সবকা সাথ!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-সবকা সাথ,সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস,সবকা প্রয়াস। যদিও বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীর মুখনিঃসৃত বহুলচর্চিত ওই বক্তব্যকে অনৃত আখ্যা দিয়ে পাল্টা বলেন,আইনের শাসনের তোয়াক্কা না করে যখন নির্দিষ্ট একটি সম্প্রদায়ের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে তাদের কোণঠাসা করার যে বার্তা শাসকের তরফে দেওয়া হয়,তা প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের একশো আশি ডিগ্রি বিপরীত।সম্প্রতি আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসি-এর একটি গবেষণা সংস্থা ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নেমে আসা ঘৃণাভাষণের ঘটনার হিসাব কষে দেখিয়েছে,মোট ঘটনার প্রায় ৭৫ শতাংশই ঘটেছে নানা বিজেপি-শাসিত রাজ্য,কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং দিল্লীতে-যার পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি কেন্দ্রাধীন।বিজেপি সম্পর্কে বিরোধীদের আরও একটি অভিযোগ,এক একটি গোষ্ঠী পরিচয়ের মধ্যে যে বিভিন্ন স্তর,ভিন্ন ভাবনা,মতাদর্শগত পার্থক্য থাকে- রাজনৈতিক কৌশলে সেগুলিকে অগ্রাহ্য করে শেখানো হচ্ছে।সত্য এই যে, একটি অপ্রীতিকর ঘটনা, একটি রক্তাক্ত অতীত টেনে এনে সেই পরিচয়ের সকলের মাথায় একই ছাপ দেওয়া চলে না।বস্তুত,এমন বোধস্তুল বিভেদকামী মানসিকতা। প্রসঙ্গত, গত বছরই এক নির্দেশে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিল, ঘৃণাভাষণ গুরুতর অপরাধ।এতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোয় আঘাত লাগে।ঘৃণাভাষণ রুখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছিল।
গত শনিবার প্রথম দফায় বিজেপি যে ১৯৫ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে,তাতে স্পষ্ট,ঘৃণাভাষণ যাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সমচারিত্রিক হয়ে উঠেছে, তেমন কাউকে,সে তিনি বিদায়ী এবং দলের বড় অংশের কাছে জনপ্রিয় সাংসদ হলেও বিজেপি তাদের টিকিট দেয়নি।প্রথম তালিকায় বিজেপির ৩৩ জন সাংসদ টিকিট পাননি।শুধু দিল্লীর মোট সাত আসনে জয়ীদের মধ্যে টিকিট দেওয়া হয়নি চার জন সাংসদকে। এদের মধ্যে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে বাদ দিলে বাকি তিনজন হলেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি,পরবেশ ভার্মা ও রমেশ বিধুরি।মীনাক্ষী দেবীর বিরুদ্ধে বিরোধীরা কু-বচনের অভিযোগ মাঝে-মধ্যে তুললেও শেষোক্ত দুই লাংসদ পরবেশ ও রমেশ এ বিষয়ে যে বিশেষ ‘খ্যাতিসম্পন্ন’, গত কয়েক বছরে তারা নিজেরাই দেশকে জানিয়েছেন।সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও দিল্লীতে সামপ্রদায়িক হিংসার সময় পরবেশ ভার্মার ঘৃণাভাষণ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি।
পাশাপাশি, রমেশ বিধুরি সাম্প্রতিককালে লোকসভায় বহুজন সমাজ পার্টির নেতা দানিশ আলির বিরুদ্ধে যে অসংসদীয়,তদুপরি অশ্লীল
শব্দ উচ্চারণে তার জাতি পরিচয়ে আঘাত করেছিলেন, লোকসভার ইতিহাসে তা কোনওদিন হয়নি।অতএব, পরবেশ ও রমেশকে ছেঁটে
ফেলে বিজেপি নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে বুঝাতে চেয়েছেন, কেউ ঘৃণাভাষণে দড় হলে সে দায় একান্তই তার, দল বিশ্বাস করে ‘সবকা সাথ’ তত্ত্বে।এখানেই শেষ নয়।প্রথম তালিকায় বাদ গেছেন মধ্যপ্রদেশের ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর। বিরোধীরা একাধিক সময়ে তার বিরুদ্ধে সরাসরি ‘মুসলমান বিদ্বেষ’ ও ঘৃণাভাষণের অভিযোগ এনেছেন।টিকিটনা পেয়ে প্রজ্ঞা স্বয়ং বলেছেন, সম্ভবত তার মন্তব্য ও মতামত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পছন্দ হয়নি, তাই তাকে প্রার্থী করা হয়নি।পাশাপাশি, উত্তরপ্রদেশের কাইজারগঞ্জের বিতর্কিত সাংসদ তথা ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরং সিংয়ের নামও প্রথম তালিকায় ঘোষণা করা হয়নি। কাইসারগঞ্জ লাগোয়া বারাবাঁকি, ফৈজাবাদ, গোন্ডা ও শ্রাবস্তী আসনে প্রার্থীদের
নাম ঘোষণা করা হলেও ব্রিজভূষণের কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম সম্ভবত সচেতন ভাবেই বাদ রাখা হয়েছে। ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন
নিপীড়নের অভিযোগে দিল্লীর রাজপথে নেমে সরব হয়েছিল দেশের পদকপ্রাপ্ত কুস্তিগিরেরা।তাই নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে কম অস্বস্তি
পোহাতে হয় নি।অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল কেন্দ্রে তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার বিরুদ্ধে ভোজপুরি সিনেমার নায়ক-গায়ক পবন
সিংকে প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু পর্দায় পবনের ভূমিকা ‘বাঙালি বিদ্বেষী’ এবং ‘মহিলাদের প্রতি অবমানাকর’ এই অভিযোগ তুলে তৃণমূলের প্রচারের মুখে নাম ঘোষণার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে নাটকীয়ভাবে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন পবন।এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতেই পারে যে, বিতর্ক এড়াতে দলের তরফেই তাকে সরে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে।তৃতীয় মোদি সরকার গঠিত হবে না,সময় বলবে।তবে বিজেপি নেতৃত্ব একেবারে প্রাথমিক পদক্ষেপে বিতর্কিত চরিত্রদের ডানা কর্তন করে সমাজে ‘সবকা-সাথ’-এর যে বার্তাটি দিয়েছেন, সেটি ইঙ্গিতবহ।