সাইবার সংকট।।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই সাইবার অপরাধ গোটা দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে।সাইবার অপরাধ হলো এমন এক অপরাধ
যেখানে কম্পিউটার কিংবা কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে অপরাধ সংঘটিত করা হচ্ছে।সাইবার অপরাধ অনেক ধরনের হলেও সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক অপরাধ ও জালিয়াতির ঘটনাগুলোই
ইদানীং সবচেয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।যদিও সাইবার
সন্ত্রাস,সাইবার যুদ্ধ,সাইবার চাঁদাবাজি- এই ধরনের অপরাধগুলোর মাত্রাও ব্যাপক।কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার অপরাধ
নথিভুক্তির পোর্টাল (এনসিআরপি)-এর তথ্য বলছে,গত কয়েক বছরে
সাইবার অপরাধের প্রবণতা উদ্বেগজনক ভাবে বেড়ে গেছে।যেমন এই বছরই ২০২৪ সালে প্রথম চার মাসে অর্থাৎ জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৭ লক্ষ ৪০ হাজার সাইবার অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছে।গত বছর ২০২৩ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৫ লাখের মতো।এর আগের বছর ২০২২ সালে দেশে সাইবার ক্রাইমের অভিযোগ জমা পড়েছে সাড়ে নয় লাখ। আর ২০২১ সালে এই অভিযোগের সংখ্যাটা ছিল সাড়ে চার লক্ষ।অর্থাৎ দিন-দিন অপরাধের এই সংখ্যাটা যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সেটা বড় গুরুতর বিষয়।
এতদিন আমরা সাধারণত সাইবার অপরাধ বলতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দেওয়া, অনলাইনে কেনাকাটার সময় প্রতারণার মতো ঘটনাগুলোর সাথেই পরিচিত ছিলাম।এবার এর সঙ্গে নতুন প্রতারণার ফাঁদ যুক্ত হয়েছে ডিজিটাল গ্রেপ্তার।মূলত সিবিআই,ইডি কিংবা অন্য কোন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নাম ভাঁড়িয়ে করে ভয় দেখিয়ে এরা এই প্রতারণার ফাঁদ ফেলে লোককে সর্বস্বান্ত করছে।আসলে পুরোটাই
জালিয়াতি।সাইবার প্রতারণার ফাঁদ।প্রতারকরা ফোন কলে কিংবা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করে নিজেদের পুলিশের
আধিকারিক পরিচয় দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করছে। দেশজুড়ে একের পর এক এই সাইবার অপরাধের ঘটনার ব্যাপ্তি এবং এই অপরাধের ধরন পাল্টিয়ে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকার
প্রতারণা।এই ঘটনা কেন্দ্রীয় সরকারের কপালেও চিন্তার ভাঁজ।ফেলেছে।কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান বলছে,চলতি বছর জানুয়ারী থেকে এপ্রিল-চার মাসে ‘ডিজিটাল গ্রেপ্তার’ দেখিয়ে ১২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। লগ্নির টোপ দেখিয়ে ২২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে। বন্ধুত্বের অ্যাপ থেকে প্রতারণা করা হয়েছে ১৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা।আর ট্রেডিংয়ের টোপে এই বছর চার মাসে প্রতারণা হয়েছে ১৪২০ কোটি
টাকার।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও তার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশবাসীকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছেন।সাবধান করে দিয়েছেন ডিজিটাল গ্রেপ্তারি বলে কিছু হয় না। আইনে এই ধরনের কিছুর উল্লেখ নেই শুধুই প্রতারকরা মিথ্যা ভয় দেখিয়ে লোককে বিভ্রান্ত করে।
আসল কথা, সাইবার অপরাধ থেকে নিরাপদ থাকতে সাধারণ মানুষ যত বেশি সতর্ক হচ্ছেন সাইবার অপরাধীরাও ততই বেশি করে তাদের অপরাধের কৌশল পাল্টাচ্ছে।আগে যেখানে হ্যাকিং,অনলাইন প্রতারণা ছিল, সেগুলি এখনও আছো।এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ফাঁদ ও প্রতারণা।ডিজিটাল গ্রেপ্তার হচ্ছে সেরকমই একটি ভয় দেখানো প্রতারণা, যেখানে শিক্ষিত মানুষেরাও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এর থেকে সুরক্ষার জন্য বাস্তব জগতের মতো অনলাইন পরিসরেও এখন নিরাপদ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিজিটাল জগতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।সন্দেহজনক ই- মেইল এবং লিঙ্ক থেকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ঢোকা যাবে না। ওয়েবসাইট খোলার আগে ওয়েব ঠিকানা কিংবা ইউআরএল যাচাই করতে হবে।অবিশ্বস্ত উৎস থেকে সফটওয়ার নামানো যাবে না।কিন্তু প্রশ্ন হল,এতসবের পরেও নিরাপত্তার অনেক চাবিকাঠি নিজের হাতেই রয়েছে।কিন্তু জালিয়াতি চক্রের পান্ডাদের কাছে অল্পেতেই ফেঁসে যাওয়া এবং তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনার মতো ঘটনা রুখতে সবার আগে নিজেকে সাহসী এবং ধীরে সুস্থে মাথা ঠাণ্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। অযথা ভয় না পেয়ে তাদের ভিডিও কলের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু সাইবার প্রতারণার ফাঁদ যেদিকে এগোচ্ছে তাতে এ আই আগামীদিনে সংকটকে আরও কোল্পথে নিয়ে যায় সেটাই উদ্বেগের।