সাবধানে পা!!

 সাবধানে পা!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এশিয়ার বিভিন্ন বাজারের উত্থান ও বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি টানা পুঁজি ঢালার হাত ধরে ৮৫ হাজারের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেশের শেয়ার বাজার সেনসেক্স।নিফটিও নজির গড়ে প্রায় ২৬ হাজারের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে।গত কয়েক দিনে টানা সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিএসই-র লগ্নিকারীদের ঝুলিতে এসেছে ৮.৩ লক্ষ কোটি টাকা।অতএব, বলতে কোনও দ্বিধা নেই যে, ভারতীয় শেয়ার বাজারে এখন স্বপ্নের দৌড়।২৯ আগষ্ট সেনসেক্স প্রথমবার ৮২ হাজারের ঘরে থেমেছিল। সেখান থেকে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সূচক ৮৫ হাজারের দ্বারপ্রান্তে। সেনসেক্স ও নিফটি দুইই এখন রেকর্ড উচ্চতায়।
দুই সূচকের এমন স্বপ্নিল উত্থানের অন্যতম কারণ ততখানি দেশের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি নয়, বরং যতখানি ২০২০ সালের পরে আমেরিকায় প্রথমবার সুদ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা।একই সঙ্গে সেদেশের সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা কমেছে।এই দুই কারণে তেতে উঠেছে বিশ্ব বাজার।যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভারতেও।এদেশে দরাজ হাতে পুঁজি ঢেলে চলেছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি।আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে অধুনা মধ্যবিত্তের ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ শেয়ার- ভিত্তিক বিভিন্ন ফান্ডের ‘ন্যাভ’।সব মিলিয়ে পুজোর মরশুমে খুশি লগ্নিকারীরা। বাজার বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ মনে করছেন,বিবিধ কারণে এই সুপবন আপাতত বহাল থাকবে।যেমন এক, পরপর দুই মাস দেশের খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশের নিচে আছে। আগষ্টে কমেছে পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হারও। দুই, বর্ষা ভালো হয়েছে।এই সূত্রে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামাবে এমন আশা করাই যায়।তিন,আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক সুদ কমানোর পরে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কোন্ পথে হাঁটে সেদিকেই চোখ শিল্প ও বাণিজ্য মহলের।শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির পরবর্তী বৈঠক ৭-৯ অক্টোবর।সংশ্লিষ্ট মহলের ক্ষীণ আশা,এবার সামান্য হলেও সুদ কমানো হতে পারে।তা যদি হয়,তবে বাজারকে সংশোধনের কবলে পড়তে হবে না। অনুমান করা হচ্ছে,চলতি বছরে আমেরিকা আরও এক দফা সুদ কমাতে পারে। পাশাপাশি দুর্গাপুজো শেষ হতেই সংস্থাগুলির জুলাই-সেপ্টেম্বরের আর্থিক ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে বাজারের আবহাওয়া এখন নিঃসন্দেহে সদর্থক।তবে কি ধরে নেব, আমাদের অর্থনীতিতেও স্বপ্নের দৌড় চলছে?না, সর্বাংশে তা নয়।উজ্জ্বল আলোকের গোলকধাঁধায় যেমন পথ হারানোর ঝুঁকি থাকে,এ ক্ষেত্রেও অনেকটাই তাই।অতএব উর্ধ্বমুখী বাজারে পা ফেলতে হবে সাবধানে।এই জন্যই সতর্কতা,কারণ মাথাপিছু আয়ের নিরিখে বিশ্বের ১৯৭টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ১৩৬তম। আমাদের মাথাপিছু আয় এখন ২৪৮৫ আমেরিকান ডলার।আমেরিকার বাজারে এক ডলারে যে পণ্যসামগ্রী পাওয়া যায়,ভারতে তা কিনতে খরচ মোটামুটি ২০ টাকা বা ০.২৪ ডলার।তবু এ কথা আজ অনস্বীকার্য যে, দেশে সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্যের হার অনেকখানি কমে এসেছে।বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্যানুযায়ী, ভারতে এখন ১৬ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সরকারের দাবি আরও কম, প্রায় ১৪ শতাংশ।সমালোচকেরা বলেন,২০ শতাংশের কাছাকাছি। বর্তমান সরকারের শাসনকালে দারিদ্র বিশেষভাবে কমে এসেছে, দাবি করে কেন্দ্র।সেটা অবশ্য বলা শক্ত।বিবিধ তথ্য বলছে, সংস্কার-পরবর্তী ভারতে মোটামুটিভাবে ২০০০ সালের পর থেকে বার্ষিক যে হারে দারিদ্রের পরিমাণ কমে আসছিল, ২০১৪ সালের পর সেই কমে আসার হার তেমনভাবে পরিবর্তিত হয়নি। বরং খানিকটা শ্লথ হয়েছে।১৯৯০ সাল থেকে ২০১৩ সাল, ভারতে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিলো ১৪ শতাংশের মতো।২০১৪ থেকে ২০২৩ সালে সেই বৃদ্ধির হার ১১ শতাংশের মতো।আজ দেশের অর্থনীতি মজবুত ঠিকই, তবে সেখানে লাভার্থীর সংখ্যা খুব বেশি নয়।যে দেশে মাত্র দশ শতাংশ মানুষ নিয়মিত বেতনের চাকরিতে নিযুক্ত, অধিকাংশের কোনও সামাজিক সুরক্ষা নেই, সংগঠিত ক্ষেত্রে নিয়োগ বৃদ্ধির ভরসা নেই, সেখানে দরিদ্রদের প্রবল আর্থিক অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত স্বাভাবিক ঘটনা।সেনসেক্স ৮৫ হাজারের ঘরে পদার্পণ করলেও কে কখন ‘চরম দরিদ্র’ গোত্রে পড়ে যাবেন, কারও জানা নেই। ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য,গত দুই দশকে দেশের ধারাবাহিক আর্থিক বৃদ্ধি হলেও তদনুযায়ী দারিদ্র কমেনি। অতএব,এখন বৈষম্যের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া প্রয়োজন।সরকারী এবং বেসরকারী,দুই ক্ষেত্রেই বিনিয়োগের বৃদ্ধি প্রয়োজন। বহির্বিশ্বের প্রযুক্তি এমনিতেই শ্রমশক্তিকে ক্রমে ব্রাত্য করে তুলছে।অনেক লোকের তেমন কাজ না থাকলে শুধু শেয়ার বাজারের স্বপ্নের দৌড়ে আর কত মানুষের মুখে হাসি ফুটবে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.