সর্বসম্মতি কাম্য!!

 সর্বসম্মতি কাম্য!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একের পর এক পরিকল্পনা রূপায়ণ করে চলেছেন।নোটবন্দি থেকে শুরু করে ৩৭০ ধারা বিলোপ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কিংবা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-এর জন্য পদক্ষেপ, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কার্যকর করা-এ সবই বিগত দিনগুলোতে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে।প্রথম দুই দফায় কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন মোদি সরকার নিজের সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর ভর করে একের পর এক সিদ্ধান্ত কার্যকর করে চললেও, ২০২৪ সালে লোকসভার ভোটে বিজেপির একক ক্ষমতার আধিপত্য আর টিকল না।যে কারণে মোদি সরকার এখন কার্যত এনডিএ সরকার।কিন্তু তাই বলে জোট সঙ্গীদের সমর্থন ও সাহায্য নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসা মোদি সরকারের কাজকর্মে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।গত আগষ্ট মাসেই ওয়াকফা সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশ করার পর বিরোধীরা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হলেও সরকারের অবস্থানের খুব একটা বদল হয়নি।শুধুমাত্র ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে আরও আলোচনার জন্য বিরোধীদের দাবি মেনে জেপিসি বা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে মাত্র।লক্ষণীয় দিক হলো কেন্দ্রীয় সরকারের এবার নজর দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার উপর।অর্থাৎ সরকার এবার ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ ব্যবস্থার’ দিকে এগিয়ে চলেছে।প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকে।এর জন্য দেশের পূর্বতন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গড়ে দিয়েছিল সরকার।গত মার্চে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হাতে ১৮ হাজার পাতার একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি।৮ খণ্ডে বিভক্ত এই রিপোর্টে দেশে একসঙ্গে লোকসভা এবং সমস্ত রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন করানোর সুপারিশ রয়েছে। মোট ৪৭ টি রাজনৈতিক দল এই কমিটির কাছে তাদের মতামত জমা দিয়েছে। এর মধ্যে ৩২ টি দল’এক দেশ এক নির্বাচন’ ব্যবস্থার পক্ষে মতামত দিয়েছে।বিপরীত দিকে ১৫ টি দল এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করেছে এবং তাকে অনুমোদনও দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কমিটি যে প্রস্তাব পেশ করেছিল তাতে দুই দফায় দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া করতে বলেছিল।প্রথম দফায় লোকসভা এবং সবগুলি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন একসঙ্গে করা হবে।আর দ্বিতীয় দফায় দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর স্বায়ত্ব শাসিত যত সংস্থা আছে সেগুলির ভোট লোকসভা ও বিধানসভার ভোট শেষ হওয়ার ১০০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলেছে। সরকার থেকে শুরুতেই বারবার যে বিষয়টি বলার চেষ্টা হয়েছে তা হল,বারবার নির্বাচনের কারণে খুব বেশি খরচ বাড়ে,আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত,প্রশাসনিক কাজকর্ম বারবার স্তিমিত হয়।যে কারণে দেশের উন্নয়নের গতি স্তম্ভিত হয়।এই কারনেই বছরভর নির্বাচন না করে একত্রে গোটা দেশে সব নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি।এতে করে সময়ের সাশ্রয় হবে, অর্থের খরচ কমবে-এটা যেমন ঘটনা, তেমনি এতবড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে দেশের সবগুলি রাজনৈতিক দলের সহমত তথ্য ঐকমত্য জরুরি। তার চেয়েও বড় কথা এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সংবিধান সংশোধন যা যথেষ্ট জটিল।আবার এটাও ঘটনা ‘এক দেশ এক নির্বাচন’ কার্যকর হওয়ার পর কেন্দ্রে বা কোনো রাজ্যে ৫ বছর মেয়াদের আগেই সরকারের পতন হলে সেটা জটিলতা বাড়াবে।ত্রিশঙ্কু সংসদ কিংবা অনাস্থায় সরকারের পতনের মতো ঘটনায় সরকারের প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।আবার একথাও বলা হচ্ছে-এই একসাথে ভোটের ভাবনা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন এই পন্থা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য অনুপযুক্ত।আবার এও মনে করা হয়, এক সাথে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সাধারণত ভোটদাতারা রাজ্যে এবং কেন্দ্রে এক দলের প্রার্থীর পক্ষেই ভোট দিয়ে থাকেন যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।আছে জাতীয় ইস্যু এবং রাজ্যভিত্তিক ইস্যুর মধ্যে পার্থক্যও। সবচেয়ে বড় জট দেখা দেবে ‘এক দেশ এক নির্বাচন, ব্যবস্থা চালুর পর অ্যাপয়েন্টেড ডেট ঘোষণা হলে।ঠিক পাঁচ বছর পর একসাথে লোকসভা ও সব বিধানসভার নির্বাচন করতে হবে।সেক্ষেত্রে অনেক রাজ্যের বিধানসভার মেয়াদ বাড়াতে বা কমাতে হবে। কারণ ২০২৪ সালে কেন্দ্রের সরকারের ক্ষমতায় আসার পর লোকসভা অধিবেশনের প্রথম দিনকে অ্যাপয়েন্টেড ডেট ধরা হলে ২০২৯ সালে ভারতে একযোগে ভোট হবে। তখনই এই সম্পর্কিত মতের অমিল দূর করতে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য জরুরি।এই সবকিছু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে মসৃণ পথে এগোতে হলে চাই সর্বসম্মতি। আর যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর শাসনব্যবস্থায় এটাই এই মুহূর্তে জরুরি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.