সর্বশিক্ষার ভবিষ্যৎ

 সর্বশিক্ষার ভবিষ্যৎ
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের (বর্তমানে সমগ্র শিক্ষা) মামলাটি হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যাবার পর আপাতত তা হিমঘরে চলে গেলো বলেই মনে করা হচ্ছে।কেননা হাইকোর্ট এর আগে ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ ইস্যুতে একটি রায় দিয়েছিলেন।সেই রায়ে হাইকোর্ট তিনটি পয়েন্টের উপর জোর দিয়ে রাজ্য সরকারকে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবার কথা বলেন।কিন্তু রাজ্য সরকার সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের মধ্য থেকে যারা টেট পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তাদের একটা ক্ষুদ্র অংশকে রেগুলার করে দিয়ে বাকিদের একটি স্কিমের আওতায় এনে কিছুটা মানভঞ্জন করেছিল। কিন্তু সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের যে মূল দাবি ছিল অর্থাৎ চাকরিতে নিয়মিতকরণ,সেই দাবিকে রাজ্য সরকার অনেকটাই উপেক্ষা করেন। রাজ্য সরকার উচ্চআদালতের সেই রায় বাস্তবায়ন আংশিক করেছিল। যার ফলে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল।এতে করে কয়েকটি মামলা হয় হাইকোর্টে। গতকাল ২৩ মে, ২০২৩ শেষপর্যন্ত সবকয়টি মামলাই খারিজ হয়ে যায় ত্রিপুরা হাইকোর্টে। এরফলে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের রেগুলারাইজেশন বিষয়টি আপাতত হিমঘরে চলে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও শিক্ষক নেতারা দাবি করছেন তারা এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন। সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের চাকরিতে নিয়মিতকরণের বিষয়টি দীর্ঘদিনের।সর্বশিক্ষা (বর্তমানে এটির নাম পরিবর্তন করে হয়েছে সমগ্র শিক্ষা) একটি কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রাম।ভারত
সরকার এই খাতে প্রায় পুরো অর্থই বহন করে থাকে। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য একটি
স্পেশাল ড্রাইভের উদ্দেশ্যে এবং আরও বিশেষ করে ড্রপআউট কমানোর জন্যই দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকার ২০০২-০৩ সালে সর্বশিক্ষা প্রকল্পের সূচনা করেন। ত্রিপুরায় ২০০৩-০৪ সাল থেকে এই প্রকল্পের সূচনা হয়। এই প্রকল্পের অধীন শিক্ষক নিয়োগ হয়।কিছু অশিক্ষক কর্মচারীও নিযুক্ত হন। স্কুল বিল্ডিং হয়।গড়ে ওঠে সিআরসি সেন্টার, বিআরসি সেন্টার। স্কুলে স্কুলে অতিরিক্ত বিল্ডিং নির্মাণ হয়। শিক্ষকদের ট্রেনিং শুরু হয়। বিআরপি, সিআরপি নিযুক্ত হন। এই প্রকল্পে মূলত আইএসরা হচ্ছেন সর্বেসর্বা। তারা ব্লক এজেন্ট কোঅর্ডিনেটর। তারাই স্কুলে স্কুলে শিক্ষকদের নিযুক্তি দেন। রাজ্য স্তরে রাজ্য মিশন গঠিত হয়। প্রশাসনিক স্তরে মুখ্যসচিব এর সর্বেসর্বা। এতবছর পরও সব কর্মচারীদেরই নিযুক্তি চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী হিসাবে।
এরপরই দীর্ঘ বাম আমলে সর্বশিক্ষা শিক্ষকেরা সংগঠিত হয়ে রেগুলারাইজেশনের দাবি তোলেন। যদিও দীর্ঘ বাম আমলে সর্বশিক্ষা শিক্ষক কর্মচারীদের ছুটি, স্পেশাল লিভ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ডিএ, ইনক্রিমেন্ট সবই জুটেছে কম হলেও। শুধু নামের আগে রেগুলার কথাটি নেই।এই অবস্থা চলতে চলতে ২০১৫-১৬ সালে হাইকোর্টে একটি মামলা করেন জনৈক শিক্ষক।দাবি একটিই শিক্ষকদের চাকরিতে নিয়মিতকরণ।স্বপক্ষে তুলে ধরা হয় বিভিন্ন রাজ্যে সর্বশিক্ষা প্রকল্পে শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের বিষয়।তুলে ধরা হয় এনসিটিই গাইডলাইন ইত্যাদিও। এরপর চলে আসে ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচন।রাজ্যে তখন বিজেপির পক্ষে হাওয়া তুঙ্গে। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে সর্বশিক্ষার শিক্ষকরা আমরণ অনশনে বসেন ওরিয়েন্ট চৌমুহনীতে। দাবি – চাকরিতে নিয়মিতকরণ। রাজ্য সরকারের বিপক্ষে সেসময় একমাত্র কোনও সংগঠন ছিল যারা আমরণ অনশনের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বাম সরকারের ভিত প্রায় টলিয়ে দিয়েছিলো। সেই পরিস্থিতিতে সুবর্ণসুযোগ নেয় আজকের শাসক তথা সেদিনকার বিরোধী শিবিরের দল বিজেপি। বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা সেসম মঞ্চে গিয়ে সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে যে ক্ষমতায় আসলেই রেগুলার। বিজেপি শাসনেও ২০২১ সালে হাইকোর্টের রায় কর্মচারীদের পক্ষে গেলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বর্তমান সরকার সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের যে মূল দাবি, তা বাস্তবায়নের পথে হাঁটেনি। সরকার সেসময় কেন হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সিংহভাগ শিক্ষকদের রেগুলার করার পথে হাঁটেনি তা বোধগাম্য নয়। অথচ যে দল ক্ষমতায় আসার আগে শিক্ষকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, তাদের কাছে শিক্ষকদের গগনচুম্বী প্রত্যাশা ছিল।ফলে শিক্ষকদের মোহভঙ্গ হয় এবং পরবর্তীতে শিক্ষকরা পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।সেই মামলাগুলিরও যবনিকাপাত হয় ২৩ মে,২০২৩। ঠিক দুই বছর পর এবারও সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের ভাগ্য বদল হল না। তাহলে কি বলা যায় সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের মামলা হিমঘরে চলে গেল? যদিও শিক্ষকনেতারা বলছেন তারা শেষ দেখে ছাড়বেন। প্রয়োজনে ডিভিশন বেঞ্চে যাবেন তারা। এবার দেখার, সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা পুনরায় তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মামলার পথে হাঁটেন কিনা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.