সম্পর্কের সহাবস্থান

 সম্পর্কের সহাবস্থান
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে ভারতের কাছে বাংলাদেশই যে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্র সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠতম সম্পর্কের দৃষ্টান্ত রেখেছে নানাভাবে। এই সম্পর্কের উষ্ণতাকে সম্মান জানিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লী।সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লীতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী জি – ২০ এর শীর্ষ সম্মেলনে চলবে। যদিও বাংলাদেশ এই জি২০ র সদস্য নয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে জি২০ গোষ্ঠীভূক্ত আন্তর্জাতিক সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব রয়েছে ভারতের হাতে। তাই অতিথি রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ গোষ্ঠীর এই সম্মেলনে হাজির থাকুক বাংলাদেশ এমনটাই চাইছে দিল্লী।

সেপ্টেম্বর মাসের সম্ভাব্য ৯ এবং ১০ তারিখ এই শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার কাছে নিমন্ত্রণ বার্তা পাঠানো হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র আভাস দিয়েছে, বাংলাদেশ সরকার দিল্লীর এই আমন্ত্রণ স্বীকারও করে নিয়েছে।বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে নয়াদিল্লীতে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন এবং তাতে বাংলাদেশকে অতিথি রাষ্ট্র হিসাবে বিে আমন্ত্রণ জানানোর বার্তা এক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে গভীরতা, রসায়ন এবং ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রাকে বুঝতে হলে, আগে বুঝতে হবে কেন ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের কাছে এত অপরিহার্য্য।

আসলে ভারত ও বাংলাদেশ একে অপরের এত নিকটতম প্রতিবেশী হওয়া ছাড়াও যে বিষয়গুলো বড় দুই দেশের সম্পর্ককে ইতিবাচক সূত্রে গ্রথিত করে রেখেছে তার অন্যতম হলো, ভারত ও বাংলাদেশ দুইটি দেশই গণতান্ত্রিক ভাবধারা ও চেতনায় বিশ্বাসী এবং উভয় দেশই গণতন্ত্রকে তাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের গণতন্ত্রের শেকড় যত বেশি গভীরতা অর্জন করে দেশের জনমানসের মধ্যে প্রথিত হয়েছে, বাংলাদেশও ঠিক সেই ভাবে ধর্মীয় কমি চেতনার সঙ্গে বিরোধী বা প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেকে না তুলে ধরে গণতন্ত্রকেই আঁকড়ে ধরেছে।

সম্পর্কের এই সাযুজ্য ঐতিহাসিকভাবেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্কের রসায়নকে আরও মসৃণ ও সমৃদ্ধ করেছে। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী দুই দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার জ্বালানি ও জলবায়ুর অংশীদায়ীত্ব ছাড়াও অর্থনৈতিক বিকাশ ও আমদানি-রপ্তানীর প্রশ্নে পারস্পরিকভাবে সম্পর্ককে অর্থবহ করা সম্ভব হয়েছে। এই সার্বিক প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই বাংলাদেশের নির্বাচনের ভরপুর মরশুমের মধ্যে শেখ হাসিনাকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়াদিল্লী। জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, সম্মেলনের ফাঁকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে মোদি ও হাসিনার দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে দু’দেশের আর্থ-সামাজিক ও ভৌগোলিক সহাবস্থানের দিক থেকে, এমনটাই আশা করছেন দুই দেশের ওয়াকিবহাল মহল।

মাত্র গত বছরই চার দিনের ভারত সফর করে গেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখে হাসিনার ভারত সফরকালে অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক জটগুলো আসন্ন বৈঠকে সমাধানের লক্ষ্যমাত্রা চিহ্নিত করা ছাড়াও, দুই দেশের মধ্যেকার ইতিবাচক সম্পর্কের পথে যেগুলো প্রায়শই অস্বস্তির উপাদান জোগায় সেই সমস্যাগুলোর স্থায়ী নিরসনের বিষয় নিয়েও দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক স্তরে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পর্যালোচনা শুরু করার ইঙ্গিত রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বেশ কিছু পণ্যের ভারত থেকে রপ্তানির উপর নয়াদিল্লীর নিষেধাজ্ঞা, ভারত- বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্ত সীমান্ত হত্যার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে একটা আবেগ ও বেদনার সুর রয়েছে।

রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার জল বন্টনের মতো অমীমাংসিত ইস্যু এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা। এই প্রেক্ষাপট মাথায় রেখেই বাংলাদেশ ও ভারতের মূল্যবোধ ও স্বার্থের সাযুজ্যের বিষয়গুলি চিহ্নিত করে এর ভিত্তিতে সম্পর্ককে গড়ে তোলা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দারিদ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও সাধারণের অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে দুই দেশের এই বোঝাপড়া আরও নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে সেটাই এই মুহূর্তে দুই দেশের সরকারের প্রত্যাশা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.