সম্প্রীতির বার্তা।

 সম্প্রীতির বার্তা।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।।  পবিত্র রমজানের মাসে হিন্দু ঘরের ব্রাহ্মণ মেয়ের বিয়ের জন্য নিজের বাড়ির উঠোন ছেড়ে দিয়ে সম্প্রীতির নজির গড়ল এক মুসলিম পরিবার । দুই বছর আগে করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় মেয়েটির বাবা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যান । মেয়ের বয়স তখন ছিল কুড়ি বছর । বাইশ বছরের পূজার বিয়ে হল মুসলিম বাড়ির উঠোনে । শোভাযাত্রা করে বরযাত্রী এল সেই বাড়িতে । বিয়ের আনন্দে দুই ধর্মের সম্প্রীতির অনন্য দৃশ্যের সাক্ষী থাকল উত্তরপ্রদেশের আজমগড়। হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হয় পূজার । দুই বছর আগে বাবার মৃত্যুর শোক এখনও টাটকা । তার উপর তেমন আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় বিয়েবাড়ি ভাড়া করতে পারেনি পূজার পরিবার । আজমগড় আলওয়াল এলাকায় ছোট্ট বাড়িতে বাস পূজার । বিয়ে জোড়া দেওয়ার মতো সে বাড়িতে জায়গাবাসা নেই । এমন সময়ে ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে পূজাদের পড়শি এক মুসলিম পরিবার । পূজার অভিভাবকদের ওই পরিবারটি জানায় তারা চান রমজান মাসে তাদের উঠোনে পূজার বিয়ের সানাই বাজুক । কারণ পূজাকে ছোট থেকে নিজেদের চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন তারা । পূজার মামা রাজেশ চৌরাসিয়া বলেন , ‘ টাকার অভাবে ভাগ্নি পূজার জন্য আমরা আলাদা করে অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া করতে পারিনি । আমাদের বাড়িতেও বিয়ের আসর বসানোর জন্য জায়গা ছিল না । অথচ পূজার বিয়ের দিন এগিয়ে আসছিল । কী করে কী হবে , বুঝতে পারছিলাম না । বাবা – মরা ভাগ্নির জন্য দুশ্চিন্তায় ছিলাম । এমন সময় ত্রাতার ভূমিকায় এগিয়ে আসেন পাড়ার এক মুসলিম পরিবার । মুসলিম পরিবারটি কি স্বতঃপ্রণোদিত  এগিয়ে এসেছিলেন ? রাজেশবাবু বলেন , ‘ পারভেজ আমার প্রতিবেশী । দীর্ঘ বছরের বন্ধুও । আমি ওকে পূজার বিয়ে নিয়ে নিজের অপারগতার কথা জানিয়েছিলাম । তখনই পারভেজ আমাকে প্রস্তাব দেয় , আমরা চাইলে ওর বাড়ির উঠোনে পূজার বিয়ে হতে পারে । পারভেজের প্রস্তাবে আমরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচি । ‘ পারভেজ ও তার স্ত্রী নাদিরা পূর্ণোদ্যোমে বিয়ের কাজে নেমে পড়েন । পূজাকে সোনার চেন দিয়ে আশীর্বাদ করেন পারভেজ । নাদিরা বলেন , ‘ মায়ের সঙ্গে পূজা প্রায়শই আমাদের বাড়িতে আসত । পূজা আমার মেয়ের মতোই । যখন আমরা জানতে পারি , পূজার বিয়ে এগিয়ে আসছে অথচ বাড়ি বায়না করতে পারেনি , আমরা আর সময় নষ্ট করিনি । পূজাদের পরিবারের শুভাকাঙ্খী হিসাবে যতটুকু পেরেছি , করার চেষ্টা করেছি । ও জীবনে সুখী হলেই আমাদের প্রয়াস সার্থক । ‘ নাদিরা বলেন , ‘ পবিত্র রমজান মাসে বাড়ির মেয়ের বিয়ের আয়োজনের চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে । আমরা ভিন্ন ধর্মালম্বী । আমাদের দেবতাও ভিন্ন । কিন্তু মানুষ হিসাবে আমাদের কর্তব্য সমাজের মেয়েদের সুখ – শান্তি নিশ্চিত করা । আমরা সেটুকুই করেছি । ‘ গত ২২ এপ্রিল , শুক্রবার পারভেজ – নাদিরার বাড়িতে পূজার বিয়ের সানাই বাজে । সধবারা একসঙ্গে গানবাজনা করেন । পারভেজের উঠোনে সামিয়ানা দিয়ে তৈরি হয় বিয়ের মণ্ডপ । হিন্দু রীতি নীতি মেনে বিয়ে হয় । যজ্ঞ হয় । সাত পাকে বাঁধা পড়েন বরবধূ । কনের মামার পাশে দাঁড়িয়ে বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করেন পারভেজ ও নাদিরা । রাজেশ চৌরাসিয়া বলেন , ‘ পারভেজ ও নাদিরা আমাকে চিরকালের জন্য ঋণে বেঁধে ফেলল । ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার । ‘

Avatar

Dainik Sambad

Leave a Reply

Your email address will not be published.