সাভারকরে উত্তপ্ত রাজনীতি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মতাদর্শগত গুরু’ বলে পরিচিত বিনায়ক দামোদর সাভারকর। তাকে নিয়ে ফের তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে। দীর্ঘদিন চুপচাপ থাকার পর, আচমকা সাভারকারকে টেনে এনে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। সাভারকারকে নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা পৌঁছেছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলনে বীর স্বাধীনতা সংগ্রামী বিরসা মুণ্ডাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ভগবান বিরসা মুণ্ডা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিরসা মুণ্ডা আমাদের আদর্শ। তিনিই আমাদের দলের কাছে রোল মডেল।
স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান অনস্বীকার্য। এই প্রসঙ্গেই রাহুল আরও বলেন, দামোদর সাভারকারের মতো ছয়বার জেল থেকে মুক্তির আবেদন জানিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার পত্র লেখেননি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলরা বহুবার জেলে গিয়েছেন। কিন্তু ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমা চাননি। কখনও চিঠির নীচে ব্রিটিশদের উদ্দেশ্য করে বলেননি যে, আপনাদের অনুগত ও বিশ্বস্ত। সাভারকারের চিঠির উল্লেখ করেই রাহুল গান্ধী বিজেপিকে কটাক্ষ ও আক্রমণ করেন। রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্য ঘিরেই এখন দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিজেপি ও কংগ্রেস একে অপরকে নিশানা করে একের পর এক বাক্যবাণ চালিয়ে যাচ্ছে।
এতে ফের একবার জাতীয় রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ ও বিরোধিতা ক্ষমতাকে তার করে ইতিমধ্যে সাভারকারের এক নাতি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানিকর মামলা দায়ের করেছেন। তাদের পরিবারকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে, এই অভিযোগ করে মামলায় বলা হয়েছে সাভারকর একজন দেশপ্রেমিক এবং স্বাধীনতা যোদ্ধা। রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই কংগ্রেস এই ঘটনাবে সাভারকরকে নিয়ে অসত্য বলছে। মহারাষ্ট্রে বসে রাহুল গান্ধী সাভারকরকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করলেও, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, রাহুলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন।
তার বক্তব্য, আমরা সাভারকরকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। রাহুলের বক্তব্যের পর চুপ করে বসে থাকেনি বিজেপিও। এদিন রাতেই টুইট করে রাহুলের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। তিনি টুইট করে বলেন, ১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মতিলাল নেহরু ক্ষমা চেয়ে পুত্র জওহরলালকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র বলেছেন, রাহুল গান্ধীর অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি মহারাষ্ট্রে এসে মহারাষ্ট্রকেই অপমান করেছেন। তিনি বীর সাভারকরকে অসম্মান করে কংগ্রেসের প্রকৃত চেহারা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সাভারকরকে নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ঘিরে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার মধ্যেও তুমুল বিরোধ শুরু হয়েছে। এই ইস্যুতে শিবসেনাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলতে চাইছে বিজেপি এবং শিবসেনার বিদ্রোহী গোষ্ঠী। বিজেপি ও বিদ্রোহীদের প্রশ্ন, এই কংগ্রেসের সাথে কীভাবে জোট করেছিলো উদ্ধব ঠাকরে?পাল্টা জবাব দিয়েছেন উদ্ধবও। ঠাকরে বলেছেন, বিজেপি আগে জবাব দিক যে, তারা যাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়েছে, সেই পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির সাথে কীভাবে কাশ্মীরে সরকার গঠন করেছিলো?
জোট সরকার গঠনের পিছনে কী চুক্তি হয়েছিলো? সব মিলিয়ে সাভারকর ইস্যুতে ফের একবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতি। রাজনৈতিক মহলের মতে, অঙ্ক কষেই মহারাষ্ট্রে পা রেখে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সাভারকরকে টেনে এনেছেন। নাগপুরেই রয়েছে আরএসএসের সদর কার্যালয়। আরএসএসের গর্ভগৃহে গিয়ে তাদেরই তাত্ত্বিক নেতাকে নিশানা করেছেন হিসাব করেই। এই বিতর্কের জল কতটুকু গড়ায় এখন সেটাই দেখার।