সহিদ মিঞা ও জাতীয় লাইন!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের মুখে চড়িলামে সহিদ মিয়ার মৃত্যু এবং দেহ লইয়া পুলিশের বাড়াবাড়ির ঘটনায় মুখ লুকাইবার জায়গা খুঁজিতেছে ত্রিপুরা বিজেপি এবং বিজেপির সরকার। মুখ লুকাইতেছে তাহাদের দিল্লীর সর্বভারতীয় নেতৃত্বের সামনে। ত্রিপুরা ভোটের কৌশলে বিজেপি ২০২৩ বিধানসভার নির্বাচনে সিপাহিজলা বিপর্যে জেলায় আসন বাড়াইবার পরিকল্পনা লইয়াছিল।২০১৮ নির্বাচনে সিপাহিজলা জেলায় বিজেপির ফলাফল ছিল নিরাশাজনক। মুসলমান সংশ্লি অংশের মানুষের কাছ হইতে তাহারা প্রত্যাশা অনুযায়ী ভোট পায় নাই,যদিও রাজ্যে একজন সংখ্যালঘু অংশের প্রার্থীও রাখা হইয়াছিল এই জেলায়।

তেইশের ভোট এখনো ঘোষণা হয় নাই,কিন্তু সরকারী অনুষ্ঠানে সোনামুড়া মহকুমায় সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী তাহার ভাষণে সংখ্যালঘু অংশের মানুষের প্রতি আহ্বান রাখিয়া বলিয়াছিলেন,সিপিএমের প্রচারণা হইতে বাহির হইয়া এইবার আপনারা বিচার করুন, বিজেপির পাঁচ বৎসরের শাসনে আপনারা কি বিশেষ কোনও অসুবিধায় ছিলেন?মুখ্যমন্ত্রী ২০২৩ নির্বাচনে তাহাদের সমর্থন চাহিয়াছেন সেইদিন। সংখ্যালঘু মুসলমান ইস্যুতে বিজেপি তাহার সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাইয়াছে।২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে শাসকদল বিজেপি ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমান অংশের মানুষের ভোট পাইতে চাহিতেছে। কথা এমন নহে যে পূর্বের কোনও নির্বাচনে তাহারা মুসলমানের ভোট চাহে নাই।

কিন্তু এই দফায় মুসলিম সম্প্রদায়কে কাছে টানিবার স্থানীয় সংবরণকৌশল তাহারা লইয়াছে। দেশে মোট জনসংখ্যার ২০ কোটি হচ্ছে। বামি রহিয়াছে মুসলমান।ইহাদের মধ্যে ১৬ হইতে ১৭ কোটি রহিয়াছে স্থানীয় সুপা দরিদ্র ও পশ্চাৎপদ। ইহাদিগকে পসমন্দা মুসলমান বলিয়া জানা যায়। গত জুলাই মাসে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানাইয়াছিলেন, এই সকল পশ্চাৎপদ মুসলমানদিগের জন্য কাজ করিবে তাহার সরকার। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য মুসলমানেরা কতটা বিশ্বাস করিয়াছিল তাহা জানা না গেলেও খোদ বিজেপির নেতা কর্মীরাই প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অবাক হইয়াছিলেন।

কারণ মুসলমান বিরোধিতা দিয়া যে দলের উত্থান সেই দলের প্রধান যখন উহাদের কাছে টানিবার কথা বলেন তখন অবাক হইতেই হয়।কিন্তু দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর হইতে দেশের মূল ভূখণ্ডে বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, বিহারে বিজেপি পসমন্দাদের সহিত যোগাযোগ রক্ষার ধারাবাহিক কর্মসূচি হাতে লয়। এইবার জানিতে হয় পসমন্দা কী এবং পসমন্দা কাহারা।ফারসি শব্দ পসমন্দার অর্থ হইল পিছাইয়া পড়া। পসমন্দাদের সম্পর্কে জানিতে হইলে জানিতে হইবে হিন্দু বর্ণব্যবস্থা এই দেশে ইসলামকে প্রভাবিত করিতেছে কিনা। এই লইয়া নানান বিতর্ক রহিয়াছে এই দেশে। বিশ্বের প্রাচীনতম পেশাভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাস হইল হিন্দুদের বর্ণব্যবস্থা।

