সংসদের হাপর টানা!!

 সংসদের হাপর টানা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন আর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সংসদের বাজেট পেশ লইয়া দেশের সংসদীয় রাজনীতি এই সময়ে নাওয়া খাওয়া বিহীন হইয়া গিয়াছে।ব্যস্ততা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা এই সময়ে সর্বাধিক শাসক বিজেপিতে।কারণ পরিবেশ পরিস্থিতি আর আগের মতন নাই।সংসদে বিরোধী দলনেতা হইয়াছেন। রাহুল গান্ধী সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বুঝাইয়া দিয়াছেন গত দশ বৎসর ধরিয়া তাহাকে পাপ্পু, শাহজাদা বলিয়া সম্বোধনের পরিণতি কী হইতে চলিয়াছে। রাহুলের আগ্রাসী মনোভাবে শঙ্কিত শাসক দল।অমিত শাহ তো কোনও রাখঢাক না রাখিয়াই রাহুল গান্ধী কেন অসংযত তাহার কারণ জানিতে চাহিয়াছেন।বলাই বাহুল্য বর্ষার এই অধিবেশনে দিল্লীর পথে প্রান্তরে বর্ষণ যাহাই ঘটুক সংসদের অভ্যন্তরে প্রচুর ঝড়ঝঞ্ঝা থাকিবে।এই সকল মোকাবিলার দায় আসিয়া পড়িয়াছে শাসক বিজেপির উপর।দুশ্চিন্তা তাই তাহাদেরই অধিক। আবার দর্শক গ্যালারিতে যাহারা থাকিতেছেন তাহারাও লোমহর্ষক পরিস্থিতি অবলোকনের মানসিক প্রস্তুতি লইতেছেন।সেই সকল দৃশ্য হইবে অভাবনীয়।গত দশ বৎসর সংসদে বিরোধী দলনেতা না থাকায় প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও তাহারা দেখিবেন নতুন অবতারে।
অবতার বলিতেই আসিয়া যাইতেছে মোহন ভাগবত প্রসঙ্গ।সংসদের কথায় কেন নাগপুর আসিবে?আসিবে বিজেপির চলমান অস্বস্তির প্রসঙ্গে।একদা বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিজেপি আজ ঘরে বাহিরে আক্রান্ত। ঘরের কথা বলিলে নাগপুর, গোরক্ষপুর বলিতে হয়।যাহা ইদানীং নাগপুর-দিল্লী-লখনৌ ত্রিকোণ বলিয়া কথিত হইয়াছে।২০২৪-এর সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের আগে হইতেই বিজেপি আরএসএসে দড়ি টানাটানি হইতেছিল।কী কারণে হইতেছিল, আদৌ হইতেছিল কিনা তাহা অপরিষ্কারই ছিল। কিন্তু প্রায় অভাবনীয়ভাবে ইহাকে প্রকাশ্য করিয়া দিয়াছিলেন বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা। আরএসএসের সাহায্য ব্যতিরেকে বিজেপি ভোট জিতিতে পারে এমন বলিয়া দিয়াছিলেন।ইহার পর ভোটের ফলাফল ঘোষণা হইলো। বিজেপির ত্রিভঙ্গ মুরারী ফলাফলে ইন্ডিয়া জোটের চাইতেও অধিক খুশি হইলো আরএসএস।বলা যায় আরএসএস এই ধরনের পরিণতিই চাহিয়াছিল। কারণ বিজেপিকে গলাধঃকরণ বা উগলাইয়া ফেলা কোনওটাই সঙ্ঘের জন্য সহজ হইতেছে না।