সংবিধানের তরজা।।

 সংবিধানের তরজা।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

১৯৪৯সালের ২৬ নভেম্বর সংসদে গৃহীত হইয়াছিল ভারতের সংবিধান,সেই সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী।সংসদে সংবিধান গ্রহণের দিনটিকেই সংবিধান দিবস বলিয়া উদ্যাপনের রেওয়াজ রহিয়াছে।সেই মোতাবেক মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর এই বৎসর সংবিধান দিবস উদ্যাপন করা হইলো পুরানো সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে। ২০১২ সালেও সংবিধানের ৬০ বৎসর পূর্তি অনুষ্ঠান উদ্যাপন হইয়াছিল সেন্ট্রাল হলে।কিন্তু ২০১২ আর ২০২৪ এক নহে।এক যুগের ব্যবধানে অনেক কিছুই পাল্টাইয়া গিয়াছে।সেই সময়ে ক্ষমতায় ছিল ইউপিএ জোট, আজ এনডিএ জোট। তাহার চাইতে বড় কথা হইলো সংবিধান রক্ষা আজ নির্বাচনের বাজনা হইয়া দাঁড়াইয়াছে।সংবিধানের একখানা ছোট্ট সংস্করণ সব সময়েই হাতে লইয়া মঞ্চে উঠিয়া থাকেন রাহুল গান্ধী।
গত লোকসভা নির্বাচনের ভোট প্রচারে এই দৃশ্য প্রথম দেখা যায়।এর পর বিধানসভার ভোট কিংবা ছোট,বড় বা মেজ যে কোনও ধরনের নির্বাচনের প্রচারে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতায় সংবিধান রক্ষার কথা আসিবেই,আসিতেছে।তাহার এই বক্তব্যের বর্শামুখে দাঁড়াইয়া থাকেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।কিন্তু এইবার সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে সেন্ট্রাল হলে কংগ্রেস নেতা তথা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী অন্যতম প্রধান অতিথি হইলেও বক্তৃতা করিবার সুযোগ পান নাই।কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও বক্তা হিসাবে রাখা হয় নাই।বক্তা ছিলেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা,রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় এবং সর্বশেষে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
অতএব সংসদ ভবনে আর সংবিধান লইয়া তরজা সম্ভব হইলো না।অগত্যা রাহুল গান্ধী সংবিধান লইয়া কথা বলিতে যাইয়া মোদির বিরুদ্ধে যাবতীয় আক্রমণ সংঘটিত করিলেন কংগ্রেস দলের সংবিধান দিবসের মঞ্চে।তালকোটরা স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের সভায় রাহুল গান্ধী পুনরায় শুনাইলেন, মোদি সংবিধান পড়েন নাই। যদি সংবিধান তাহার পড়া থাকিত তাহা হইলে দেশে এমন এমন সব কাণ্ড ঘটাইতে পারিত না।প্রসঙ্গত,সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।তাহাদের মঞ্চে বলার সুযোগ না দেওয়ায় কংগ্রেসের শশী থারুর ২০১২ সালের সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন,সেই সময় সকলকেই বলিতে দেওয়া হইয়াছিল।বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতারা সকলেই কথা বলেছেন। এই অনুষ্ঠানে অন্তত বিরোধী দলনেতাকে বলিতে ‘দেওয়া যাইতে পারতো।
তবে তালকোটরা স্টেডিয়ামে এই দিনের হিসাব পুরা করিয়াছেন রাহুল গান্ধী। দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলিয়াছেন, নরেন্দ্র মোদি এই সংবিধানের একটি পৃষ্ঠাও পড়েন নাই।পড়িলে তাহার নিত্যদিনের কাজকর্মে অন্য ছাপ থাকিত।সেন্ট্রাল হলের অনুষ্ঠানের প্রতি তির্যক মন্তব্য করে রাহুল বলিয়াছেন,আজ যাহারা সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে সংবিধানের সামনে নতমস্তক হইয়াছেন,তাহারা কি বলিতে পারিবেন, সংবিধানের কোন পৃষ্ঠায় হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি করিবার কথা বলা আছে?তাহারা যে বিভাজনের রাজনীতি করিতেছেন সেই বিভাজনের কথা সংবিধানের কোথায় বলা হইয়াছে?সংবিধান হইলো সত্যের গ্রন্থ, অহিংসার গ্রন্থ।এই সংবিধানে কি সাভারকরজির কন্ঠস্বর আছে কোথাও?
রাহুল গান্ধীর এই সকল উচ্চারণ দেশের মানুষ আগেও শুনিয়াছেন।তিনি বারবার বলিতেছেন, বিজেপি, সংঘের মিলিত প্রয়াস হইলো দেশের সংবিধান শেষ করিয়ার দেওয়া।বাবাসাহেব আম্বেদকর,জ্যোতি রাও ফুলে দেশের দলিত শ্রেণীর জন্য যে স্বপ্ন যে রক্ষাকবচের কথা বলিয়া গিয়াছেন সেই সকল রক্ষায় সংবিধান রক্ষা করিতে হইবে- এই কথাই রাহুল আর কংগ্রেসের সংবিধান নিয়ে আলোচনার মূল পাঠ হইয়া থাকে। সংবিধান দিবসেও একই কথার পুনরাবৃত্তি শুনাইলেন রাহুল গান্ধী। যদিও দলিত লইয়া কথার সময়ে রাহুলের মাইক বন্ধ হইয়া যায়। পরে পুনরায় বিদ্যুত সংযোগ ফিরিয়া আসিলে মাইক চালু হয়।আবার ভাষণ শুরু করেন রাহুল।রাহুল বলিলেন, দলিত লইয়া কথা বলিতে গেলেই নাকি তাহার মাইক বন্ধ করিয়া দেওয়া হইতেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.