সাফল্যের প্রথম ধাপ।

 সাফল্যের প্রথম ধাপ।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ভারত কি পারবে এবার গোটা বিশ্বের নজর কাড়তে? চন্দ্রযান ৩-এর সফলভাবে উৎক্ষেপণের প্রথম ধাপ মাত্র। চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য পাড়ি দিতে হবে আরও পথ। আরও ৪০ দিনের অপেক্ষা। সাফল্য যদি শেষপর্যন্ত ধরা দেয় তাহলে চিন, রাশিয়া, আমেরিকার পাশে জ্বলজ্বল করে নাম লেখা হবে ভারতেরও। ভারতের সাফল্যের টুপিতে সংযোজিত হবে নয়া পালক। আপাতত আপামর দেশবাসী, বিজ্ঞানীরা এর প্রতীক্ষায় রয়েছেন।১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটায় তখন টানটান উত্তেজনা। সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করল ভারতের সাধের চন্দ্রযান-৩। এর আগে দু-দুবার ভারতের চন্দ্রযান-মিশন সফল হতে পারেনি। চাঁদ সম্পর্কে নানা আগ্রহ রয়েছে বিজ্ঞানীদের। সেই থেকেই পরিকল্পনা চাঁদে যান পাঠানোর। এর আগে প্রথম নভশ্চারী হিসাবে চাঁদে পা রেখেছিলেন আমেরিকার নভশ্চর নীল আর্মস্ট্রং। সে ১৯৬৯ সালের কথা।তিনিই প্রথম মানব যিনি চাঁদে পা রেখেছিলেন।এরপর থেকে নানা দেশ চাঁদে কৃত্রিম যান পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়। সেই থেকে শুরু হয় মিশন মুন। ভারতও চাঁদের দেশে যান পাঠিয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করতে চায়। এ জন্যই প্রথম ভারত চন্দ্রায়ন-১ মিশন সম্পন্ন করে ২০০৮ সালে। সে বছর ২২ অক্টোবর চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিল চন্দ্রযান। কিন্তু চন্দ্রযান-১ সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি। প্রায় ৩৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল এই মিশনে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ মিশনে নামে ভারত। সে প্রজেক্টের খরচ ছিল প্রায় ৯৭৮ কোটি টাকা। চন্দ্রযান-২ সফলভাবে উৎক্ষেপিত হলেও অবতরণে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই চন্দ্রযান পাড়ি জমিয়েছিল চাঁদের দেশের উদ্দেশে। জিএসএলভি মার্ক থ্রি ওরফে বাহুবলী রকেটে চাপিয়ে চন্দ্রযান-২- এর উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছিল। এর তিনটি অংশ ছিল অরবিটার, ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান।কিন্তু একেবারে শেষমুহূর্তে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার তিন মিনিট আগে বিক্রমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল ইসরোর। গতি নিয়ন্ত্রণ না করার ফলেই এমনটা হয়েছিল বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। অপমৃত্যু হয়েছিল এক স্বপ্নের। এত কাছে গিয়েও মিশন সফল না হওয়ায় বিজ্ঞানীদের মধ্যে গভীর হতাশা নেমে আসে। এরপর প্রায় এক বছর ধরে গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয় কী করে অবতরণের সময় এতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল ইত্যাদি নিয়ে। সেই থেকে বিজ্ঞানীরা ছিলেন সতর্ক। এবার তাই চন্দ্রযান-৩ মিশন নিয়ে আগেভাগেই বেশি মাত্রায় উদ্বিগ্ন এবং সতর্ক ইসরো।সেজন্য এই অভিযান করতে অনেকটা সময়ও নেন বিজ্ঞানীরা।আপাতত ১৪ জুলাই সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়েছে চন্দ্রযান-৩- এর। এবার সকলেই চাইছেন সঠিকভাবে অবতরণের। ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদের বুকে পা রাখতে ৪০ দিনের মতো সময় লাগবে। সেই নিরিখে ধারণা করা হচ্ছে চন্দ্রযান-৩ আগামী ২৩-২৫ আগষ্টের মধ্যে চাঁদে অবতরণ করবে। একটি সৌরচালিত ল্যান্ডার রয়েছে এতে। এর থেকে রোভার বেরিয়ে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার কথা। তবে যে গন্তব্যে চন্দ্রযান-৩-এর যাবার কথা এরজন্য পৃথিবী, জিএসএলভি মার্ক-৩ এবং চাঁদের কক্ষপথকে একই তলে আসতে হবে। তাহলেই সন্ধান মিলতে পারে মাহেন্দ্রক্ষণের। সেই অনুযায়ীই সময়সূচি ঠিক করে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। মহাকাশ অভিযান ভারতের মতো দেশের জন্য সত্যি অর্থে একটি গর্বের জায়গা।১৯৮৪ সালে রুশ মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন এক ভারতীয় নভশ্চর। নাম তার রাকেশ শর্মা।আগামী কয়বছরে ভারত নাসার সাথে যৌথভাবে মঙ্গল, শুক্র, চন্দ্রাভিযানে নামতে চলেছে। আপাতত, ভারতবাসীমাত্রেই প্রতীক্ষা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান-৩ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম সফলভাবে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে যেন এবং তারপর রোভার প্রজ্ঞানকে সঠিকভাবে অবতরণ করাতে পারে। তাহলেই ইতিহাসে জায়গা করে নেবে ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন, রাশিয়ার পর চতুর্থ দেশ হিসাবে মুন-মিশনে নাম লেখাবে ভারতও। ১৪২ কোটির প্রতীক্ষা এবার বিফলে যাবে না বোধ করি।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.