সর্বস্তরে স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : মুখ্যমন্ত্রী।

 সর্বস্তরে স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার : মুখ্যমন্ত্রী।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- বর্তমান রাজ্য সরকার সর্বস্তরে স্বাস্থ্য কাঠামোর উন্নয়নকে সর্বাধিক অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্পেশালিটি, সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হচ্ছে। গ্রামীণ স্তর পর্যন্ত উন্নত পরিষেবা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। জিবি হাসপাতাল ও আইজিএম হাসপাতালে রেফারেল রোগীর চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে জেলা মহকুমা ও হাসপাতালগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ ত্রিপুরা, গোমতী এবং ধলাই জেলা হাসপাতালে ট্রমা সেন্টার চালু করা হয়েছে। শুক্রবার প্রজ্ঞাভবনে রাজ্যের দন্ত চিকিৎসকদের নিয়ে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা একথা বলেন। ন্যাশনাল ওরাল হেলথ প্রোগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত দুদিনের এই কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের মৌলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ১০০টি নতুন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এর জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটেও প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। বর্তমানে রাজ্যেই বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থার এই উন্নতি হওয়ার ফলে রাজ্য থেকে বহি:রাজ্যে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে রেফারেল রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীগণ রাজ্যে রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।এই প্রেক্ষিতে জনগণকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত সকল স্তরের কর্মীদের প্রতি ভরসা রাখতে আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাদের প্রতি সহনশীল হতে হবে।
রাজ্যের দত্ত চিকিৎসার বর্তমান সার্বিক রূপ রেখার চিত্র এদিন মেলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজ্যে উন্নত দন্ত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের আধুনিক প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। দন্ত চিকিৎসার উন্নয়ন ও প্রসারের লক্ষ্যে আইজিএম হাসপাতাল কমপ্লেক্সে রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। খুব সহসা কলেজটিতে পঞ্চাশজন ছাত্রছাত্রী নিয়ে বিডিএস কোর্সে পঠনপাঠন শুরু হবে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পৌঁছে দিতে করবুক, কুমারঘাট এবং পানিসাগর কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও বক্সনগর, কাঞ্চনমালা, মোহনপুর, কল্যাণপুর, নতুনবাজার এবং অম্পিতে ছয়টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবনের উদ্বোধন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল উদ্যোগের অঙ্গ হিসাবে অটল “বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতালে ‘মেরা হাসপাতাল পোর্টাল’ চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালটি ই-হাসপাতাল প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যা ক্যান্সার পীড়িত রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে সহায়ক হবে। এছাড়াও আগরতলা সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতাল সহ সমস্ত জেলা হাসপাতালগুলোতে ই-রেডিওলজি এবং টেলি-রেডিওলজি পরিষেবা চালু হয়েছে।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু হয়েছে। এই যোজনায় রাজ্যে প্রায় তেরো লক্ষ আয়ুষ্মান কার্ড সুবিধাভোগীদের প্রদান করা হয়েছে। দুই লক্ষের উপর সুবিধাভোগী এই প্রকল্পের সুযোগ লাভ করেছেন। আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যে সমস্ত পরিবার আওতাভুক্ত হতে পারেনি তাদের জন্য রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর জন্য চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে ৫৯ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। তাতে রাজ্যের অবশিষ্ট ৪.৭৫ লক্ষ পরিবার উপকৃত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার দীর্ঘ তেইশ বছর পর চিকিৎসকদের প্রমোশন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ত্রিপুররা হেলথ সার্ভিস রুলস-এর সংশোধন করে টিএইচএস-এর ক্যাডার স্ট্রেংথ ১৪৮০ থেকে বৃদ্ধি করে ২১৭০ করা হয়েছে এবং জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল ও স্পেশালিস্ট মেডিক্যাল অফিসার ক্যাডার তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের প্রতিটি জেলায় একটি করে পঞ্চাশ শয্যাবিশিষ্ট নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানও রাখা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব ডা. দেবাশিস বসু বলেন, ডেন্টাল সার্ভিসের উন্নয়ন ও প্রসারে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। জনগণকে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে জেলা ও মহকুমা স্তরের হাসপাতালগুলিতেও আধুনিক দন্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা চালু করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ভারপ্রাপ্ত মিশন অধিকর্তা ডা. নূপুর দেববর্মা এবং ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি ডা. সমীর রঞ্জন দত্ত চৌধুরী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদ্মশ্রী ডা. শাহদার মোহম্মদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা ডা. হরপ্রসাদ শর্মা, ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডা. সুপ্রিয় মল্লিক সহ অন্যরা।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.