গোমাংস ভক্ষণের ‘অপরাধে’ বঙ্গের এক পরিযায়ী শ্রমিককে হরিয়ানার স্বঘোষিত গো-রক্ষকবাহিনী পিটিয়ে খুন করলো।প্রায় একই সময়ে মহারাষ্ট্রের নাসিকেও গোমাংস রাখার ‘অপরাধে’ এক বৃদ্ধকে ট্রেনে শারীরিক নিগ্রহ করলো উন্মত্ত জনতা।প্রায় একই সময়ে (২৪ আগষ্ট) হরিয়ানার ফরিদাবাদে গরু পাচারকারী সন্দেহে উনিশ বছরের যে কিশোর গো-রক্ষকদের গুলীতে নিহত হলেন, তিনি ব্রাহ্মণ সন্তান,আরিয়ান মিশ্র। আরিয়ান ছিলেন সিয়ানন্দ মিশ্র ও উমা মিশ্রের একমাত্র সন্তান।সন্তানহারা অভিভাবক এই ঘটনায় দোষীদের ফাঁসির শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। ২০১৭ সালের জুনে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন জানিয়েছিল,২০১০-২০১৭ সালের মধ্যে ভারতে ৬৩টি উল্লেখযোগ্য গোরক্ষকদের হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, গুরুতর আহতের সংখ্যা ১২৪।প্রতিটি ঘটনা নিন্দনীয় তো বটেই, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আদ্যোপ্রাপ্ত পরিপন্থী।হোক গো-পূজক, স্বঘোষিত অস্ত্রধারীদের এমন সন্ত্রাসে দেশের ‘গৌরব’ বৃদ্ধি হতে পারে না।
ভারতীয় সমাজের এক বড় বৈশিষ্ট্য তার বহুত্ববাদিতা। বহুত্ববাদী সমাজের সেই ভূমিকা পালনে মানুষ যদি সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সামাজিক শান্তি বজায়
রাখার স্বার্থে প্রাথমিকভাবে সচেতন না হয়ে ওঠেন,তার ছাপ পড়ে শাসন ও বিচার ব্যবস্থার উপরে।সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা লেখা থাকলেও তা এত কাল ধরে শুধুমাত্র বিশুষ্ক আর বিমূর্ত কিছু বাক্যের জন্যই বহাল
থাকেনি। আজও তা অটুট, কেননা মানুষ সংবেদনশীল, সচেতনভাবে শান্তির পক্ষে। সমাজের মানবিক রূপও প্রতিনিয়তই প্রতিফলিত হয় মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সামাজিক কর্তব্য পালনের মাধ্যমে।তবে ব্যতিক্রম কি নেই?আছে।কিন্তু ঘৃণাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার, এক ধরনের আতঙ্কের আবহ তৈরি করে ক্ষমতার সোপানে আরহণ, আইনকে কার্যত তোয়াক্কা না
করে হিংসার অবারিত চাষ, এর কোনওটাই ভারতবর্ষের বহুত্ববাদী সংস্কৃতিকে
বাঁচিয়ে রাখার পরিচায়ক নয়।
ক্ষমতাসীন দল যদি উগ্র পরধর্ম অসহিষ্ণুতাকে পাথেয় করে কোনও লক্ষ্য অর্জনে নামে, তা আগামী দিনে স্বঘোষিত গো-রক্ষক বাহিনী ইত্যাকার সংগঠনের মাধ্যমে শাসক বা প্রশাসকের ভাবমূর্তিতে চিড় ফেলতে বাধ্য।সব পথ রোমে পৌঁছানোর মতোই, শাসনক্ষমতার সবকিছু শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু বিদ্বেষে গিয়ে ঠেকতে থাকলে,সেটি আশাপ্রদ তো নয়-ই, বরং জাগিয়ে তোলে আশঙ্কা। বিশেষত, তেমন কাজের দায়িত্ব যদি স্বহস্তে তুলে নেয় কোনও নির্বাচিত রাজ্য সরকার।
তবুও আশা থাক যে, আগামীদিনে আরও বেশি করে মানুষ ভারতের শান্তি আর সামাজিক উন্নতির স্বার্থে সম্প্রীতি ও সম্ভাব বজায় রাখবেন। মানুষের সঙ্গে মানুষের যত বেশি মেলামেশা থাকবে, ভুল বোঝাবুঝির তত অবসান ঘটবে।কোনও বিভেদকামী শক্তি সংকীর্ণ স্বার্থে সামাজিক শান্তি ও উন্নয়ন ব্যাহত হতে দেবে না।কোনও আইন এনে এই শান্তিকে ব্যাহত করতে ছাওয়া হলে তা কোনও নতুন পথের সন্ধান দেয় না, বরং পথের থেকে বেশি সংখ্যায় পথবন্ধক তৈরি করে।এমন কৃৎকৌশলের মধ্যে আর যাই হোক, সামগ্রিক নাগরিক সমাজ বিষয়ে মঙ্গলভাবনা থাকে না।
