সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

 সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

চার দিনের সফরে ভারতে এলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বজুড়ে করোনা অতিমারি হওয়ার আগে ভারতে এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী । তারপর এক এক করে তিনটি বছর কেটে গেছে । গত বছর ২০২১ সাল ছিল ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ তম বছর । আবার গত বছরই বাংলাদেশ তাদের স্বাধীনতার পঞ্চাশতম বছর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পালন করেছে ঢাকা । এই উপলক্ষ্যে গত বছর বাংলাদেশ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । ২০১৫ সাল থেকে ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত ১২ বার বিভিন্ন স্থানে দেখা সাক্ষাৎ ও কথা হয়েছে ।

দুই দেশের সম্পর্কের রসায়ন ও ঘনিষ্ঠতা বুঝতে এই পরিসংখ্যানের চেয়ে বড় তথ্য আর কিছু হতে পারে না । এমনই এক সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উষ্ণতার মধ্যে শেখ হাসিনার এবা কার এই চারদিনের ভারত সফর নানা দিক দিয়ে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে শেখ হাসিনার এই সফর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলের কাছেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । অনেকেই মনে করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যার এই সফরের মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে । বিশেষ করে এই ভারত সফরের প্রভাব বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেও নতুন মোড় নিয়ে আণতে পারে । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের মতে , এই সফর দুই দেশের জন্যই বহুমাত্রিক প্রভাব রাখতে চলেছে ।

UPSC-india-bangladesh-relations

বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বোঝাপড়া , আঞ্চলিক রাজনীতি , রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধজনিত কারণে জ্বালানি সহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহের ক্ষেত্রে যে বৈশ্বিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তাতে এই দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে । তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে আগামী বছর এবং তার পরের বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির পটভূমিতে এই সফরকে কোনভাবেই হাল্কাভাবে দেখার সুযোগ নেই । প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রে সর্বোচ্চ পদাধিকারীদের মধ্যে সফরকালে সাক্ষাৎসূচি মানেই হলো দুই রাষ্ট্রের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি এবং সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করা । এক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ভারত সফরও এর ব্যতিক্রম নয় ।

ভারতের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎপর্ব ছাড়াও মঙ্গলবার ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউসে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করবেন । মোদির দেওয়া রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা অংশ নেবেন । ভারতের বিদেশমন্ত্রী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে শেখ হাসিনার সৌজন্য সাক্ষাৎকারের কর্মসূচিও রয়েছে । এছাড়া কনফেডারেশন অব ইণ্ডিয়ান ইণ্ডাষ্ট্রিজ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা । হয়তো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে সেই অর্থে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর আর ভারত সফরের সুযোগ নেই । তাই এই সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তি , অপ্রাপ্তি , অবন্টিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি এই সফরকে বাড়তি মাত্রা দেওয়া হচ্ছে ।

ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক জোরালো করাই যে এবারের সফরের মূল বিষয় সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় । তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি ছাড়াও গম , পেঁয়াজ সহ ভারত থেকে জ্বালানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানীর বিষয়টি নিশ্চিত করা , ভারতের ব্যবহার না হওয়া বিদ্যুৎ বাংলাদেশে পাঠানো এই বিষয়গুলোও কোনভাবেই যাতে গুরুত্বহীন না হয়ে ওঠে সেটাও এবারের সফরে প্রাধান্য পাচ্ছে । ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্কের পটভূমিতে যে যোগসূত্র গড়ে উঠেছে তাকে আরও গতিশীল ও প্রাণবন্ত করাই যে এই সফরের অন্যতম লক্ষ্য সেটাও দুই দেশই মনেপ্রাণে উপলব্ধি করে । সেই নিরিখে শেখা এই সফর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে চলেছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.