চতুর্বর্ণের বাহিরে অতিশূদ্র বা অস্পৃশ্যরা রহিয়াছে বিন্যাসের বাহিরে। গবেষকেরা বলিয়া থাকেন এই বর্ণব্যবস্থা এই দেশে ইসলামকে প্রভাবিত করিয়াছে। ইসলাম বলিয়া থাকে সকলেই সমান। তথাপিও সামাজিক রীতি রেওয়াজে ভেদাভেদ রহিয়াছে। মেলামেশা নাই, বিবাহের সম্পর্কও নাই নানান গোষ্ঠীর মধ্যে।এই বিভেদ বা বিভাজন এই দেশে তিনটি ভাগে বিভক্ত। সর্বাগ্রে রহিয়াছেন যাহারা তারা আশরাফ। মাঝে রহিয়াছে আজলাফ। আর সবার নিচে রহিয়াছে আরজাল। আজলাফ এবং আরজালকে একসঙ্গে পসমন্দা বা পিছাইয়া পড়া বলা হইয়া থাকে। এতদিন ধরিয়া মুসলমান সমাজে সকল সুযোগসুবিধা ১৫ শতাংশ আশরাফেরাই ভোগ করিয়া আসিয়াছে।

এই সমাজের নেতৃত্ব দিয়া আসিয়াছেন তাহারাই। মুসলমান সমাজের এই অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দ্বন্দ্ব সাম্প্রতিক সময়ে চিহ্নিত করিয়াছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পসমন্দা লইয়া যাহারা গবেষণা করিতেছেন তাহাদের বক্তব্য, বিজেপি মুসলমান সমাজের এই দ্বিধা দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক স্তরে কাজে লাগাইতে চাহিতেছে।অবশ্য মুসলমানদের পসমন্দা লইয়া প্রধানমন্ত্রী হইবার আগে হইতেই চর্চায় রাখিতেন নরেন্দ্র মোদি। জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হইবার এক বৎসর আগে রমজান মাসে উত্তরপ্রদেশের পসমন্দাদিগের কথা শুনিয়াছিলেন টানা ৪৫ মিনিট ধরিয়া তাহাদের অনুষ্ঠানে বসিয়া। রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করিতেছে, সম্প্রতি মহানবি লইয়া নূপুর শর্মা যে বক্তব্য রাখিয়াছিলেন তাহার কঠোর বিরোধিতা হইয়াছিল।

উপসাগরীয় দেশ,পশ্চিম এশিয়া দেশগুলিতে। নয়াদিল্লী মনে করে সেই সকল দেশগুলির সহিত দীর্ঘদিনের যোগাযোগ থাকিবার কারণে অভিজাত আশরাফেরা নূপুর শর্মা ইস্যুতে সেই সকল দেশসমূহকে প্রভাবিত করিয়াছিল।বিজেপি এখন মনে করিতেছে, অভিজাত আশরাফদিগের সামাজিক রাজনীতিক প্রভাব খাটো হওয়া দরকার। সেই সকল ভাবনা হইতেই ৮০/৮৫ শতাংশ গরিব পসমন্দা মুসলমানকে অভিজাত আশরাফদের কাছ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা করিবে বিজেপি। এখন প্রশ্ন আসিতেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের সম্পর্কে এই যখন বিজেপির সর্বভারতীয় অবস্থান,তখন চড়িলামের পসমন্দা মুসলমান শহিদ মিয়াকে লইয়া ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে কি ভিন্ন আলোচনা চলিতেছে?

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

মধুমেয় রোগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন!!

ডায়াবেটিস বা মধুমেহ আজকের সমাজে একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে পরিচিত।এই রোগটি ধীরে ধীরে বাড়ছে…

10 hours ago

রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষা ফেব্রুয়ারী মাসে করার উদ্যোগ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পরীক্ষাসূচি এগিয়ে আনা হবে।২০২৫ সালে রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক এবং…

11 hours ago

বিজেপি জমানায় রাজ্যে কৃষকদের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ : কৃষিমন্ত্রী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার পর রাজ্যের কৃষকদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সরকারের…

11 hours ago

দর্শনধারী!!

গুণ-বিচার পরে, আগে তো দর্শনধারী!এই আপ্তবাক্য আজকের ডিজিটাল জেট যুগে একেবারে সর্বাংশে সত্য। দর্শন অথে…

11 hours ago

বিলোনীয়ায় স্টপেজ দাবি উপেক্ষিত, ক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ডবলইঞ্জিনের সরকারের ক্ষমতা ঠুনকো।কোনও প্রতিশ্রুতি পালন বা পদক্ষেপ নিতে পারছে না।অন্তত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস…

1 day ago

দেবভূমিতে গভীর খাদে বাস,, মৃত্য ২০!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার উত্তরাখণ্ডের গারওয়াল থেকে কুমায়ুন এর দিকে গন্তব্য ছিল বাসটির। বাসে তখন কমপক্ষে…

1 day ago