সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ করতে মাত্র রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার!!

 সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ করতে মাত্র রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি:- সর্বশিক্ষা (বর্তমানে সমগ্র শিক্ষা) শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ কি ফের আটকে যাচ্ছে। রাজ্য সরকার কি হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্ট যাচ্ছে? এ নিয়ে এখন রাজ্যের বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। যদি শেষমেষ রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যায় তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে রাজ্য সরকার চায় না এ রাজ্যের সর্বশিক্ষা শিক্ষকরা নিয়মিত হোক। একটা মহল থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। তারা চায় না দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত সর্বশিক্ষা (সমগ্র শিক্ষা) প্রকল্পে অনিয়মিত শিক্ষকরা নিয়মিত হোক। বিশেষ করে একাংশ আমলা আধিকারিকের কারণে ফের সর্বশিক্ষা শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ ইস্যুটি আটকে যাচ্ছে বলে জানা – যাচ্ছে। অথচ রাজ্য হাইকোর্ট সমগ্র শিক্ষার শিক্ষকদের তিন মাসের মধ্যে নিয়মিতকরণের জন্য নির্দেশ দেয় সম্প্রতি। জানা গেছে, সর্বশিক্ষার শিক্ষকদের নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত ত্রিপুরা উচ্চ আদালতের রায় কার্যকর করতে মাত্র রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার থেকে মাত্র ছয় কোটি টাকার প্রয়োজন বছরে। শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী নিয়মিতকরণের উপযুক্ত প্রাইমারি শিক্ষক রয়েছেন প্রায় ১৯০০ জন এবং আপার প্রাইমারিতে রয়েছেন প্রায় ২১০০ জন। নিয়মিত বেতনক্রম দিতে বছরে খরচ হবে প্রাইমারি শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৮০ (আশি) কোটি টাকা এবং আপার প্রাইমারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ১১১ কোটি টাকা ধরে বছরে মোট খরচ হবে বছরে ১৯১ কোটি টাকা। (২) সমগ্র শিক্ষার নিয়মানুযায়ী প্রতি বছর কেন্দ্র রাজ্যকে অর্থ বরাদ্দ করবে প্রাইমারি শিক্ষকদের জন্য ৩৫ কোটি টাকা এবং আপার প্রাইমারি শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ করবে ৫১ কোটি হিসেবে মোট ৮৬ কোটি টাক বরাদ্দ করছে এবং নিয়মিত করার পরও বরাদ্দ করবে। (৩) আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় রাজ্যকে বছরে বহন করতে হবে ১০৫ কোটি টাকা। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় সরকার আসাম ব্যতীত উত্তর এ পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যকে ৯০:১০ এ অনুপাতে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করে। তাহলে বাকি ১০৫ কোটির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার বহন করবে প্রায় ৯৪ কোটি টাকা এবং বাকি ৬ কোটি মাত্র রাজ্যকে নিজস্ব কোষাগার থেকে দিতে হবে বছরে। (৪) উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ নিয়মিত বেতনক্রম দেওয়ার উল্লেখ করলেও সরকার এখনও কার্যকর করেনি। এজন্য ৪২ মাসে এককালীন এরিয়ার হিসাবে প্রাইমারি শিক্ষকদের দিতে হবে ৬০ কোটি টাকা এবং আপার প্রাইমারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ১১১ কোটি অর্থাৎ মোট ১৭১ কোটি টাকা। (৫) প্রথম বছর শিক্ষকদের নিয়মিত করলে এরিয়ার সহ মোট ব্যয় হবে ৩৬২ কোটি। এরমধ্যে সমগ্র শিক্ষা থেকে পাচ্ছে ৮৬ কোটি টাকা। বাকি ২৭৬ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় শেয়ার ২৪৮ কোটি টাকা এবং রাজ্যের শেয়ার হবে ২৭ কোটি টাকা। শিক্ষা দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, শিক্ষকদের নিয়মিত করতে প্রথম বছর ২৭ কোটি টাকা এবং পরের বছর থেকে মাত্র ৬ কোটি টাকা রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার থেকে ব্যয় হবে। (৬) মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিয়মিতকরণের ফাইল পাঠানোর আগে কেন্দ্র সরকারের কথা বলে নিশ্চিত টাকা পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ১২ জানুয়ারী ২০২১ চিঠি দিয়ে শিক্ষা সচিবকে জানিয়েছে, কেন্দ্র সমগ্র শিক্ষার নিয়মানুযায়ী অর্থ প্রেরণ করবে এবং চতুর্দশ অর্থ কমিশনে অর্থ ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৪২ শতাংশ দেওয়া হয়েছে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী নিয়মিতকরণ করতে। (৭) শিক্ষা দপ্তর সূত্রে আরও খবর, শিক্ষা দপ্তর সহ আইন ও অর্থ দপ্তরের কিছু আধিকারিক মুখ্যমন্ত্রীকে ভুল পরামর্শ দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার জন্য। নিয়মিত করতে যেখানে রাজ্যের নিজস্ব কোষাগার থেকে বছরে ছয় কোটি টাকা খরচ করলেই হয়, আর বাকি টাকা কেন্দ্রীয় সরকার বরাদ্দ করবে, তা সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে ১০০ কোটি টাকা খরচ করাবে সরকারের। আখেরে এতে রাজ্যের জনগণের পয়সাই খরচ হবে। (৮) গাণিতিক হিসাবে মাত্র ছয় কোটি ব্যয় করার চাইতে ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করার জন্য রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্তের পথে এগোচ্ছে অথচ দেখা গেছে আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থীদের পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য ২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করবে, তবু শিক্ষকের নিয়মিতকরণে বছরে মাত্র রাজ্যের কোষাগার থেকে মাত্র ছয় কোটি ব্যয় করতে অসমর্থ হচ্ছে। এ নিয়ে এখন দপ্তরের কিংবা রাজ্য সরকারের অবস্থা হচ্ছে ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’র মতো।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.