সঙ্কটের মধ্যেও বৈরিতা

 সঙ্কটের মধ্যেও বৈরিতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বন্যাবিধ্বস্ত পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। প্রতিবেশী দেশের অবস্থা দ্রুত স্বাভাবিক হোক এই প্রত্যাশা করে টুইট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । দুই দেশের দীর্ঘদিনের বিবাদ ভুলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ভারত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিবেশীর দুঃসময়ে পাশে থাকবে এটা অন্যায়ের কিছু নয় । কারণ এরই মধ্যে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় চার কোটি মানুষ ব্যাপক সঙ্কটের মুখে পড়েছেন । হাজার হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গেছে । এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটে জেরবার পাকিস্তান গত বেশ কিছুদিন ধরে খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে ।

এবার বন্যাজনিত পরিস্থিতিতে সে দেশে খাদ্যসঙ্কট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে । নয়াদিল্লীর তরফে সমবেদনা জানানোর পর পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল ভারত থেকে খাদ্যশস্য এবং সব্জি পাঠানোর জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন । কিন্তু নয়াদিল্লী আপাতত পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শুধুই সমবেদনা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বেদনা প্রকাশের মধ্যেই বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে । কারণটা পরিষ্কার , প্রতিবেশী হলেও দেশটির নাম হচ্ছে পাকিস্তান । সে কারণেই ভারত আগে – পিছে সাত – পাঁচ ভেবেই ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে । এক্ষেত্রে ভারত যদি সত্যি সত্যিই পাকিস্তানের প্রতি মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তবে সেটার কূটনৈতিক তাৎপর্যও হবে অনেক দূর ।

pakistan-flood-ap-1661934657

কারণ ২০০৫ সালে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত পাকিস্তানকে সাহায্যের জন্য এবং ২০১০ সালে ভয়াবহ বন্যার কবলে কার্যত দিশেহারা পাকিস্তানকে ব্যাপক পরিমাণে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নয়াদিল্লী । খাদ্যপণ্য ছাড়াও বস্ত্র , ওষুধ , ত্রিপাল , পলিথিন , বাসগৃহ নির্মাণের সরঞ্জাম সহ উদ্ধারকারী দলকেও পাকিস্তানকে পাঠিয়েছিল ভারত । শুধু তাই নয় , ২০১০ সালে ভয়াবহ বন্যায় প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল পাকিস্তানে । কিন্তু কেন্দ্রের তৎকালীন ইউপিএ সরকার অতীতের সমস্ত মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে বিপন্ন দিনে প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে এতটুকুও পিছপা হয়নি । এই প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে পাকিস্তানকে সাহায্য পাঠানোর প্রশ্নে সাউথ ব্লক যথেষ্ট দ্বিধায় রয়েছে ।

কারণটা হলো , পাক অর্থমন্ত্রী যদিও জানিয়েছিলেন , বিশ্বের বেশকিছু দেশ বন্যাদুর্গতদের স্বার্থে খাদ্যবস্তু আমদানি করার জন্য পাকিস্তানের কাছে অনুরোধ করেছে । এবং পাকিস্তানের চাহিদার পরিমাণ যাচাই করে ভারত থেকে সবজি আমদানি করার বিষয়ে পাকিস্তান সরকার সিদ্ধান্ত নেবে । পাক অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর পরই পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন । শাহবাজ জানান , ভারত থেকে পাকিস্তান তখনই কিছু আমদানি করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করবে যখন দুই দেশের মধ্যে কাশ্মীরের বিবাদিত জমির বিষয়টি নিয়ে কোনও সমাধান হবে । পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের এই বক্তব্যকে খুব ভালো চোখে দেখছে না সাউথ ব্লক ।

বন্যায় বিপন্ন পাকিস্তানের প্রতি নয়াদিল্লীর সমবেদনা বার্তার পর পাক প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের বক্তব্য যে আসলে ভারতের প্রতি কঠোরতা এবং পরোক্ষে সন্ত্রাসীদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা তা দিল্লীর পক্ষে বোঝার বাকি কিছু নেই । কারণ বন্যাবিধ্বস্তু পাকিস্তানকে সাহায্য করার সঙ্গে কাশ্মীরের সমস্যাকে এক সরল রেখায় এনে দাঁড় করানো কোনও মতেই পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর সহৃদয়তার পরিচায়ক নয় । তাছাড়া ২০১৯ সালের আগষ্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ভারত সরকার প্রত্যাহার করার পর ভারত থেকে পণ্য আমদানির উপর ইসলামাবাদ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে , যা আজও বন্ধ আছে । এই অবস্থায় পাকিস্তান বন্যায় সাহায্য পাঠানোর পর যদি ফের ওপারা থেকে ভারতের জন্য সন্ত্রাসবাদ উপহার দেওয়া হয় সেটা কোনও ভাবেই মোদি সরকারের জন্য সুখের বার্তা নয় । এই অবস্থায় ভারতের করণীয় কী হবে তা নিয়ে দ্বিধায় নয়াদিল্লী । কিন্তু এতে পরিস্থিতি নতুন করে জটিল হয়ে উঠে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.