্রিয় হয়ে উঠল কেন?অন্যদিকে বলতে গেলে বিজেপিইবা আরএসএস সম্পর্কে তাদের মূল্যায়ন এভাবে করতে গেল কেন?বিষয়টি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এখন হয়ে উঠেছেন লার্জার দ্যান লাইফ।যেমনটা একদা হয়ে উঠেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেসময় ইন্দিরা সম্পর্কে বলা হতো ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা, ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া।অর্থাৎ সে সময়টি ইন্দিরা হয়ে উঠেছিলেন লার্জার দ্যান দ্য লাইফ।মোদি জমানায় যতই মোদি-শাহের পরাক্রম বাড়তে থাকে এতই নিষ্প্রভ হাতে থাকে আরএস এস। মোদি-শাহ অন্য ধারায় দেশকে চালাতে চেয়েছেন। কংগ্রেস বা অন্য দল থেকে নেতাদের ভাঙিয়ে এনে সরকার কখনও গড়েছেন বা কখনও সরকার ভেঙেছেন। বিরোধী দলকে ভেঙে ছত্রখান করে দিয়েছেন।সর্বত্রই প্রশাসনের এক বিস্তার ঘটিয়েছেন নিজেদের মতো করে। ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স, এমনকী জুডিশিয়ারি, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে মিডিয়া সর্বত্রই আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করে গেছেন মোদি-শাহ। অন্যদিকে নির্বাচনে একের পর এক সাফল্য ধরা নিয়েছে মোদি-শাহের হাতে।ফলে আরএসএস বেশি কিছু বলতে চায়নি বা বললেও তা পাত্তা দেবে কে?অথচ এই আরএসএসের প্রজেক্ট ছিল নরেন্দ্র মোদি।২০১৩ সালে গোয়ায় বিজেপির রাষ্ট্রীয় কার্যকারিনী বৈঠকেই নরেন্দ্র মোদিকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে তুলে ধরার জন্য বিজেপিকে একপ্রকার বাধ্য করে আরএলএস। সেসময় লালকৃষ্ণ আদবানি, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেঠলীরা বিরাগভাজন হয়েছিলেনও বটে।কিন্তু আর এসএসের প্রবল পরাক্রমের কাছে তাদের নতিস্বীকার করতে হয়েছিলো।কিন্তু কথায় বলেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়।সেই আরএসএসের পোস্টারবয় এখন আরএসএসকেই পাত্তা দিতে চাইছেন না।তাই বাধ্য হয়ে লোকসভা ভোটে একটু কোমর ব্যাঁকা হতেই বিজেপিকে চেপে ধরেছে আরএসএস।এবার দেশর মোদি ৩.০ সরকারে আরএসএস কতটা নিজেদের প্রভাব খাটায়।নাকি মোদি জমানায় আরদ্ভ্রএসএসের এই হঠাৎ তৎপরতা সবটাই দেখনদারি ছাড়া আর কিছুই নয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.