সাইবার প্রতারণার শিকার বিলোনীয়া এসবিআই এর দুই গ্রাহক!!
দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি।। আপনি লটারিতে ১০ লক্ষ টাকা পেয়েছেন। এ টাকা আপনার একাউন্টে দেওয়ার জন্য কিছু প্রসেস করতে হবে আপনাকে। ট্যাক্স সহ বিভিন্ন প্রসেসিং প্রক্রিয়া বাবদ আড়াই হাজার টাকা এই নাম্বারে (একটি নম্বর পাঠানো হয়) আপনাকে জমা দিতে হবে। আড়াই হাজার টাকা জমা দেওয়ার পর আবার দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও পাঁচ হাজার টাকা জমা দেওয়ার গাইডলাইন দেওয়া হয়। এভাবে ধাপে ধাপে শেষ পর্যন্ত এক পরিচারিকার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয় সাইবার প্রতারক। ১০ লক্ষ টাকা পাওয়ার লোভে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার মহিলা প্রতারকদের কথা অনুসারে ধাপে ধাপে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে প্রতারকদের দেওয়া নাম্বার একাউন্টে জমা দিয়ে দেয়। এই প্রতারণার ক্ষেত্রে অবশ্য কোন ওটিপি চাওয়া হয়নি। ব্যাংকের একাউন্ট হোল্ডার সাধারন এক মহিলাকে কথার জালে এমনভাবে ফাসিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ১০ লক্ষ টাকা লটারির পাওয়ার লোভে তিনি তা করতে বাধ্য হন। প্রতারণার শিকার হয়ে ভয়ে যে বাড়িতে কাজ করেন, সেখানেও বলতে পারেন নি। এমনকি অন্যদেরও বলেন নি।
অন্যদিকে, বিলোনিয়া এস বি আই এর গ্রাহক অজিত দত্তের একাউন্ট থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা নিয়ে নেয় সাইবার প্রতারকরা। ঘটনা সরস্বতী পূজার আগের দিন থেকে শুরু হয়। টানা সাত দিনে তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার, ৫ হাজার, ৪০ হাজার এবং সর্বাধিক ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা মিলে মোট ২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। মোবাইলে কোনরকম মেসেজ নেই। ঘটনা ধরা পড়ে তিন দিন আগে। অজিত দত্তের মোবাইলে মেসেজ আসে এসবিআই এর ক্রেডিট কার্ড একাউন্ট থেকে লোনের যে দুই লাখ ৫৬ হাজার টাকা তোলা হয়েছে তার মাসিক কিস্তি দেওয়ার জন্য। এই মেসেজ দেখে তিনি রীতিমত বিস্মিত হয়ে পড়েন। বিলোনিয়া এসবিআই শাখায় গিয়ে যোগাযোগ করেন। তখন পুরো ঘটনা জানতে পারেন। সাথে সাথে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার সন্ধ্যায় বিলোনিয়া থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা জানিয়ে জিডি এন্ট্রি করেন। এসবিআই বিলোনিয়া শাখার গ্রাহক অজিত দত্ত তিনি চার বছর আগে সিআরপিএফ থেকে ভলেন্টিয়ারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে বাড়িতে আসেন। বিলোনিয়া আর্যকলোনি স্বস্তি পাড়ায় তার নিজ বাড়ি। শনিবার বিষয়টি নিয়ে অজিত দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরস্বতী পুজোর আগের দিন তার কাছে ফোন আসে। যিনি ফোন করেছেন তিনি এসবিআই এর স্টাফ হিসেবে পরিচয় দেন। ফোনে জানানো হয় অজিত দত্তের সর্বাধিক ৫ লক্ষ টাকা ধার নেওয়ার যে ক্রেডিট কার্ড রয়েছে সেটি এখনো পর্যন্ত একটিভ রয়েছে। তিনি কোন টাকা তোলেননি। তাই সেটি ক্লোজ করে দেয়া হবে। আর নতুবা একটা বাড়তি টাকা দিতে হবে আপনাকে। ক্লোজ করার জন্য একটা নতুন লিংক দেওয়া হয়েছে। এই লিংক থেকে অ্যাপ ইন্সটল করে একটি পাসওয়ার্ড যাবে সেটি জানাতে হবে। সে অনুসারে লিংক দেয়া হয় এবং পাসওয়ার্ড জানিয়ে দেন অজিত দত্ত। এরপরে ধাপে ধাপে টাকা যে তোলে নেয়া হচ্ছে তার কোন মেসেজ ফোনে আসছিল না। তিনি জানতে পারেননি। জানালেন আপনার এসবিআই এর ক্রেডিট কার্ড একাউন্ট ক্লোজ করা হয়েছে। আপনাকে বাড়তী কোন ফিস দিতে হবে না। দুইদিন পরে আবার ফোন করে জানানো হয় উনার আধার কার্ড ও প্যান কার্ড কপি ফটো তুলে অ্যাপের মাধ্যমে দেওয়ার জন্য। তখন অজিত দত্তের স্ত্রীর বিষয়টা সন্দেহ হওয়ায় ফোন কেটে দেন। তিন দিন আগে অজিত দত্ত পুরো ঘটনা জানতে পারেন। তিনি এসবিআই বিলোনিয়া শাখা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চান ৬ মাস আগে ওনার ফোনে মেসেজ এসেছিল উনার এসবিআই ক্রেডিট কার্ড ক্লোজ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কিভাবে ওনার এই লোন একাউন্ট থেকে সাইবার হ্যাকাররা ২ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এস বি আই বিলোনিয়া শাখা কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট চেক করে জানতে পেরেছে, অজিত দত্তের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা অন্য ব্যাংকের একাউন্টে জমা হয়েছে। বিলোনিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অজিত দত্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তার মতন যেন অন্য কোন গ্রাহক এভাবে সাইবার হ্যাকার বা প্রতারক দ্বারা প্রতারণার শিকার না হন তার জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তিনি এও জানান, একজন সচেতন নাগরিক হয়ে কিভাবে যে হঠাৎ করে এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তা তিনি নিজেই কল্পনা করতে পারছেন না।