সংবিধান, আইন এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি মান্যতা একজন ভারতীয় নাগরিকের প্রাথমিক কর্তব্য।ওই সমস্ত ঘটনায় ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত ব্যক্তির প্রতিবাদ বা সংযত আচরণ আইন মোতাবেক কাজ এগুলি বিধেয়,মহত্ব নয়।বাবরি সৌধ ধ্বংসে বিজেপি ব্যতীত প্রায় সব রাজনৈতিক দলই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল।মুসলমানদের মতোই অ-মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশও যে গভীরভাবে মর্মাহত এবং ব্যতীত হয়েছিলেন,তা ওই সময়ের সংবাদপত্র ঘাটলে জানা যায়। অন্যদিকে, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমাজকর্মীরা বিলকিস বানোর পাশে ছিলেন বলেই তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পেরেছেন।
সংসদে জঙ্গি হামলার ঘটনার মতো গোধরা কাণ্ডও গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে। শূন্য দশকের শুরুর দিকে গুজরাটে জাতি হিংসার সময় সংবাদপত্রে জোড়হস্তে প্রাণভিক্ষায় ক্রন্দনরত কুতুবউদ্দিনের ছবি বহু হিন্দুর হৃদয়কেও বিদীর্ণ করেছিল।ব্যক্তিবিশেষ এবং একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে আশ্রয়দানে এগিয়ে এসেছিলেন।ধর্মভিত্তিক রাজনীতি যখন দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অপুষ্টি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা -বাসস্থানের অব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের মতো মৌলিক সমস্যার মূলোৎপাটন করতে পারে না, তখন বৃহত্তর প্রেক্ষাপটটিকে শুধুমাত্র ‘ধর্মের মুদ্রাদোষ’ হিসাবে চিহ্নিত করাটা বোধহয় সমীচীন নয়।সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনেই এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বহু ভাষাভাষী এবং ধর্মের দেশ ভারতে ‘সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ’ রাজনীতি দীর্ঘস্থায়ী ফলদায়ী নয়। মানুষ সংযত, সংহত এবং সঙ্ঘবদ্ধ থাকলে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব, আমরা যেন জনীষীদের এমন নীতিমালা বিস্মৃত না হই।
অনলাইন প্রতিনিধি :-মে মাসের মাঝামাঝি ক্রোয়েশিয়া, নরওয়ে ও নেদারল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানে ভারতের হামলায় মৃত বেড়ে ২৬। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জানিয়েছেন,…
অনলাইন প্রতিনিধি :;মঙ্গলবার সারা রাজ্যে একাধিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত বছর রাজ্যের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি জম্মু…
অনলাইন প্রতিনিধি :-বুধবার মধ্যরাতে ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের মধ্যে পুঞ্চের মেধর এলাকায় বিনা প্ররোচনায় গোলাবর্ষণ…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পাক অধ্যুষিত কাশ্মীর ও পঞ্জাব প্রদেশের নির্দিষ্ট জায়গায় ভয়াবহ হামলা চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা।…