সত্য সামনে আসুক!!

 সত্য সামনে আসুক!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যে সব রাজনৈতিক দল ব্রিগেড সমাবেশ নিয়ে গর্ব করে,তারা অবাক বিস্ময়ে দেখেছে তাদের ব্রিগেডের জনসংখ্যার থেকে বিশগুণ বেশি জমায়েত ছিল সারা পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম,শহর, নগর জুড়ে।পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, বিদেশের বিভিন্ন শহরে কার্যত দাবানলের মতো প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। স্মরণকালের মধ্যে এমন সর্বব্যাপী নাগরিক আন্দোলনের সাক্ষী থাকেনি এ দেশ।বিস্ময়করভাবে আছড়ে পড়া প্রতিবাদে উপস্থিতির ষাট থেকে সত্তর শতাংশ নারী।উপস্থিতির জন্য কোনও চাপ ছিল না, অর্থের লোভ ছিল না, যানবাহনের সুবিধা ছিল না, পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও নিরাপত্তার আশ্বাস ছিল না।তবুও এক আশাতীত স্বত:স্ফূর্ত জমায়েত।সমস্ত লজ্জা-সঙ্কোচ,ভয়, বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে নারীরা মধ্যরাতে রাস্তার দখল নিয়েছিলেন।সমর্থক হিসেবে সমব্যথী পুরুষের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। দাবি ছিল,কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পড়ুয়ার পৈশাচিক-নারকীয় হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত ‘অপরাধীদের’ গ্রেপ্তার এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। অবস্থান ও মিছিলে ক্ষুদ্র অথচ তীক্ষ্ণ স্লোগান -‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।বিচার চাই, সুরক্ষা চাই,স্বাধীনতা চাই, সমানাধিকার চাই।তার সঙ্গে ছিল আবৃত্তি,গণসঙ্গীত,ছবি আঁকা,পোস্টার তৈরির কাজ। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়,ভারতের ইতিহাসে এ রকম নারীজাগরণ, নারীঅভ্যুত্থান আগে কখনও হয়েছে কিনা জানা নেই।
আর জি কর কাণ্ড নারী সমাজের কাছে একটা ভয়ঙ্কর আতঙ্ক,একটা হৃদয় মোচড়ানো চাপা কান্না, একটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। কন্যাসন্তানের অভিভাবকদের কাছে নিদারুণ ভয় ও আতঙ্ক। স্বভাবতই এই জনবিক্ষোভ বঙ্গের শাসক তৃণমূলের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।এক্ষণের প্রশ্নটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সিবিআই কতদিনে কলকাতার ‘অভয়া’ কাণ্ডের তদন্ত গুটিয়ে এনে প্রকৃত অপরাধীদের স্বরূপ প্রকাশ্যে নিয়ে আসবে।তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে সিবিআই কর্তৃক দোষী সাব্যস্তকরণ অর্থাৎ সাফল্যের হার ৭১.৪৭ শতাংশ,২০২২ সালে ৭৪.৫৯ শতাংশ, ২০২১ সালে ৬৯.১৯ শতাংশ।মোদি সরকারের আগে ইউপিএ জমানায় যেমন ২০১১ সালে সিবিআইয়ের সাফল্যের হার ছিল ৬৭ শতাংশ, ২০১০ সালে ছিল প্রায় ৭১ শতাংশ। অর্থাৎ গড়ে ৭০ শতাংশ ধরে নেওয়া যায়।পুলিশ ও প্রশাসন যখন অপরাধের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়, তখন ডাক পড়ে ইডি বা সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।ভারতীয় নাগরিকেরা বিশ্বাস করেন, এদের তদন্ত হবে আগাগোড়া রাজনীতির প্রভাবমুক্ত।তবে ভারতে আদর্শ আর প্রকৃতের মধ্যে তফাত অনেক।তাই ইদানীং আমরা দেখছি, ইডি-সিবিআইও তিরস্কৃত হচ্ছে আদালতে।বিআরএস নেত্রী,তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা কালভাকুন্তলা কবিতাকে গত মাসে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট।আবগারি নীতি সংক্রান্ত আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ইডি ও সিবিআইয়ের করা মামলায় কারাবন্দি ছিলেন তিনি।শীর্ষ আদালত তদন্তের চরিত্র নিয়েই প্রশ্ন তুলে বলে,কেন তদন্তকারী সংস্থা মামলার অন্যতম অভিযুক্তকে গোড়ায় রাজসাক্ষী করে,পরে তাকেই আবার পেশ করেছে সাক্ষী হিসেবে?আজ যাকে ধরলাম কাল তাকে ছেড়ে দিলাম, যখন যেমন মনে হল তেমনভাবে সাক্ষী বা তদন্তের খুঁটিনাটি পাল্টালাম,এই প্রবণতাটি ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচারের আশা জোগায় না, বরং সন্দেহের উদ্রেক করে।বিরোধী থাকার সময় বিজেপি সিবিআইকে বলত ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’।আবার বর্তমান বিরোধীরা বারংবার অভিযোগ করেন যে, তাদের নির্মূল করতে ইডি বা সিবিআই পরোক্ষে কেন্দ্রীয় সরকারেরই হাত শক্ত করছে। মহারাষ্ট্রে দুই বছর আগে শিবসেনা নেতা একনাথ শিন্দে এবং গত বছর এনসিপি-র অজিত পাওয়ারের সদলবলে বিজেপিতে যোগদানের পর কথা উঠেছিল,ইডি- সিবিআইয়ের ভূত তাড়া করছিল বলেই এরা বিজেপির কাছে নিজেদের সঁপে দিয়েছেন।যে এনসিপি নেতা প্রফুল্ল প্যাটেল গত বছর জুলাই অবধিও ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স-এয়ার ইন্ডিয়া সংযুক্তকরণের মামলায় ইডির তরফে একের পর এক সমনে ব্যতিব্যস্ত হচ্ছিলেন,রাতারাতি তিনিও পেয়ে গেলেন সিবিআইয়ের ক্লিন চিট।গত বছর নভেম্বরে রাজস্থানের অ্যান্টি-করাপশন ব্যুরো এক চিটফাণ্ড মামলায় পনেরো লক্ষ টাকা করে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে দুই ইডি আধিকারিককে গ্রেপ্তার করেছিল।
এতদসত্ত্বেও, কেন্দ্র অথবা রাজ্য প্রশাসনও যখন অভিযুক্ত হিসেবে কাঠগড়ায় থাকে, তখন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে আদালতেরও আগে সিবিআইয়ের মতো ‘প্রিমিয়াম’ তদন্তকারী সংস্থাই ভরসা।সেই ভরসা থেকেই গোটা দেশের মানুষ চাইছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে আর জি করের নৃশংস-নারকীয় ঘটনার সত্য সামনে আসুক দ্রুতলয়ে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.