সকালের কিছু ভালো অভ্যাস কমাবে ওজন
বাড়তি মেদ ঝরাতে চাইলে জীবনযাপন পদ্ধতিতে বদল আনা ভীষণ প্রয়োজন। ভাল অভ্যাসগুলোই আমাদের ফিট ও সুস্থ রাখে।আর এর উল্টো পথে হাঁটলেই বিপদ। শরীরে বাসা বাঁধবে নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি। এমনই কিছু বদ-অভ্যাসের কারণে বেড়ে যেতে পারে ওজন। ওজন কমানোর জন্য শুধু কঠিন ডায়েট নয়, বরং চাই সঠিক কিছু অভ্যাস। শরীরচর্চা, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলা,সুষম খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কিছু অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে ওজন কমানোর যাত্রায় গতি আসবে বেশ। তাই দেরি নয়,সু-অভ্যাস দিয়েই শুরু হোক দিন। সকাল সকাল উঠেই শুরু করে দিন সু-অভ্যাসের চর্চা। জেনে নিন বাড়তি মেদ ঝরাতে চাইলে সকালের কোন কোন অভ্যাস আপনাকে সাহায্য করবে।
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা: প্রথমেই আসা যাক রাতের ঘুমের কথায়। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। দুশ্চিন্তা মুক্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরবেলা ওঠার অভ্যাস করুন। রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাবেন অবশ্যই। সকালের বাড়তি ঘুম শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা খুবই ভাল। তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে সারাদিনের খাওয়া, ঘুম,কাজকর্ম—সবই নিয়ম মাফিক করা সম্ভব হয়। এতে মেটাবলিজম ঠিক থাকে।
দিনের শুরু হোক দু’গ্লাস জল দিয়ে : সকালে খালি পেটে জল খাওয়ার অভ্যাস করবেন।গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা যদি না থাকে লেবু জল খেতে পারেন খালি পেটে। এটি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখবে। এক গ্লাস জলে ১ চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করলেও পাবেন উপকার।
গায়ে লাগুক সকালের রোদ: সকালের রোদ ভিটামিন ডি পাওয়ার প্রাকৃতিক উপায়। কিন্তু এর পাশাপাশি সকালের রোদ শরীরের ফ্যাটও কমায়। যারা সকালের রোদ গায়ে লাগান, তাদের ওজন কম হয়। বিশেষ করে যারা দিনের পরবর্তী অংশে রোদে যান,তাদের তুলনায়। সকালের রোদ শরীরের মেটাবলিজমের ওপর প্রভাব ফেলে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন : ওজন কমাতে সকালে উঠেই প্রথমে হালকা ব্যায়াম করতে হবে। কারণ, খালি পেটে করা ব্যায়াম সুফল দ্রুত পাওয়া যায়। সকালের জলখাওয়ারের আগের ব্যায়াম শরীরের ফ্যাট বার্ন করে। ঘুম থেকে উঠে নির্দিষ্ট সময় শরীরচর্চা করুন।এতে মেদ দ্রুত ঝরবে। এছাড়া ভোরে ব্যায়াম করার অভ্যাস থাকলে সেটি আমাদের শরীরকে সক্রিয় রাখে দিনভর।জোগান দেয় প্রয়োজনীয় এনার্জিরও। যে কোনও ধরনের ব্যায়াম করা যায়, যেমন দড়িলাফ,দ্রুত হাঁটা,দৌড়, উঠবস ও ভারোত্তোলন।যেটা সুবিধা হয় এবং ভাল লাগে এমন ব্যায়াম বেছে নিয়ে সকাল সকাল ব্যায়াম করে ফেলুন।
মেডিটেশন করুন : মানসিক চাপ এবং স্ট্রেসের কারণে শরীরে কর্টিসল নিঃসৃত হয়। এটি একটি স্ট্রেস হরমোন। কর্টিসল ওজন বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত মেডিটেশন করুন। সারা দিন নিজেকে চনমনে রাখতে মেডিটেশন বা ধ্যানের বিকল্প নেই। মেডিটেশন এনার্জি বাড়াতে, স্মৃতিশক্তি এবং ফোকাস বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ জলখাওয়ার গ্রহণ করুন : অনেকেই তাড়াহুড়োয় সকালের জলখাওয়ার খান না । এটি খুবই খারাপ অভ্যাস। সকালে ভরপেট জলখাওয়ার খান। তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন রাখবেন। কারণ,সকালের জলখাওয়ার পুরো দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার।ভারী প্রোটিন খেলে পেট লম্বা সময় অবধি ভরা থাকবে এবং বারবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যাবে। অবশ্যই সকালের খাবার হতে হবে ঘরে তৈরি। ঘরের খাবারে পুষ্টিগুণও সঠিক পরিমাণে থাকে। বাইরের ভারী খাবার পরিমাণে অল্প খেলেই শরীরে দ্রুত ফ্যাট জমে। সকালের জলখাবারে একটু গোল মরিচের ঝাল যোগ করতে পারেন। কারণ গোলমরিচ ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। এটিও ওজন কমানোর ভাল উপায়। পেশিকে শক্তিশালী রাখার পাশাপাশি মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
জলখাবার উপভোগ করুন : ওটস, চিড়া, অঙ্কুরিত ছোলা, ডিম, দুধ সকালের জলখাবারে রাখুন। জলখাবার খাওয়ার সময় তা উপভোগ করা জরুরি। এই সময়ে টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখা যাবে না। এতে অমনযোগী হয়ে খাবারের স্বাদ-গন্ধ কিছু পাওয়া যায় না। খাবার ভাল করে চিবিয়ে খেলে কমবে আপনার ওজন।
স্বাস্থ্যকর পানীয় : অনেকেরই চা কিংবা কফি না খেলে দিনের শুরু হয় না। তবে খুব আয়োজন করে চা কিংবা কফি খাওয়া উচিত নয়। কফিতে দুধ, চিনি, ক্রিম বা ফ্লেভারের ব্যবহার ক্ষতিকর। আর দুধ চায়ের বদলে সকালের পানীয় হিসেবে গ্রিন টি বেছে নেওয়া যেতে পারে। গ্রিন টি ওজন দ্রুত কমাতে কাজ করবে। গ্রিন টির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের বিপাকে সাহায্য করে।
ক্যালরির হিসাব : প্রাতরাশে কতটুকু ক্যালরি খাচ্ছেন, ওজন কমাতে তার হিসাব রাখতে হবে। এতে প্রতিদিনের খাবারের মাপ ও পরিমাণ এক থাকবে। তার সঙ্গে সকালে ওজন মাপার অভ্যাস করা উচিত। এতে ওজন কমানোর মানসিক প্রস্তুতি ও ইচ্ছা তৈরি হয়। ওজন মাপার নিয়ম হচ্ছে সকালে বাথরুম সেরে খালি পেটে মাপা। প্রতিদিন একই ধরনের কাপড় পরে ওজন মাপার চেষ্টা করা উচিত। এরপর ওজন একটি চার্টে বা ক্যালেন্ডারে টুকে রাখা উচিত।
ঠান্ডা জলে স্নান : অনেকেই গরম জলে স্নান করা পছন্দ করেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, ঠান্ডা জলে স্নান ওজন কমাতে সাহায্য করে। এতে শরীরের হজমশক্তি বাড়ে। ওপরে দেওয়া নিয়মগুলির মধ্যে শুধু একটা নিয়ম মানলাম আর ভাবলাম, একটা নিয়ম মানলেই আমার ওজন কমে যাবে। সেটি একেবারেই ভুল ধারণা। যেমন, সকালে উঠে ব্যায়াম করলাম তারপর ২ প্লেট ভাত খেয়ে নিলাম। তবে ওজন কোনও দিনই কমবে না। ওজন কমাতে হলে সমস্ত পয়েন্ট একসঙ্গে মানতে হবে। তবেই নিশ্চিতভাবে ওজন কমানো সম্ভব হবে। আর ওজন কমলে আপনি মানসিক ও শরীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন।