সফর তাৎপর্যপূর্ণ

 সফর তাৎপর্যপূর্ণ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ত্রিপুরা সফরের সরকারী সুচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বুঝিতে হইতেছে ত্রিপুরায় ভোট আসিয়া গিয়াছে। নানান দলের তৎপরতা ছিল অনেক আগে হইতেই কিন্তু সরকারী দল অর্থাৎ বিজেপির তরফে জনজমায়েত করিয়া ভোটের ঢাকে কাঠি দেওয়া হয় নাই। যতক্ষণ পর্যন্ত এই কর্মটি না হইতেছে ততক্ষণ অবধি ভোটের ময়দান জমিয়া ক্ষীর হইবে না। অনুমান করা যাইতেছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ হইতেই ময়দানে নামিবে সকল দল। সরকারী দল বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএম আগরতলায় বড়সড় জমায়েত করিয়া দিয়া তাহারা ঘোষণা দিয়াছে বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী।

Picsart_22-12-08_15-08-37-273

বিজেপির আপাত প্রতিপক্ষ তিপ্রা মথা আরও বড়সড় জমায়েত দিয়া সেই কথাই ঘোষণা দিয়াছে।মথাকে আপাত প্রতিপক্ষ বলা হইতেছে কারণ মথার অবস্থান এখনও স্পষ্ট নহে। গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের দাবিতে তাহারা গোঁ ধরিয়াছে। তাহাদের ঘোষণা, যে দল তাহাদের দাবির সপক্ষে লিখিত দিবে তাহার সঙ্গেই থাকিবে তিপ্ৰা মথা। যে দল বলিতে সকল দলকে বোঝানো হইলেও সকল দলের কাছ হইতে আবার লিখিত চাহিতেছে না মথা।অর্থাৎ দিল্লী কিংবা রাজ্য কোথাও যেহেতু কংগ্রেস বা সিপিএম নাই তাই তাহাদের লিখিত প্রতিশ্রুতিরও কোনও মূল্য নাই মথার নিকট। লিখিত তাহারা এই ক্ষেত্রে বিজেপির কাছ হইতেই চাহিবে। কিন্তু গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের দাবি লিখিত আকারে দিতে গেলে সমস্যা থাকিবে বিজেপির।

IMG-20221121-WA0014

ইহাতে বৃহত্তর অউপজাতি সমাজের ভোট বা সমর্থন বিগড়াইয়া যাইতে পারে। কিন্তু তাই বলিয়া কি মথাকে বাগে আনিবার কোনও পন্থা ডবল ইঞ্জিনের বিজেপির হাতে নাই? রাজ্য পরিস্থিতি লইয়া দিল্লীতে দলের নেতাদের বৈঠকে সকল বিষয়ে আলোচনার পর দল ত্রিপুরায় ভোটে যাইবার আগে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত লইয়াছে। নির্দিষ্ট করিয়া কয়েকজন নেতাকে সেই দায়িত্ব দেওয়াও হইয়াছে। আর বিজেপি যে জোটবান্ধব হিসাবে মথাকেই সহিত চাহিবে উহা সকলেরই জানা। গত দুই-তিন মাসে মথা নেতৃত্বের সঙ্গে তাহাদের একাধিক বৈঠকও হইয়াছে। সবই অসফল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ত্রিপুরা সফরের পরও এই ধরনের বৈঠক অসফল থাকিবে এমন কথা বলা যাইবে না।

IMG_20221207_193216

গত তিন মাসের রাজনৈতিক যে ঘটনাপ্রবাহ তাহাতে রাজ্যের বিরোধী দল সিপিএম, কংগ্রেসের সহিত মথার সখ্যতা অধিক দেখা গিয়াছে। মথার নিকট বাকি দুই দলের তরফে অনুরোধ গিয়াছে, জোট হোক বা না হোক, তিন দল একসঙ্গে বসিয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আবেদন জানাইবে। ঘটনা সেই দিকেই আগাইতেছিল, এখনও সেই অভিমুখেই রহিয়াছে, কিন্তু যৌথ ঘোষণা আর হইয়া উঠিতেছে না। যদি ধরিয়া লওয়া যায় আঠারো ডিসেম্বরের আগে আর এই যৌথ ঘোষণা হইয়া উঠিল না আর আঠারো ডিসেম্বরের মঞ্চে দাঁড়াইয়া প্রধানমন্ত্রী মোদি তিপ্রাল্যাণ্ড ব্যতীত এডিসির বকেয়া পড়িয়া থাকা সকল দাবি মানিয়া লইলেন, তখন?

IMG-20221121-WA0012

যদি এমন হয়, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের উপজাতিদিগের ভাষা, লিপি, ক্ষমতা হস্তান্তর, সরাসরি অর্থপ্রদান সকলই কল্পবৃক্ষের মতোন মানিয়া লইবার ঘোষণা দিলেন, তাহা হইলে মথার অন্দরে কি এই লইয়া নতুন করিয়া দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দিবে না ? মথা আজ যেমন বিজেপির প্রতিপক্ষ হিসাবে অবতীর্ণ রহিয়াছে সেই অবস্থান কি তাহারা ধরিয়া রাখিতে পারিবে ?কে জানে প্রধানমন্ত্রী মোদি আগরতলায় নির্বাচনি সভা করিতে আসিতেছেন। তাহার দল তাহার মুখ দিয়া রাজ্যের জন্য সর্বাধিক নানান প্রকল্পের কথা ঘোষণা করাইয়া লইবে,ইহাই স্বাভাবিক। সরকার কিংবা দলের সামনে এই সময়ে একটাই অগ্রাধিকার, সে হইলো আসন্ন নির্বাচনে দলকে জিতাইয়া আনা।

আর এই মনোবাসনা পূরণে সহজ পথ মথাকে জোটসঙ্গী হিসাবে পাওয়া। ফলে প্রধানমন্ত্রী আগরতলার মঞ্চে দাঁড়াইয়া এই বিষয়ে আলোকপাত করিবেন এমন ধরিয়া লইতে হয়। আর সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ত্রিপুরায় তেইশের নির্বাচনের আগে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি কী বলিবেন তাহার প্রেক্ষিতেই বিরোধী দলগুলিও নিজ নিজ কৌশল স্থির করিবেন। তৈরি করিবে রণকৌশল। ফলে তাহারাও শুনিতে চাইছে, কী বলিতেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুজরাট, হিমাচলের ভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি ত্রিপুরায় অবতরণ নিঃসন্দেহে জাতীয় রাজনীতিতেও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হইতেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.