সংরক্ষনের ভবিষ্যৎ!

 সংরক্ষনের ভবিষ্যৎ!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ২০১৯ সালে ভারত সরকারের আনীত অর্থনৈতিক কোটা বহাল রাখিয়াছে। সরকারী চাকুরিতে এই কোটা থাকিবে দশ শতাংশ হারে। পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের তিন বিচারপতি এই মামলার শুনানিতে অর্থনৈতিক কোটার পক্ষে তাহাদের মতামত দিয়াছেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে অর্থনৈতিক কোটা বহাল থাকিল শীর্ষ আদালতে। প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত তার অবসর গ্রহণের একদিন আগে এই শুনানিতে অংশ লইয়া অর্থনৈতিক কোটার বিপক্ষে মতামত দিয়াছে। তার সহিত সহমত পোষণ করিয়াছেন আর এক বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট। বাকি তিনজন পক্ষে থাকিয়াছেন বলিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সংরক্ষণ বহাল রাখিতে আর অসুবিধা রহিল না সরকারের।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচন হারিয়া যাইবার পর সংবিধানের ১০৩তম সংশোধনী আনিয়া অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণীর মানুষের জন্য সরকারী চাকুরি এবং উচ্চশিক্ষায় ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধনীতে বলা হইয়াছিল যে সকল প্রার্থীদের পরিবার কর দেওয়ার মতন রোজগার করিতেছে না অর্থাৎ বার্ষিক আয় আট লক্ষ টাকার কম সেই সকল পরিবারের সদস্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের আওতায় থাকিবেন। কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এই সংরক্ষণের বিরোধিতা না করিলেও তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকার সহ বহু সংগঠন মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়।

সুপ্রিম কোর্টে সেই সময়ে সংরক্ষণের পক্ষে বিপক্ষে প্রায় চল্লিশ খানা আবেদন জমা পড়ে। আবেদনকারীদের সিংহভাগ আবেদন করিয়া সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া বলিলেন, যেহেতু সংরক্ষণের কোটার সর্বোচ্চ সীমা সুপ্রিম কোর্ট নিজেই নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন তাই এই ১০ শতাংশ সম্পর্কেও সুপ্রিম কোর্টই সিদ্ধান্ত জানাইয়া দিন।
এই মামলা লইয়া সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের খণ্ডপীঠে শুনানি শুরু হইলে পরবর্তীতে এই মামলা পাঁচ সদস্যের খণ্ডপীঠে পাঠানো হয় । গত সেপ্টেম্বরে এই মামলা লইয়া টানা সাতদিন শুনানির পর শুনানি স্থগিত রাখা হয়। এরপর সর্বোচ্চ আদালত রায়ের জন্য এই দিন ধার্য করিয়া দেন ।

রায়ের দিনে বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরী বলিলেন, কোটা সংরক্ষণের এই সিদ্ধান্ত কোনও মতেই সাংবিধানিক কাঠামো ও সাম্যের নীতিকে লঙ্ঘন করিতেছে না। বরং ইহাতে সমাজে সমতা রক্ষা সহজ হইবে। দরিদ্র মানুষদিগকে মূলস্রোতে ফিরাইয়া আনা সহজ হইবে। বিচারপতি বেলা ত্রিবেদিও একই কথা বলিলেন, একই সুরে। তিনি বলিলেন, জেনারেল ক্যাটাগরির মানুষেরা দরিদ্র বলিয়া পরিগণিত হয় না। এই ধরনের শ্রেণী বিভাগে সমানাধিকার লঙ্ঘিত হয়। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের সহিত এক মত হইতে পারিলেন না প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত। দুই সদস্য বিচারপতি ললিত এবং ভাট বলিলেন, এই ধরনের কোটা প্রথা সংবিধানের মূলনীতি এবং আদর্শের বিরোধী। কেবলই আদর্শ বিরোধী নহে, বেআইনি এবং বৈষম্যমূলক।

কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণের একদিন আগে ইউ ইউ ললিতের এই পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া মনে করা হইতেছে।বিচারপতি পর্দিওয়ালা কোটার পক্ষে মত দিলেও বলিলেন কোনও সংরক্ষণই অনন্তকাল ধরিয়া চলিতে পারে না। চলা ঠিকই নহে। কোটা সুযোগ লইয়া যে সকল ব্যক্তি অগ্রসর হইয়াছেন তাহাদের সেই সুযোগ বন্ধ করিয়া দেওয়া প্রয়োজন। তাহা হইলেই কেবল যাহাদের প্রকৃত প্রয়োজন সেই সকল মানুষ সুযোগ সুবিধা পাইতে পারিবে। কীভাবে এই পথে আগাইয়া যাওয়া যাইবে উহা লইয়া ভাবিবার পরামর্শ দিয়াছেন এই বিচারপতি। প্রসঙ্গত, যদিও অর্থনৈতিক সংরক্ষণের ইস্যুতে বিরোধী কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল কোনও কথা বলে নাই তথাপিও দেশের দুই রাজ্য গুজরাট এবং হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে মোদি সরকারে খুশির আবহ তৈরি হইয়াছে।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের পূর্বেকার রায়ে বলা হইয়াছিল সংরক্ষণ কখনওই ৫০ শতাংশের লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করিবে না। এইরকম নির্দেশিকার সামনে বসিয়া মোদি সরকার ২০১৯ সালে অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ মানুষের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরিয়া কোটার বাহিরে যে সকল মানুষ ভাবিতেছিলেন জাতিগত সংরক্ষণের কারণে তাহারা সরকারী সুযোগ হইতে বঞ্চিত হইতেছেন এবং অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতার শিকার, তাহারা নি:সন্দেহে খুশি হইতে চাহিবেন। আর ইহাদের সংখ্যা বিশালতর। কারণ বাৎসরিক আট লক্ষ টাকা রোজগার করিতে হইলে বাকি একটি পরিবারকে মাসে ৭৫ হাজার টাকা রোজগার করিতে হইবে। এইরকম রোজগারি শ্রেণীতে দেশে সাধারণ ক্যাটাগরির মানুষের সে সংখ্যা কত? নি:সন্দেহে বিশাল নহে। বিশাল অংশের মানুষের রোজগার মাসিক ৭৫ হাজারের নিচেই শুধু নয় সাড়ে সাত হাজারেরও নিচে। এইবার যদি সেই সকল দুর্বল মানুষ সংরক্ষণের আওতায় আসিয়া লাভবান হয় তাহা হইলে মোদি সরকার নি:সন্দেহে আশীর্বাদ হইবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.