সত্য প্রকাশ্যে আসবে!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

একটা কথা বরাবরই সবাই আমরা শুনে থাকি যে, সত্যকে কখনো এ চিৎকার করে বলতে হয় না’আমি সত্য’।বরং মিথ্যা-প্রবঞ্চনাই নিজের অসাধু চেহারা ঢাকার জন্য ‘আমিই সত্য’, ‘আমিই পবিত্র’ বলে ঢাক পেটায়। ‘বিশ্বগুরুর দেশে’ উচ্চশিক্ষার পবিত্র মন্দিরে দিনদুপুরে যখন ডাকাতি- লুঠপাট-রাহাজানি চলে, তখন অসত্যের অপবিত্র চিৎকারের কথাই বারবার মনে উঁকি দেয়।স্বাধীনতার অমৃতকাল পেরিয়ে ২০২৪ সালে দেশে উচ্চশিক্ষার একাধিক প্রবেশিকা পরীক্ষায় যে নির্লজ্জ পতন একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে, তাতে দেশে শিক্ষাব্যবস্থার ভিতটাই যে সম্পূর্ণ টলে গেছে তা নিয়ে সংশয়ের আর কিছু অবকাশ নেই।
গোটা দেশ যখন গত ৪ জুন অধীর আগ্রহে লোকসভার ভোটের ফলাফল জানার জন্য মুখিয়ে আছে,সেইদিনই ভোটের রেজাল্টের ডামাডোলের মধ্যে দুর্নীতির ষোলকলা পূর্ণ করে মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল প্রকাশ করল এনটিএ অর্থাৎ ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি।অথচ নিটের ফল ঘোষণার নির্দিষ্ট তারিখ ছিল ১৪ জুন। কিন্তু আচমকা
সবাইকে ঘুমে রেখে ১০ দিন আগেই ভোটের ফল প্রকাশের হট্টমেলার মধ্যে রাতারাতি ফল প্রকাশ করে দেওয়া হয়। কিন্তু গোল বাধে কয়েকটি সন্দেহজনক ঘটনা ঘিরে। ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় ৭২০ নম্বরই পেয়ে বসেন ৬৭ জন। যা কস্মিনকালেও ঘটেনি। দ্বিতীয় সন্দেহজনক ঘটনাটি হলো নীট পরীক্ষায় একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ৪ নম্বর পান পরীক্ষার্থী।আর ভুল উত্তর হলে ১ নম্বর কাটা
যায়।অর্থাৎ কোন পরীক্ষার্থী ১ টি প্রশ্নের উত্তর ভুল লিখলে ৫ নম্বর বাদ যাবে।কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায় ৭২০-এর মধ্যে ৭১৭ বা ৭১৮ নম্বর পেয়েছেন অনেকে,যেটা অসম্ভব ঘটনা। এ বছর ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী নিট পরীক্ষায় বসেছেন।দেশের মধ্যে ৫৭১ টি এবং দেশের বাইরে ১৪টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়।নির্বাচনি ফলের উল্লাস আর হইচইয়ের মধ্যে নিটের এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে
ধরা পড়বে না এই আশা নিয়েই হয়তো ১০ দিন এগিয়ে এনে ৪ জুন।ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। কিন্তু ‘ফিজিক্সওয়ালা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নিট দুর্নীতি ও প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হতেই কম্পন শুরু হয়।শুরুতে যদিও কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ও এনটিএ যারা গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল তারা।গোটা বিষয়টি অস্বীকার ও চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং নিজেদের পবিত্রতার বড় বড় বুলি আওড়াতে থাকে।কিন্তু যত দিন যেতে থাকে,দুর্নীতির গর্ভগৃহ থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আকাশকে গ্রাস করতে থাকে। একের পর এক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয় তদন্ত।প্রাথমিক তদন্তে এই
পর্যন্ত ১৩ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক গ্রেপ্তার হয়েছে। দেখা গেছে পরীক্ষায় দু-তিন দিন আগে থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে।৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক-একটি প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়েছে।কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গুজরাট, বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতির শিকড়ে টান পড়েছে। বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নিটে ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেস মার্কস দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।কিন্তু কেন এই মার্কস দেওয়া হলো এর ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টে দিতে পারেনি সরকার।


ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার এবারের কেলেঙ্কারি দুর্নীতির অঙ্কে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে। অসদুপায়ের এই ঘটনায় গুজরাটের গোধরা এবং বিহারে এমন তিনটি কোচিং সেন্টারের হদিশ পাওয়া গেছে যেখানে ওড়িশা, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড থেকে এসে পড়ুয়ারা পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।এই সেন্টার গুলিতে পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিটে সঠিক উত্তর লিখে দিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষক।কার্যত এই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছিল টাকার কাছে।বেশ কিছু পরীক্ষাকেন্দ্রে কোনও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। ৭০ লক্ষ টাকা কিংবা ব্ল্যাঙ্ক চেকের বিনিময়ে এই নৈরাজ্য সংঘটিত হয়েছে, যার সামান্য অংশই এই পর্যন্ত তদন্তে উঠে এসেছে।নিটের এই কলঙ্কএনটিএ পরিচালিত আরও বেশকিছু পরীক্ষার উপরও ছায়া ফেলেছে।এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা হয় বাতিল করা হয়েছে কিংবা স্থগিত রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ঘটনা, পরীক্ষার পূর্ব সন্ধ্যায় নিট-পিজির পরীক্ষাও আচমকা স্থগিত করা হয়েছে। মুখ বাঁচাতে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রক এনটিএর
ডিরেক্টরকে অপসারণ করেছেন।আসলে নিট দুর্নীতিতে এ পর্যন্ত যা প্রকাশ্যে এসেছে তা দুর্নীতির হিমশৈলের চূড়ামাত্র।গোটা দেশ এই দুর্নীতি কাণ্ডে স্তম্ভিত। পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই দুর্নীতি কাণ্ডে রাস্তায় নেমেছেন।তোলপাড় গোটা দেশ। শিক্ষা সংক্রান্ত দুর্নীতি দেশে এই প্রথম নয়। মেডিকেল পরীক্ষা নিয়ে মধ্যপ্রদেশে ‘ব্যাপম’ দুর্নীতি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।সেই ব্যাপম কেলেঙ্কারির একটি চূড়ান্ত রূপ হল নিট দুর্নীতি।চাকরি নিয়ে এদেশে একাধিক অনিয়ম ঘটেছে।পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস পরীক্ষায় দুর্নীতি, উত্তরপ্রদেশে পিএসসি পরীক্ষায় কলঙ্ক, আমাদের রাজ্যে ১০,৩২৩ চাকরি ঘোটালা-সব কিছুকে ছাপিয়ে দুর্নীতির হাঙরেরা যেভাবে শিক্ষার মেরুদণ্ডকে এবার গিলে খেয়েছে তা গোটা জাতিকে এবং সমাজকে এক গভীরতর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। একটা জাতিকে ও সমাজকে পুরোমাত্রায় ধ্বংস করার জন্য শিক্ষার কাঠামোকে গিলে খাওয়ার এই ন্যাক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে সমাজের সব অংশের মানুষকে এই গভীর সংকটের মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। মানুষ হিসাবে সভ্যতাকে রক্ষা করার জন্য এর চেয়ে বিকল্প আর কোন পথই খোলা নেই সামনে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

2 mins ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

25 mins ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

55 mins ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago