সাফল্যও ব্যর্থতা!!

২০১৮ থেকে ২০২৫, বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সপ্তম বর্ষ পূর্তি হয়েছে। ৯ মার্চ বর্তমান জোট সরকার অষ্টম বর্ষে পথচলা শুরু করেছে।গোটা দেশে ত্রিপুরাই একমাত্র এবং প্রথম রাজ্য, যেখানে দীর্ঘ বাম শাসনের অর্থাৎ একটি কমিউনিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার।২০১৮ সালে ত্রিপুরায় পদ্মশিবিরের এই জয় গোটা দেশেই বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা মাইলেজ বা অক্সিজেন জুগিয়েছে।এটা অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই। কেননা, বিজেপি একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক দল, এই যে একটি প্রচার, যেটি গোটা দেশে বামপন্থীরাই সব থেকে বেশি করেছে। এখনো করে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজেপি সম্পর্কে এমনই একটি মিথ তৈরি করার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে গেছে বামপন্থীরা। সেই প্রয়াস এখনো অব্যাহত আছে। তবে সেই প্রচারের ধার এখন অনেকটাই ভোঁতা হয়ে গেছে। বিজেপির গায়ে সাম্প্রদায়িক দলের তকমা এঁটে দেওয়া বামপন্থী সরকারই যখন ত্রিপুরায় ধরাশায়ী হয়ে গেছে, তখন গোটা দেশে বিজেপি যে বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে, সে তো বলাই বাহুল্য। রাজ্যবাসীর স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল, ২০১৮ সালের ৯ মার্চ রাজধানীর আসাম রাইফেলস ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে প্রথম বিজেপি সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।বিজেপি নেতৃত্বাধীন কোনও একটি প্রান্তিক রাজ্যে এমন আড়ম্বরপূর্ণ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান এর আগে অন্য কোনও রাজ্যে হয়েছিল কিনা জানা
নেই।
সেই থেকে ত্রিপুরায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম পথ চলা শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ,দিশা যেমন পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি রাজ্যবাসী দেখেছে এই সময়ের মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক উত্থান-পতন। রাজ্যে চিরশত্রু সিপিএম-কংগ্রেসের মধ্যে প্রকাশ্যে মিতালি এবং জোট হওয়ার ঐতিহাসিক ঘটনাও দেখেছে।এর মধ্যে ‘করোনা’ নামক বিভীষিকা টানা দু’বছর সবকিছু স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সেই বিভীষিকা আর নতুন করে মনে করতে বা মনে করাতে চাই না। কিন্তু ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না।মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়।
সে যাই হোক,প্রথম বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পাঁচ বছর, এরপর দ্বিতীয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের দুই বছর।সব মিলিয়ে সাত বছর।যদিও মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহার নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিজেপি জোট সরকারের দ্বিতীয় বর্ষ উদ্যাপন করা হয়েছে।
তারই অঙ্গ হিসাবে ৯ মার্চ রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশাল জনসমাবেশ। সভায় ভাষণ রেখেছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা।যদিও রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সাত বছর পূর্তি? নাকি দুই বছর পূর্তি? এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমনকি দলের অন্দরেও এ নিয়ে বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। যদিও এই বিভ্রান্তি নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। থাকার কথাও নয়। এটা সম্পূর্ণ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ফলে বিভ্রান্তি দূর করার দায়ও দলের এবং দলীয় নেতৃত্বের।
তবে আমরা বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চাই।আমাদের কাছে প্রথম পাঁচ, এরপর দুই, এই ভাবে দেখতে চাই না। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বর্ষপূর্তি উদ্যাপনকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে এবং সরকারীস্তরে যেসব কাজের খতিয়ান সম্বলিত পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে কিন্তু সাত বছরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে। ফলে আমরাও সাত বছরের উন্নয়নের খতিয়ান হিসাবেই দেখতে চাই, এবং রাজ্যবাসীকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাই। হ্যাঁ, বলতে কোনও দ্বিধা বা সংকোচ নেই। গত সাত বছরে রাজ্যের যে সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে, তা এককথায় নজিরবিহীন। এটা বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য। কিন্তু গত সাত বছরে যে ব্যর্থতাগুলি রয়েছে, যে প্রতিশ্রুতিগুলি আজও পূরণ করা হয়নি, সেগুলির কী হবে? সাফল্য যেমন আছে, তেমনি ব্যর্থতার পাহাড়টাও গত সাত বছরে কম বড় হয়নি। রাজ্যে নিগো মাফিয়া, জমি দালালি, মাফিয়ারাজ, নেশার রমরমা, দুর্নীতি কিন্তু কমেনি। বরং আরও বেড়েছে। সুশাসন শুধু মুখে বললে হবে না। সুশাসনের সুফল যদি সাধারণ মানুষ অনুভব করতে না পারে, তাহলে কীসের সুশাসন? সাফল্যের সাথে ব্যর্থতাও থাকবে। এটাই সমাজের নিয়ম। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ সাফল্যের পথ খোঁজে। কিন্তু ব্যর্থতা যদি নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তখন সাফল্য মুখ লুকিয়ে নেয়। সেটা রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই হোক, কিংবা রাজ্যের ক্ষেত্রে, সকল শাসকের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। এটা ভুলে গেলে চলবে না।