এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

নরেন্দ্র মোদির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো, মনের মণিকোঠার বিষয়টিকে তিনি সামনে নিয়ে আসেন ‘অ্যাম্পিফ্লাই’ তথা বিবর্ধন করে।একেবারে মেগা ইভেন্টের রূপ দিয়ে নিজের ভাবনার ফলিত প্রয়োগ ঘটান তিনি।বাকিদের কাছে এই শৈলী অনুকরণযোগ্য বললে অত্যুক্তি হয় না।মোদি আদ্যন্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।যে কোনও সামান্য বিষয়কেও প্রচারের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারে তিনি অত্যন্ত পারঙ্গম।জি ২০-র আগেও ভারতের বুকে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।জি ২০ শিখর সম্মেলন কুড়িটি দেশে সীমাবদ্ধ।চল্লিশ বছর আগে,

১৯৮৩ সালে দিল্লীতে আজকের জি ২০-র মতোই ভারতের সভাপতিত্বে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পৌরোহিত্যে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির শিখর সম্মেলনে শতাধিক দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা এসেছিলেন।উপস্থিত হয়েছিলেন ফিদেল কাস্ত্রোর মতো নেতা। কিন্তু অত বড় সম্মেলন দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনের পরিসরেই আবদ্ধ ছিল।সেখানে জি ২০-কে বস্তুত পাড়াস্তরের আলোচনায় পৌঁছে দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।আকস্মিকভাবে পাঁচদিনের অকাল সংসদ অধিবেশনের ডাক দিয়েও বিষয়টিকে মেগা ইভেন্টের পর্যায়ে নিয়ে যান তিনি। ইত্যবসরে পাখা মেলে জল্পনা ও চর্চা।ধোঁয়াশার অবসান ঘটেছে।বোঝা গেছে, সরকারের সংক্ষিপ্ত এই অধিবেশনের লক্ষ্য মহিলা সংরক্ষণ বিল।উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।আপাতত বিষয়টি পর্বতের মূষিক প্রসবের অধিক কিছু নয়।নতুন সংসদ ভবনে অধিবেশনের প্রথমদিন রাজ্যসভায় যে বিলটি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী পেশ করেছেন সেখানেই বলা আছে,এই আইন আসন পুনর্বিন্যাসের পরে কার্যকর হবে।লিপিতে আছে, ‘বিল ২০২৩’, কিন্তু অন্তত ২০২৯ সালের আগে তা চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।ফলে চব্বিশের লোকসভা দূর-অস্ত,আটাশে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনেও এই আইন কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনী ক্ষীণ।সব মিলিয়ে এই আইন কবে কার্যকর হবে কেউ জানে না।আগের ইউপিএ সরকারের সঙ্গে এই বিলের মূল ফারাক হলো, পাঁচ নম্বর ধারা। তাতে বলা হয়েছে, আসন পুনর্বিন্যাসের পরে মহিলা সংরক্ষণ বিল কার্যকর হবে। নিয়ম অনুযায়ী, আসন পুনর্বিন্যাসের আগে জনগণনা করাতে হবে। ২০১১ সালে শেষ জনগণনা হয়েছিল। ২০২১ সালে ফের তা হওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্র কোভিডের যুক্তি দিয়ে তা পিছিয়ে দিয়েছে।এখন জনগণনা হওয়ার কথা ২০২৪-২৫ সালে। সেটা শেষ করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। তার পরে আসন পুনর্বিন্যাস কমিশন গঠন হবে।সেই কমিশন সংরক্ষণের মাপকাঠি প্রকাশ করবে। ২০২৬ সালে আসন পুনর্বিন্যাস হলে লোকসভার আসন সংখ্যা ৫৪৩ থেকে বেড়ে সম্ভবত আটশোর উপরে চলে যাবে। কোন্ রাজ্যে কতগুলি আসন বাড়বে, তা নিয়েও শুরু হবে রাজনৈতিক সংঘাত। এর কারণ জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন রাজ্যের ভূমিকা। তামিলনাড়ু, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করেছে,তুলনায় উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের মতো গো- বলয়ের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি।সেই সুবাদে ওই রাজ্যগুলিতে লোকসভা ও বিধানসভার আসনসংখ্যা বেড়ে যাবে।এর ফলে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিশেষত অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলির তুলনামূলক প্রতিনিধিত্ব কমে যাবে। ফলে তা নিয়েও একপ্রস্থ রাজনৈতিক বিরোধ অবশ্যম্ভাবী।যদি এখনই আইন করে এই বিল চালু করা না যায় তাহলে তড়িঘড়ি বিশেষ অধিবেশন ডেকে ওই বিল পাস করানোর কী প্রয়োজন পড়লো ?বছরের শেষ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদি সরকারের নিছক রাজনৈতিক চমকের একটি ইভেন্টও এটি হতে পারে। হতে পারে বিষয়টিকে প্রচারের তুঙ্গে নিয়ে গিয়ে দেশের অর্ধেক আকাশকে কাছে টানার রাজনৈতিক কৌশল।কারণ বিজেপির অন্দরেই সকলে এই বিলের পক্ষে নন। যেমন যোগী আদিত্যনাথ স্বয়ং।

২০১০ সালে মনমোহন সরকার রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাস করিয়ে তা লোকসভায় পাস করানোর চেষ্টা করলে সে সময় গোরক্ষপুরের সাংসদ আদিত্যনাথ সোচ্চারে এর বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে সর্বাগ্রে বিজেপির মধ্যে এ নিয়ে ঐকমত্য তৈরি হওয়া জরুরির মতো ইত্যাকার সমীকরণ মাথায় রেখেও বলা যায়, নারীসমাজের সশক্তিকরণে তিনি যে সদা তৎপর, প্রধানমন্ত্রী সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন।সংসদে সংখ্যার জোর এবং কংগ্রেস, তৃণমূলের মতো বিরোধী দলগুলির সম্মতিতে পাঁচদিনের চলতি অধিবেশনেই এই বিল পাস হয়ে যাবে। দিনের শেষে নিক্তির হিসাবে দাঁড়াবে, মহিলা সংরক্ষণের প্রশ্নে অন্য প্রধানমন্ত্রীরা যা করে দেখাতে পারেননি, তাই করে দেখালেন নরেন্দ্র মোদি।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

20 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago