সময়োপযোগী শিক্ষায় গুরুত্ব দিক শিক্ষার্থীরা: মুখ্যমন্ত্রী

 সময়োপযোগী শিক্ষায় গুরুত্ব দিক শিক্ষার্থীরা: মুখ্যমন্ত্রী
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় পরিসরে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে শুক্রবার সময়োপযোগী শিক্ষার উপর যথেষ্টই গুরুত্ব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন মোট ৮ কোটি ৬৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে একসাথে পাঁচ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বারোদঘাটনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলির ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভার্চুয়ালি সম্বোধন করে কার্যত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এ দিন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রয়োজন ভেদে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনার কথা বলেন। তার কথায়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে (গুণগত এবং আধুনিক) সময়োপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় দীর্ঘ বছর পর দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করা সম্ভব হয়েছে। সেই অনুযায়ী রাজ্যেও জাতীয় শিক্ষানীতির নীতি নির্দেশিকা এখন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ভার্চুয়ালি যেসব বিদ্যালয়গুলির নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বারোদঘাটন হয় এ দিন এগুলির মধ্যে ১.৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয়ের নয়া ভবন ছাড়াও ছিলো ১.১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দারোগামুড়া (ইংরেজি মাধ্যম) উচ্চ বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন, ১,৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হেজামারাস্থিত বড়কাঠালিয়া উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, ৪৯.৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাণীরবাজারস্থিত সুকান্ত একাডেমির (ইংরেজি মাধ্যম) সম্প্রসারিত নয়া ভবন এবং ৩.২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় ভবন। অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, গুণগত শিক্ষার প্রসারে অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগেও এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে মানব সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের গুরুত্ব দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে গরিব, মহিলা ও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ প্রদান সহ আরও অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহায়তা করা হচ্ছে এখন। বিদ্যালয়গুলিতে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৪৪টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় করা হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ৩০টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এতে ব্যয় করা হবে ২৬৪ কোটি টাকা। এছাড়াও একই অর্থবছরে ১২৩টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নেরও পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গুণগত শিক্ষা প্রদান এবং আধুনিক শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে রাজ্যে এখন জাতীয় শিক্ষানীতির নীতি নির্দেশিকা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই লক্ষ্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নিপুণ মিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ও কার্যকর করা হচ্ছে। এছাড়াও সুপার ৩০ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এক জন শিক্ষার্থী আইআইটি, তিন জন এনআইটি এবং তিন জন এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হতে সক্ষম হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজ্যে চিফ মিনিস্টার্স স্কলারশিপ ফর অ্যাচিভার্স টুয়ার্ডস হায়ার লার্নিং নামক বৃত্তিমূলক প্রকল্পে মোট ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ৬০ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৩ হাজার ছাত্রীকে বিনামূল্যে বাইসাইকেল প্রদান, লেখাপড়ায় ছাত্রীদের উৎসাহিত করতে টিবিএসই এবং সিবিএসই উভয় বোর্ডে ভালো ফলাফল অর্জনকারী ১৪০ জন মেধাবী ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি প্রদান করা হচ্ছে নতুন করে। ভার্চুয়ালি নবনির্মিত দ্বিতল ভবনগুলির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিটি বিদ্যালয়ের ন্যায় রাণীরবাজারস্থিত সুকান্ত একাডেমি ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়েও ব্যাপক উৎসাহ দেখা দেয়। রাণীরবাজার পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন অপর্ণা শুক্ল দাস, ভাইস চেয়ারম্যান, প্রবীর কুমার দাস, মহকুমাশাসক শান্তি রঞ্জন চাকমা সহ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা সর্বানী দাস এবং আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠান থেকে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ দিন বলেন বর্তমানে রাজ্যে শিক্ষায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। রাজ্যের শিক্ষার্থীরা যাতে সর্বভারতীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে সে লক্ষ্যেও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কোচিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্যে স্বচ্ছ নিয়োগনীতি প্রণয়ন করে বিভিন্ন দপ্তরে কর্ম নিয়োগও করা হচ্ছে এখন। বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তরেও টেট পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশায় চাকরি পাচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বৃষকেতু দেববর্মা বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত রাজ্য সরকারে বিভিন্ন উদ্যোগ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায়ও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গুণগত শিক্ষা প্রসারের ফলে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার বিদ্যালয়গুলিতে পাসের হারও এখন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার সহ বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা, রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দেববর্মাও উপস্থিত ছিলেন আয়োজিত অনুষ্ঠানে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.