সম্পর্কের জটিলতা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারত ও চিনের মধ্যে কোন না কোন বিষয়ে বাদানুবাদ, বিতর্ক কিংবা বিরোধিতা নতুন কোন বিষয় নয়। তিব্বতের ধর্মগুরু দলাই লামার অরুণাচল সফরই হোক, কিংবা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর নির্মাণই হোক অথবা বঙ্গোপসাগরে ভারত-মার্কিন ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়াই হোক। চিন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের তিক্ততা নিরসন হওয়া তো দূরের কথা, বরং দিন যত গড়িয়েছে ততই পরিস্থিতি উত্তাল হয়ে উঠেছে।২০২১ সালে ১৫টি জায়গা চিন নিজেদের মানচিত্রে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেদের বলে দাবি করেছিলো। এই বছর আরেকটু আগ বাড়িয়ে গত এপ্রিল মাসে চিন তাদের মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশের ১১টি স্থানের নাম বদলে দিয়েছিল। এবার ২০২৩ সালের স্ট্যান্ডার্ড ম্যাপে অরুণাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করলো চিন সরকার। এবার তারা যে মানচিত্রটি প্রকাশ করেছে তাতে চিনের এলাকা হিসাবে অরুণাচলের পাশাপশি আকসাই চিন, তাইওয়ান এবং বিতর্কিত দক্ষিণ চিন সাগরকে যুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে চিন সরকারের প্রকাশিত এই মানচিত্রটি চিনের সরকারী সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস প্রকাশ করেছে। অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন এলাকাকে চিনের এলাকা বলে তাদের মানচিত্রে স্থান দেওয়ার বিষয়টি নতুন কোন ঘটনা নয়। চিন বরাবরই অরুণাচলকে দক্ষিণ তিব্বত হিসাবে প্রচার করে। কিন্তু অপরের জমি নিজের নামে প্রচার করলে তা নিজের হয়ে যায় না। যে কারণে ভারত-সব সময়েই চিনের এই হাস্যকর দাবির তীব্র ভাষায় আপত্তি জানিয়ে এর প্রতিবাদ জারি রেখেছে। শুধু তাই নয়, ১৯৬২ সালে চিন-ভারত যুদ্ধের সময় আকসাই চিন তারা দখল করেছে বলেও দাবি করছে বেজিং। বেজিং- এর এই আজগুবি দাবির কোন সারবত্তা কখনোই ছিল না। এমনকী এখনও নেই। আসলে এর পেছনে যে বিষয়টি কাজ করছে তা হলো চিনের উস্কানি অরুণাচল প্রদেশ আর আকসাই চিনকে মানচিত্র বদল করে চিনের ভেতর ঢুকিয়ে দিলেই বিষয়টি যেমন চিনের হয়ে যায় না, তেমনি এর বাস্তবতাকেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। বিকৃত মানচিত্র প্রকাশ করা চিনের দীর্ঘদিনের পুরনো কৌশল। শুধু ভারতেরই নয়, অতীতেও বেশ কিছু দেশের জমিকে নিজেদের বলে দাবি করে এসেছে চিন। কিন্তু চিনের এই দাবি কখনোই স্বীকৃতি পায়নি। ১৯৫০-এর দশক থেকেই চিন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে এই অপচেষ্টা জারি রেখেছে। মাত্র কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন সময়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধান মোদি এবং জিনপিঙ একান্তে বৈঠকও করেছিলেন। ২৩ আগষ্টের এই বৈঠক সম্পর্কে চিনা বৈদেশিক মন্ত্রক অবশ্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, ভারতের তরফে আগ্রহ প্রকাশ করার কারণেই নাকি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও নয়াদিল্লী পাল্টা বিবৃতি দিয়ে বেজিংয়ের এই দাবিকে মিথ্যাচার বলে অভিযোগ করে জানায়, চিনের তরফ থেকে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের বিষয়ে আগেই আবেদন জানানো হয়েছিল। যদিও বৈঠকে ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখায় স্থিতিশীলতা জরুরি বলে দুই নেতাই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। ব্রিকস সম্মেলনের রেশ না ফুরোতেই ফের অরুণাচল ও আকসাই চিন নিয়ে বেজিং আগ্রাসী চেহারায় ময়দানে নেমে পড়লো। মাত্র কয়েকদিন আগেই সীমান্তের স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে সেনা পর্যায়েও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লীতে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। সেই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবে ভারত এবং একই মঞ্চে তখন দিল্লীতে উপস্থিত থাকবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙ। ঠিক এর প্রাককালেই চিনের এই আচরণ ভারত-চিন সম্পর্কের আবহকে যে অনেকটাই জটিল করে তুলবে তা-ই নয়। পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশকে নিয়ে আবার ভারত-চিন সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন মোড় নিতে পারে—সেই আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। একদিকে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মঞ্চে ভারতের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখার জন্য আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন চিনা প্রধান। আবার অন্যদিকে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে উত্তেজনার পারদকে তুঙ্গে নিতে চাইছে লাল ফৌজ। একই সঙ্গে সীমান্তেও উস্কানিমূলক কাজ।এতটুকু ও বন্ধ করেনি চিন।সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনের কোন লক্ষ্যই যে তাদের নেই সেটা কাজেকর্মে নানাভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে বেজিং। এর থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, মুখে যতই শান্তিসুস্থিতির কথা চিনা প্রশাসন প্রচার করুক না কেন, তাদের প্রতিটি কাজের মধ্য দিয়ে সংঘাতের ইশারাই স্পষ্ট। কারণ পূর্ব লাদাখে চিন যে তাদের অবস্থানে বিশেষ রদবদল ঘটাতে আগ্রহী নয়, এই মানচিত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে বেজিং সেটাই বুঝিয়ে দিতে চাইছে। অন্তত জি২০ সম্মেলনের আগে লাদাখের সীমান্ত সমস্যার একটা সুরাহা হোক এতে কেন্দ্রীয় সরকার আগ্রহী হলেও বেজিংয়ের এই মনোভাবে স্পষ্ট – সম্ভবত সেটা হওয়ার নয় এবং চিন যে কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী সীমান্ত সমস্যা না মিটলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না- এই বক্তব্যকে যে আদৌ বেজিং ধর্তব্যের মধ্যে রাখতে চায় না, – নতুন মানচিত্র প্রকাশের মধ্য দিয়ে সেই বার্তাই দিয়ে রাখলো বেজিং।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

15 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

16 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago