সরগরম কর্ণাটক

 সরগরম কর্ণাটক
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

আর মাত্র পাঁচদিন বাদেই কৰ্ণাটক বিধানসভার ভোট। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবে আজ থেকে এক সপ্তাহ বাদে। গত প্রায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে জাতীয় রাজনীতি কার্যত দক্ষিণী রাজ্য কর্ণাটকেই বন্দি হয়ে আছে। ২২৪ আসনের কর্ণাটক বিধানসভায় ভোটের ফল কী হতে চলেছে তা নিয়ে গত বেশ কিছুদিন ধরেই তুমুল আগ্রহ দেখা দিয়েছে দেশজুড়ে। কারণটা হচ্ছে গত প্রায় এক দশক জুড়ে ভারতীয় রাজনীতি এক কথায় মোদিময় হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ভাবে। শুধুমাত্র ভোটের বাক্সেই নয়, জাতীয় রাজনীতির বিভিন্ন প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় নিজ দলের ভেতরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে একমেবাদ্বিতীয়ম্ হয়ে উঠেছেন, ঠিক সেইভাবেই জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের বিপরীতে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেছেন সেটা এখন অনেকটা দিনের আলোর মতই পরিষ্কার। এই অবস্থায় আগামী বছর দেশের লোকসভা নির্বাচন। এই ২৪- এর মে মাসে লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কালের আগে চলতি বছরের শেষ পর্বে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে বিধানসভার নির্বাচন অপেক্ষা করছে। তার আগে দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে বিধানসভার ভোট যে যথেষ্ট আকর্ষণীয় হতে চলেছে সেই সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল মোটামুটি একমত। কারণ, এই মুহূর্তে এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, গোবলয়ের রাজ্যগুলোতে বিজেপি দল যতটা শক্তিশালী, দাক্ষিণাত্যের জমিতে গেরুয়া বাহিনী ততটাই অস্বাচ্ছন্দ্যকর জায়গায় অবস্থান করছে। ঠিক একইভাবে উত্তরপ্রদেশ কিংবা গুজরাটে বিজেপির হাতে বিরোধী দলকে যে ছত্রভঙ্গ দশায় পড়তে হয়েছে বিগত নির্বাচনগুলোতে, ঠিক সেই বিপরীত অবস্থাটাই বিজেপির জন্য অপেক্ষা করছে দক্ষিণে। বিশেষ করে কংগ্রেসের বরাবরের শক্তিশালী দুর্গ বলে পরিচিত কর্ণাটকে। যদিও ৫ বছর আগে বিধানসভার নির্বাচনে কংগ্রেস- জেডিএস জোট জয়ী হয়ে কর্ণাটকে ক্ষমতাসীন হয়েও, বিজেপির কৌশল ও ছলাকলার সামনে মাত্র ১ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কর্ণাটক হাতছাড়া হয়ে যায় বিরোধীদের। যে কারণে কর্ণাটকে ক্ষমতাসীন চার বছরের বিজেপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত বিরোধীরা যে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ইতিমধ্যেই কর্ণাটকে বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় বিরোধী জোটের পক্ষেই ক্ষমতা দখলের আভাস মিললেও ২৪-এর লোকসভার ভোটের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন একটি রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঘটনা যে বহু প্রশ্নের জন্ম দেবে সেটা আগাম ধরে নিয়েই ক্ষমতাসীন বিজেপিও সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছে কর্ণাটকে। যদিও গত চার বছরে বিজেপি সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ। ভোটের ময়দানে এই বিড়ম্বনা নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিজেপিকে। দলের টিকিট বন্টন নিয়েও ব্যাপক অসন্তোষের ছায়া পড়েছে পার্টির অন্দরে। এই সব কিছুর পরেও বিজেপির সামনে আশার আলো হিসাবে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী মোদির ভোট প্রচারে রাজ্যকে জনমুখী ও দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে মোদি-শাহ জুটির কৌশলী প্রচার ভোটের ময়দানে বিজেপির জন্য বাড়তি অক্সিজেন হিসাবে কাজ করছে তা বিরোধীরাও এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। কিন্তু ভোটের কর্ণাটকে বিরোধী শিবিরের তরফে একের পর এক বিতর্ক পরিস্থিতিকে যে যথেষ্ট ঘোরালো ও জটিল করে তুলেছে তা সম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকেই ইঙ্গিত মিলেছে। বিশেষ করে কর্ণাটকে কংগ্রেসের ইস্তাহারে পিএফই-এর মতো বজরং দলের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর বিষয়টিকে হাতিয়ার করে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি যেভাবে মেরুকরণে নেমেছে তাতে শেষ পর্যন্ত ভোটের বাজারে কতটা প্রভাব পড়বে তা নিয়েও ভোট পণ্ডিতদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী মোদি ইতিমধ্যেই এই ইস্যুতে বক্তৃতায় জয় বজরংবলী স্লোগানও দিয়েছেন। এদিকে ছত্তিশগড়েও একই সুরে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যুব শাখা বজরং দলকে নিষেধাজ্ঞায় আনার হুঙ্কার দিয়েছেন। ফলে কর্ণাটকের ভোটের ছায়া কতটা দীর্ঘ হতে চলেছে তা নিয়ে টানটান রাজনৈতিক হিসাব কষাও চলছে। বিরোধীদের কাছে কর্ণাটক জয়ের তাৎপর্য অনেক। দেশের সম্পদশালী রাজ্য কর্ণাটক মোট জাতীয় উৎপাদনের ৮ শতাংশ দিয়ে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি, বায়োপ্রযুক্তি ও শিল্প কৃষি পর্যটনে উন্নত কর্ণাটকের দখল নেওয়া মানেই প্রতিপক্ষের মাথাব্যথার কারণ হওয়া। সেই সঙ্গে রাজ্যে কর্মসংস্থানের আধিপত্যও জয়ী দলের জন্য বাড়তি রসদ জোগাবে। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আগামী লোকসভা ভোটের আগে তেলেঙ্গানা সহ অন্য চার রাজ্যে বিধানসভার ভোটে কর্ণাটকের প্রভাব। তাই সব মিলিয়ে কর্ণাটকের নির্বাচন ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে বহু প্রশ্নের দিশা দেখাবে তা হলফ করেই বলা যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.