সংযুক্তিকরণের ফাঁদ!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিভিন্ন মডেল নিয়ে দিল্লীতে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার। কখনও বলা হচ্ছে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’ অর্থাৎ এক দেশ এক নির্বাচন।আবার একথাও বলা হচ্ছে ‘এক দেশ এক আইন’।যদিও এর কোনটিই এখনও কার্যকরী করার চুড়ান্ত অবস্থায় আসেনি। তবে এই পর্যায়েই আরেকটি নতুন মডেলের কথা সরকারী তরফে প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন এই মডেলটি হালা ‘ওয়ান স্টেট ওয়ান রিজিওন্যাল ব্যাঙ্ক।মাত্র কয়েকবছর আগেই কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বেশ কিছু জাতীয়কৃত ব্যাঙ্ককে সংযুক্তিকরণের বা একত্রিকরণের পথে হেঁটেছিল।এবার দেশের সমস্ত গ্রামীণ আঞ্চলিক ব্যাঙ্কগুলোকে মোটামুটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় নামিয়ে আনার পথে সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে খবর।
দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নের লক্ষ্যে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলি স্থাপন করা হয়েছিল।১৯৭৫ সালে নরসিমহাম কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক আইন অধ্যাদেশ জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৯৭৫ সালে ২ রা অক্টোবর দেশের প্রথম আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক স্থাপিত হয়েছিল উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। এই ব্যাঙ্কটির নাম ছিল ‘প্রথমা গ্রামীণ ব্যাঙ্ক।বলা হয়েছিল গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে এই আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো কাজ করবে।কারণ গ্রামীণ এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারী ব্যাঙ্কিং পরিষেবা সব সময় লাভজনক হয় না বলে,এই ধরনের বড় বড় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলো গ্রামাঞ্চলে শাখা খুলতে চায় না।তাছাড়া বাণিজ্যিক বড় ব্যাঙ্কগুলোর গ্রাহক পরিষেবার নিয়ম কানুনও অনেক বেশি জটিল থাকায়, গ্রামীণ মানুষের পক্ষে সেগুলো কাজে লাগানো সম্ভব হয় না।এর ফলে গ্রামীণ মানুষেরই ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।যা কার্যত গ্রামীণ অর্থনীতি এবং তাদের আর্থ-সামাজিক জীবনের উপর মন্দ প্রভাব ফেলে।এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৭৫ সালে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক পরিষেবার শুরু করেছিলেন।প্রথমে নরসিংহন কমিটির সুপারিশ মেনে দেশে ৫ টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। যদিও পরবর্তী সময়ে দেশে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সংখ্যা দুই’শ উপর ছাড়িয়ে যায়।এই আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির মালিকানা ৫০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের, ১৫ শতাংশ রাজ্য সরকারের আর বাদবাল ৩৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট স্পনসর ব্যাঙ্কের শেয়ারে পরিচালিত হতো। আলাঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলির প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ক্ষুদ্র ও প্রান্তি ষক, কৃষি শ্রমিক, ক্ষুদ্র কারিগর এবং ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ ও ব্যাঙ্কিং সুবিধা প্রদান করা।দেখা গেছে, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো স্থাপনের পর বাস্তবিক অর্থেই গ্রামীণ আর্থ সামাজিক পরিস্থিতির যে ভারসাম্যহীনতা ছিল।সেটা একদিকে যেমন দূর করা গেছে, তেমনি গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান বেড়ে গেছে।যদিও ২০০১ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই সম্পর্কিত কমিটি গঠনের পর পরীক্ষানিরীক্ষা করে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমিয়ে ১৯৬ তে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকার লক্ষ্য করে যে, গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলোর অনেকগুলোই ইতিমধ্যেই যেহেতু রুগ্ন হয়ে পড়েছে। তাই একত্রিকরণের মধ্য দিয়ে এদের পুনরুজ্জীবন দরকার। এবার ১৯৬ থেকে তা নামিয়ে ৮২ তে আনা হয়।নাবার্ড এবং আরবিআই যেহেতু আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের মূল নিয়ন্ত্রন সংস্থা, তাই তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ৮২ থেকে একত্রিকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সংখ্যা ৫৬ তে আনা হয়। ২০১৯ সালে আরেকপ্রস্ত আরআরটি সংকুচিত করে তা বর্তমানে ৪৩ এ এসে ঠেকেছে।এবার নতুন মডেলে রিজিওন্যাল রুরাল ব্যাঙ্ক ৪৩ থেকে ৩০ করার পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র।কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক চাইছে এত আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক না রেখে প্রতি রাজ্যে একটি করেই আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থাকবে।প্রশ্ন হলো,দেশে গ্রামীণ শিল্প স্থাপনে এবং কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নে ঋণ দেওয়ার প্রশ্নে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এই গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলো থেকেই এখন দেশের প্রায় সর্বত্র ১০০ দিনের কাজের গ্যারান্টি প্রকল্পের টাকা পেয়ে থাকেন শ্রমিকরা।এখন রাজ্য পিছু আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ১ টি করে থাকলে বড় রাজ্য গুলোতে নিশ্চয়ই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হয়তো আমাদের ত্রিপুরার মতো রাজ্যে শুরু থেকেই ১ টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্কই তাদের শাখাগুলোর মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু বেশ কিছু রাজ্যেই একাধিক আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাঙ্ক করছে।ধাক্কা লাগবে সেখানেই।নিন্দুকেরা অবশ্য এই কাজের পেছনে বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলোকে গ্রামীণ এলাকায় সুযোগ করে দেওয়ার ফন্দি দেখছেন। কিন্তু যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকার সঙ্গে যুক্ত, সেখানে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ডকে ভেঙে দেবে না তো? ভয়টা সেখানেই।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

7 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

7 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

1 day ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

2 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

2 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

2 days ago