সঙ্ঘে যেহেতু মোদির চাইতে বরিষ্ঠ নেতা আর কেহ নাই তাই মোদিকে সামলাইয়া লওয়া তাহাদের পক্ষে সম্ভব হইতেছে না। আবার নিজের অস্বিত্ব রক্ষায় বিজেপিকে ছাড়িতেও পারিতেছে না। এমতাবস্থায় মোদি শাহের বিজেপির হামাগুড়ি তাহাদের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক হইয়াছে।যেহেতু দৌড়াইতে পারিতেছে না তাই মাঝেমাঝেই মোদির অবতারিত সক্স, নন বায়োলজিক্যাল বিষয়গুলিকে খুঁচাইয়া দিয়া বাগে আনিবার প্রয়াস লইতেছেন মোহন ভাগবত।
বলা হইয়া থাকে ঘরে স্বস্তি-শান্তি থাকিলে বাহিরে লড়াই সহজ হয়।সেই দিক হইতে ঘরে কোনও শান্তি স্বস্তি বিজেপির নাই।তাহার উপর সংসদের অভ্যন্তরে রাহুল গান্ধী শিব ঠাকুরের অভয় মুদ্রা লইয়া যে গবেষণা করিয়া গেলেন তাহা বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরম মখমলের গদিতে কাঁটা বিছাইয়া দিয়াছে।স্বস্তিতে দুই দণ্ড বসিয়া সীতারামনের বাজেট ভাষণ শুনিবার মতন অবকাশ তারা রাখিল না। অধিবেশনের অবকাশে রাহুল গান্ধী মণিপুর সফর করিয়া গেলেন।মণিপুরের মানুষজনদের প্রতিশ্রুতি দিয়া গিয়াছেন তাহাদের দুর্দশার কথা সংসদে তুলিবেন। আবার ইন্ডিয়া,এনডিএ নির্বিশেষে দেশের প্রায় সকল নেতা বিবাহের অনন্ত আসরে যোগদান করিলেও যান নাই রাহুল গান্ধী।দেশের বাজেটের সঙ্গে আম্বানি-আদানির যোগ বিয়োগ লইয়া তাহার বক্তব্য যে সরকারের জন্য যথেষ্ট বদহজমের কারণ হইতে যাইতেছে তাহা কিন্তু আগাম অনুমান করা যায়।
ইউপিএসসির চেয়ারম্যান, অগ্নিবীর, নিট ইত্যাদি ইস্যু তো আসিবেই।ঐক্যবদ্ধ বিরোধী বেঞ্চের সম্মিলিত আক্রমণ ঠেকাইবার দায় একা কুম্ভ মোদিশাহের। এনডিএর শরিকেরা আছে বটে কিন্তু তাহারা সকলেই আমন্ত্রিত অতিথির মতন। তাহাদের ভূমিকা নাই বলিলেই চলে। আবার বিজেপির অন্দরেও রহিয়াছে সমস্যা। সঙ্ঘ প্রভাবিত সাংসদ মন্ত্রীরা কেহই চাহিবেন না সংখ্যার সঙ্কটে বিজেপির সরকার পড়িয়া যায়, আবার পাশাপাশি মোদিশাহের উপর আক্রমণ হইতেছে দেখিলে তাহারা নিশ্চুপ থাকিয়া সেই দৃশ্য উপভোগই করিবেন। সম্ভব ক্ষেত্রে হাপর টানিয়া আগুন বাড়াইয়া দিতে চেষ্টা করিবে।এইদিকে উত্তরপ্রদেশের যোগী অপসারণ সংক্রান্ত মোদিশাহের অভিযানের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াছে নাগপুর। ফলে দলের ভিতরে, সংসদেও মোদিশাহের নীরব প্রতিপক্ষের সংখ্যা একেবারে কম নহে। তাহাদের সংখ্যা কত তাহার সম্যক ধারণা রহিয়াছে মোদিশাহের।এই বিষয়টি সংসদে বিপক্ষের সামনে ভেতরে ভেতরে মোদিশাহকে দুর্বল করিয়া রাখিবে। হয়তো সেই সংখ্যার হিসাব জানেন রাহুল গান্ধীরাও।তাই আক্রমণের তীব্রতা হইয়া উঠিতেছে লাগামছাড়া।যাহা মোদি শাহকে নিয়ত দগ্ধ করিতে থাকিবে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.